নতুন রাজনৈতিক চিন্তা, নতুন বাংলাদেশ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসপিআইডির ফাইল ছবি

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতের আসাম প্রদেশে ‘আসাম আন্দোলন’ বা ‘Movement or Assam Agitation’ নামে একটি ছাত্র-জনতার বিপ্লব সংঘটিত হয়। এ আন্দোলন ছিল মূলত অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অসমীয়া মানুষের করা আন্দোলন। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অনেক অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে আসামের মানুষের একটি বৈরী ভাব তৈরি হয়। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় All Assam Students Union বা সদৌ আসাম ছাত্র সংস্থা। এই গণ–আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে থাকা প্রফুল্ল কুমার মহন্তের বয়স ছিল ২৭ বছর।

দীর্ঘদিন চলতে থাকা এই ছাত্র আন্দোলনের মধ্যেই ভারত সরকার ১৯৮৩ সালে আসামে নির্বাচন আয়োজন করে। ওই নির্বাচনে হিতেশ্বর শইকিয়া মুখ্যমন্ত্রী হন। গণমানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ছাত্রদের আসাম আন্দোলন গণ–আন্দোলনে রূপ নেয়। এ সময় আসামের ইতিহাসে জঘন্যতম নেলির হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। নেলির হত্যাকাণ্ডে প্রায় ১ হাজার ৮০০ সাধারণ ছাত্র–জনতা এবং আন্দোলনের সময়ে ৮৫৫ জন ছাত্র সদস্যের মৃত্যু হয়েছিল। এই গণপ্রতিবাদের মুখে ১৯৮৪ হিতেশ্বর শইকিয়া সরকারের পতন হয়। কিছুদিন পরেই ১৯৮৪ সালের ৩১ বছরের প্রফুল্ল কুমার মহন্তের নেতৃত্বে গঠিত হয় অসম গণপরিষদ নামক রাজনৈতিক দল। ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে এ দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করে এবং প্রফুল্ল কুমার মহন্ত মুখ্যমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হন।
আসাম আন্দোলন আসামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রফুল্ল কুমার মহন্তের নেতৃত্বে ছাত্র আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক দল গঠন এবং মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার এই যাত্রা অসমীয়া মানুষের জীবনে এক নতুন পরিবর্তন আনে। আন্দোলনের ইতিহাস, নেলির হত্যাকাণ্ড, অসম চুক্তি এবং আন্দোলনের ফলাফল আসামের রাজনীতিতে আজও প্রাসঙ্গিক। এ আন্দোলন প্রমাণ করে যে পরিবর্তন আনার জন্য বয়স শুধু একটি সংখ্যামাত্র।

তারুণ্যের শক্তিতে বাংলাদেশ আজ নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে। এ দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। চায় নিজের অধিকার। চায় একটি শোষণমুক্ত, বিভেদহীন‌ জবাবদিহিমূলক সমাজব্যবস্থা। এ দেশের ছাত্র–জনতা প্রতিবারই নতুন সূর্যোদয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ভুল করেছে এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। এবারও কি আমরা ঘুণে ধরা রাজনৈতিক পাশবিকতার শিকার হব? নাকি হবে নতুন কোনো চিন্তার বহিঃপ্রকাশ? আমরা দেখতে চাই নতুন বাংলাদেশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে এ দেশে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটুক। নতুন চিন্তার নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তন আসুক তারুণ্যের হাত ধরে। বয়স শুধু একটি সংখ্যামাত্র। দেশটি হোক আমাদের সবার।

*লেখক: মাহমুদুল হাসান, সহকারী অধ্যাপক, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পিএইচডি গবেষক, ভার্জিনিয়া টেক, যুক্তরাষ্ট্র

নাগরিক সংবাদে ছবি, লেখা ও ভিডিও পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]