নাম প্যাঁচালি

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

সমঝদার ব্যক্তিরা বলে থাকেন, ‘ওহে বৃক্ষ! বাবা তোমার নামখানা কী?’ বৃক্ষ নাকি উত্তর দিয়ে থাকে (যদিও আমি নিজ কানে শুনিনি), ‘নামে কিবা এসে যায় বাছা। ফলে পরিচয়।’ তবু মানুষ নাম রাখে। রাখতে হয়। দুনিয়ার তাবড় তাবড় সভ্যতার মতো বাঙালিরও নামকরণের মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি আছে। শুধু ক্রিয়েটিভিটি বললে ভুল হবে, বলা যায়, নামের বাহার রয়েছে। ফলের সমাহারকে যদি বলে ফলাহার, তাহলে নামের বাহার হবে নামাহার। সত্যিই বলছি, নামের বাহারকে নামাহার বলাই শ্রেয়। কারণ, নামাহারের ভূরি ভূরি উদাহরণ খুঁজে পাবেন করপোরেট অফিসগুলোতে। দেখেন না? সেখানকার কর্মকর্তারা কী সুন্দর করে গলায় হারের মতো করে নেমপ্লেট, তথা আইডি ঝুলিয়ে রাখেন! শুধু ব্যাপার এই যে হারখানা প্লাস্টিকের তৈরি হয়, মুক্তার নয়। মুক্তার হার হলে কী যে হতো! সেখান থেকে মুক্তিই পাওয়া যেত কি না, সন্দেহ। দেখেছেন! কথা বলতে বলতে অনেক কথা বলে ফেললাম। নামকরণের ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে দুটি কথা বলি।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

বাঙালির নামকরণের দিকে চোখ ফেরানোর আগে আমার কর্মভূমি ও বাসভূমি অস্ট্রেলিয়ার দিকে মুখ ঘোরানো প্রয়োজন। তখন আমি এই দেশে নতুন এসেছি। লাল-নীল বাতি দেখে আমার মাথা কখনো ক্লক ওয়াইজ আবার এন্টি ক্লক ওয়াইজ ঘুরছে। সেই ঘুরন্ত সময়ে আমি একটি চাকরি খুঁজে পেলাম। ইন্টারভিউ বোর্ডে এক ভদ্রলোক আমার পরীক্ষা নিয়ে চাকরি অফার করলেন। পরে জানতে পারলাম, তিনিই নাকি হবেন বস। নাম করিম ক্যান্ডাটান। নাম শুনে আমি খুশি। কারণ, এই অমুসলিম দেশে আমি একজন মুসলিম বস পেলাম। এটা কি কম ভাগ্যের ব্যাপার! অফিসের প্রথম দিনে আমার সঙ্গে দেখা হতেই তিনি বলে উঠলেন, ‘গুডা মাইট’। এখন এই গুডা মাইট বিষয়টি আমি বুঝি। এর মানে ‘গুড ডে মেইট’; অর্থাৎ শুভদিন বন্ধু। কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি। আমার কান তখন অস্ট্রেলিয়ার ইংলিশের সঙ্গে পরিচিত হয়নি। যেহেতু বসের নাম করিম, তাই আমার মনে হলো বস বোধ হয় কোনো ইসলামিক সম্বোধন করলেন। আমি এর প্রত্যুত্তরে বলে বসলাম, ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’ ভদ্রলোক এই উত্তর শুনে বহু কষ্টে হাসি দমিয়ে রেখে আমার আগাপাছতলা জরিপ করতে লাগলেন। তারপর লাঞ্চের সময় আলাপ-পরিচয়পর্বে তিনি বললেন, তিনি একজন ইহুদি বংশোদ্ভূত। আমি এই কথা শুনে হাসব নাকি কাঁদব, বুঝতে পারলাম না। আমি কী করে বুঝব যে করিম নামখানা অন্য ধর্মের লোকও ব্যবহার করে থাকেন। শুধু এখানেই শেষ নয়। একদিন আমি রমজান মাসে এক দোকানে চুল কাটাতে গিয়েছি। নরসুন্দর ভদ্রলোকের বিশাল বড় দাড়ি। বুকে নেমপ্লেটে নাম লেখা বিল্লাল। এ কথায়-সে কথায় ভদ্রলোক বললেন, তাঁর বাড়ি ইরাকে। আমি আমার বাড়ি বাংলাদেশে বলে জিজ্ঞেস করলাম যে তিনি রোজা আছেন কি না! উত্তর দিলেন, ‘না। আমরা খ্রিষ্টান।’ বুঝুন অবস্থা! নাম ও দাড়ি দেখে মুসলিম ভাবার কোনো কারণই নেই।

এর বেশ কয়েক বছর পর আমি আরেকজন বসের অধীনে কাজ করতে লাগলাম। তাঁর নামখানা শুনলেই আমার হাসি পেত। কোনো বাবা-মা যে তাঁদের সন্তানের নাম এ রকম রাখতে পারেন, তা ওই ভদ্রলোকের নাম না শুনলে জানতেই পারতাম না। তাঁর নাম ছিল মাইকেল টিকেল (Michael Tickle)। আমার ক্ষুদ্র ইংরেজির জ্ঞানে আমি জানি, Tickle মানে সুড়সুড়ি। আমি বুঝতে পারলাম না, ভদ্রলোক কি ছোটবেলায় সবাইকে কাতুকুতু দিতেন নাকি যে তাঁর নাম Tickle রাখা হয়েছে। জানি না বাপু! কত রঙ্গ যে দেখি দুনিয়ায়!

সন্তানের নামকরণ করা পিতা-মাতার আবশ্যিক কর্তব্য। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী পৃথিবীর প্রথম মানব-মানবী হলেন আদম ও ইভ। মোগল আমলে সম্রাটদের এক শব্দের নাম পাই। যেমন শাহজাহান, আকবর, জাহাঙ্গীর ইত্যাদি। তার মানে একটা সময় শুধু এক শব্দের নাম ব্যবহৃত হতো। কালের পরিক্রমায় এক শব্দের নাম আর চলছে না। এর কারণ, মানুষের উর্বর মস্তিষ্কে আর নিত্যনতুন নামের আইডিয়া গজাচ্ছে না। ফলে নামের আকার বাড়তে লাগল। বিভিন্ন বগি জোড়া দিয়ে যেমন করে রেলগাড়ি হয়, ঠিক তেমন করে দুই-তিন শব্দ পাশাপাশি জোড়া দিয়ে লম্বা লম্বা নাম তৈরি হতে গেল। যেমন: মহামতি সক্রেটিসের নামের কথা ধরা যাক। তাঁর নাম হলো Sōkrátēs ho Aischínēs, মানে Aeschines-এর পুত্র Socrates বা লেওনার্দো দা ভিঞ্চির কথাই ধরা যাক। তাঁর নাম লেওনার্দো তিনি ভিঞ্চির লোক। তার মানে, শুধু নিজের নামে আর চলছে না, সঙ্গে পিতার নাম ও বাড়ির বা দেশের নামও জুড়ে দিতে হবে। ভারতীয় উপমহাদেশে একজন বিখ্যাত যোদ্ধা ছিলেন। তাঁর নাম সবাই কমবেশি জানেন। তিনি হলেন ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি।

ভারতের একসময়কার রাষ্ট্রপতির নাম ছিল আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আবদুল কালাম। কত বড় নাম! এত বড় নাম শুনলেই মনে হয়, কখন শেষ হবে রেলগাড়িযাত্রা। আমার নিজের নামও অনেক লম্বা। বিশ্বাস না হলে শুরুতে লেখকের নাম দেখুন।

লম্বা নামের একটি মজার ঘটনা বলি। শুনেছিলাম, এক ভদ্রলোক নাকি টিউশনি করাতে গিয়ে তাঁর ছাত্রের নাম জিজ্ঞেস করাতে ছাত্রটি বলেছিল, ‘খান মোহাম্মদ সোহেল শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী।’ ভদ্রলোক নাকি নাম শুনে মনে মনে বলেছিলেন, ‘ঈদের সময় রাস্তায় ২০ কিলোমিটার ট্রাফিক জ্যামের মতো গাড়ির সারি।’ এবার তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার নামের সাইজ তো বেশ বড়। এত বিশাল নামের সামনে ‘খান’ আর শেষে ‘চৌধুরী’ কেন?” ছাত্রটি উত্তর দিয়েছিল, ‘আমার নানাবাড়ির টাইটেল খান আর দাদাবাড়ির টাইটেল চৌধুরী। কেউই তাঁদের দাবি ছাড়লেন না। তাই দুই বাড়ির খান ও চৌধুরী খান খান হয়ে ভেঙে পড়ল আমার ঘাড়ে।’

নামকে অনন্য ও ঝকমারি করতে মানুষ কত কিছুই না করে! একটু উদাহরণ দিই। নামকরণের সব উপকরণ যখন প্রায় শেষ, তখন মানুষকে হাত বাড়াতে হলো সবজির দিকে। যেমন বেগুন মিয়া, পটোল কুমার ইত্যাদি। শুধু সবজি নয়, ফুল-ফলের দিকে মানুষকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে হলো। তাই দেখি, কারও নাম ডালিম বাবু, কমলা বানু, রাঙা মিয়া, বকুল বেগম, গোলাপ শাহ, জুঁই, চামেলি ইত্যাদি। তবু ভাগ্য ভালো যে কেউ এখনো ধুতরা বা উচ্ছে বা নারকেল নাম রাখেনি। তবে ভবিতব্যের কথা কেই-বা বলতে পারে? ভবিষ্যতে হয়তো এসব নাম রাখবে মানুষ।

শুধু বাংলা নয়, ইংরেজরাও কম যায় না। তারাও নাম রাখছে hazel wood, headstone, Armstrong ইত্যাদি।  

বাঙালিদের একটি ব্যাপার যে খুবই গোলমেলে, তা আমি অকপটে স্বীকার করি। সেটি হলো আ-কার, ই-কারের গোলামাল। এই আ-কার, ই-কারের পরিবর্তনে বাঙালি ভদ্রলোকের জাত, ধর্ম—এমনকি জেন্ডার পর্যন্ত পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। যখন-তখন আ-কার, ই-কারের প্যাঁচে পড়ে ‘দানেশ’ হয়ে যেতে পারে ‘দীনেশ’। দানেশ একজন মুসলমানের নাম আর অন্যদিকে দীনেশ একজন হিন্দু মানুষের নাম। আবার ‘হরি’ বাবুর জাত পরিবর্তন হয়ে হ্যারি বাবু হয়ে গেলে অবাক হবেন না। একটা গল্প বলি। কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে কর্মসূত্রে এক ভদ্রলোকের আলাপ হয়েছে। ভদ্রলোকের নাম Kamal Mollik. আমার বন্ধুটি মুসলমান ও ধার্মিক মানুষ। বেশ কিছুদিন ধরে আমার এই বন্ধুবর Kamal Mollik নামের সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই হিসেবে ইসলামিক আলোচনা করছেন। একদিন হঠাৎ বন্ধুটি Kamal সাহেবকে নামাজে আসতে আহ্বান জানালেন। তখন Kamal সাহেব বললেন, ‘আমার নাম কমল মল্লিক, কামাল মল্লিক নয়। আমি আপনার ধর্মের ভাই নই।’ দেখুন অবস্থা! ইংরেজি বানান দেখে বোঝারই উপায় নেই যে তিনি কমল নাকি কামাল। শুধু আ-কারের পার্থক্যের জন্য কত কিছু যে হয়ে যায়!

বাঙালি বেশ ধর্মপরায়ণ জাতি। তার প্রভাব মেলে নামকরণের ক্ষেত্রেও। যত রকম আরবি নাম আছে, সব মুসলমানদের দখলে। হিন্দুরা নামকরণ করে বাংলা নাম আর খ্রিষ্টানরা ইংরেজি। কারোর নাম কল্যাণ শুনলেই বোঝা যায়, তিনি হিন্দু; আবার কারোর নাম যদি হয় খায়ের, তাহলেই তাঁর ধর্ম বোঝা যায় মুসলমান। অথচ খায়ের মানেই কল্যাণ। খায়ের আরবি শব্দ আর কল্যাণ বাংলা শব্দ। মাইকেল মধুসূদন দত্ত নিজেও খ্রিষ্টান হওয়ার পর নিজের নামের শুরুতে মাইকেল রেখেছিলেন নিজেকে খ্রিষ্টান বোঝানোর জন্য। দেখেশুনে মনে হয়, শুধু নাম দিয়েই বেহেশত বা স্বর্গ নির্ধারিত হবে। লালন বলেছিলেন, ‘কেউ মালা কেউ তসবিহ গলে, তাইতে কি জাত ভিন্ন বলে?’ নামকরণ দেখে আমার বলতে ইচ্ছা হয়, ‘কারোর নাম আরবি, কারোর নাম বাংলা হলে, তাইতে কি জাত ভিন্ন বলে?’

একটা সময়ে বাঙালি অভিভাবকেরা ছিলেন খুব বুদ্ধিমান। তখন আজকের মতো আগে থেকেই ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে, জানা যেত না। তাই বাবা-মায়েরা বুদ্ধি করতেন এ রকমভাবে যে ছেলে হলে নাম হবে সোহেল আর মেয়ে হলে সোহেলী, ছেলে হলে কল্যাণ আর মেয়ে হলে কল্যাণী, ছেলে হলে রাশেদ আর মেয়ে হলে রাশেদা ইত্যাদি; অর্থাৎ শুধু আ-কার বা ই-কার পরিবর্তন করেই জেন্ডার পরিবর্তন করে দিতে পারবেন আরকি! তবে এ ধরনের বাবা-মায়ের থেকেও আরও চিকন বুদ্ধিসম্পন্ন বাবা-মা ছিলেন সেই সময়। তাঁরা নামকরণের জগতে এ-প্লাস। তাঁরা বাচ্চা জন্মানোর আগেই ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, একটাই নাম রাখতেন। এই সব নামের ক্ষেত্রে আ-কার ই-কারের কোনো ঝামেলা নেই। যেমন বকুল, কাজল, মুক্তা, মঞ্জু, শাওন ইত্যাদি।

নামকরণের ক্ষেত্রে আমি এগিয়ে রাখি একধরনের বাবা-মাকে, যাঁরা নিজেদের সন্তানের পাশাপাশি নিজেদের নাতি-নাতনিদের নামও রেখে থাকেন। স্যালুট তাঁদের। কারণ, তাঁরা যথেষ্ট দূরদর্শী বাবা-মা। ব্যাপারটা বুঝলেন না তো? বুঝিয়ে বলছি। তাঁরা তাঁদের সন্তানদের নাম রাখেন উম্মে কুলসুম (মানে কুলসুমের মা), আবুল বারাকাত (মানে বারাকাতের বাবা) ইত্যাদি। অতি চমৎকার ভাবনা! আমার এক বন্ধুর নাম ছিল আবু রায়হান মোহাম্মদ সোহেল। এই নামের মধ্যে আমার বন্ধু ও তাঁর ছেলের নাম আছে। এটিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বন্ধুটির নাম মোহাম্মাদ সোহেল তিনি রায়হানের বাবা।

আবার কিছু কিছু নাম আছে, অমুক কুমার বা তমুক কুমার। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, তাঁরা সবাই কুমার; অর্থাৎ তাঁদের কৌমার্য নষ্ট হয়নি। কিন্তু সাবধান! এই কুমারের সঙ্গে কৌমার্যের কোনো সম্পর্ক নেই।

ইংরেজদের আবার নাম সংক্ষেপ করে ডাকার জুড়ি নেই। তারা Robert কে আদর করে সংক্ষেপে ডাকে Bob, আবার William কে ডাকে Bill, Elizabeth কে ডাকে Liz ইত্যাদি। ঠিক সে রকমভাবে সবাই Richard কে সংক্ষেপে Dick বলে ডাকে। Dick-এর মানে কেমব্রিজ ডিকশনারিতে বলা আছে, ‘a rude word for a penis’, বাংলা যাকে বলে পুরুষাঙ্গ। কোনো লোকের নাম যে Dick হতে পারে, তা আমার মাথায় আসে না। অস্ট্রেলিয়াতে আমার এক কলিগ একটা গল্প বলেছিলেন। গল্পটি নাকি তাঁর বাবা তাঁকে বলেছেন। আমেরিকায় দুটি এলাকার মধ্যবর্তী অঞ্চলে একটি রেস্তোরাঁ কাম বার আছে। সেই বারের মালিকের নাম নাকি Richard। এখন ভাবতে পারেন, সেই রেস্তোরাঁ কাম বারের নাম কী হতে পারে। আর যেখানে রেস্তোরাঁটি দুটি এলাকার মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। সেই রেস্তোরাঁর নাম Big Dick’s halfway Inn। জানি না গল্পটি সত্য নাকি বানানো। তবে গুগলে সার্চ করে সত্যিই এই নামের একটি রেস্তোরাঁ কাম বার পেলাম। বলতে পারব না এই রেস্তোরাঁ কাম বারের মালিক Richard কি না! (রেস্তোরাঁর লিংক https://www.bigdickshalfwayinn.com)

আগেই বলেছি, নামকে অনন্য করতে মানুষ কত কী যে করতে পারে, তার ইয়ত্তা নেই। এমনকি তারা নিজেদের সন্তানের নাম শয়তান বা Devil নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখতেও কুণ্ঠিত হয় না। সম্প্রতি এক ব্রিটিশ দম্পতি তাঁদের ছেলের নাম রেখেছেন Lucifer। আর তাতেই বেধেছে যত বিপত্তি। ব্রিটিশ জন্মনিবন্ধনকারী সংস্থা কোনোভাবেই এ নাম রাখতে দেবে না। কারণ, ১৬১১ সালে কিং জেমস বাইবেল অনুযায়ী শয়তানকে Lucifer নামে ডাকা হতো। যদিও বর্তমান বাইবেলে শয়তানকে Satan বলা হচ্ছে। যা-ই হোক, অবশেষে সেই দম্পতি অনেক কোর্ট-কাচারির পর সন্তানের নাম Lucifer রাখতে পেরেছেন (সূত্র: 7 news Lifestyle “British couple win battle to name child Lucifer” তারিখ ২৩.০৭.২০২০)। ভাবুন একবার! নিজের ছেলের নাম শয়তান!

Lucifer নাম থেকে মনে পড়ল নামকরণের জগতে কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন বিষয়টি প্রায়ই প্রাধান্য পায়। সব সভ্যতাতেই বিষয়টির একটা গুরুত্ব আছে। সম্প্রতি এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার ই-মেইলে যোগাযোগ হচ্ছিল। ভদ্রলোকের নাম David Black। স্বভাবতই আমি ধরে নিয়েছি ভদ্রলোক নিগ্রো জাতিরই হবেন। যেদিন আমার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হলো সেদিন বুঝলাম, তিনি পুরোপুরি সাদা চামড়ার লোক। লাল টকটকে ফরসা মানুষ। এই ঘটনা শুধু বিদেশে নয়, বাংলাদেশেও আমি এক ভদ্রলোককে চিনি, তাঁর নাম ফকির আহমদ। তিনি কিন্তু মোটেই দরিদ্র নন, যথেষ্ট ধনী। তাই বলি কী, ‘নাম দেখে কেউ করিসনে যাচাই, আড়ালে তার ব্যক্তিত্ব হাসে’।
নাম নিয়ে যথেষ্ট কথা বললাম। আর আপনারাও পড়লেন। ভালোবেসেই হয়তো পড়লেন। তাই আপনাদের ভালোবাসার ধৈর্যচ্যুতি আর ঘটাব না। আর কিছু বলতে চাই না। শুধু একটি কথা। অনেকেই বিভিন্ন প্রাণী বা বৃক্ষের বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গে পরিচিত আছেন। এই ধরনের নামের দুটি অংশ থাকে। যেমন
আমের বৈজ্ঞানিক নাম: Mangifera Indica
তেলাপোকার বৈজ্ঞানিক নাম: Periplaneta Americana
মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম: Homo Sapiens
এসব বৈজ্ঞানিক নামের আদলে আমরা নিজেদের ছেলেমেয়েদের নামকরণ করতে পারি। নামের প্রথমাংশ মায়ের ও দ্বিতীয়াংশ বাবার নামের সঙ্গে সম্পর্কিত হবে। তারপর আ-কার বা ই-কার যোগ করে জেন্ডার পরিবর্তন করে নিলেই হবে। আমার কাছে উদাহরণ চাইবেন না প্লিজ। ওপরের লেখায় অনেক উদাহরণ দিয়েছি। এবার এটি আপনাদের হোমওয়ার্ক।

*দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]