যুক্তরাষ্ট্রের যে শহর ৭০ ইঞ্চি তুষারপাত পড়লেও করতে হয় না পরিষ্কার
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্য হচ্ছে তুষারময় একটি স্থান। হ্রদের প্রভাবের কারণে এ তুষারপাত হয় বলে জানা গেছে। কিন্তু এ অঙ্গরাজ্যের একটি শহরের মানুষকে তুষারপাতের সময় তুষার পরিষ্কারের জন্য বেলচা দিয়ে পরিষ্কার বা লবণ ছিটানোর জন্য চিন্তা করতে হয় না ৩৫ বছর ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একমাত্র শহর, যেখানে তুষার পরিষ্কার করতে হয় না। কীভাবে এ অসাধ্য কাজ সাধন করা হয়েছে, চলুন জেনে নিই।
মিশিগান অঙ্গরাজ্যের পশ্চিমে অবস্থিত হল্যান্ড সিটি। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এই শহরের রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহ্য ও পরিচিতি। পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় এক শহর। ডাচ ঐতিহ্য, টিউলিপ ফুল ফেস্টিভ্যাল, গির্জার শহর, লাইট হাউস ও বিশ্বের বৃহত্তম আচার কারখানার জন্য পরিচিতি। কিন্তু সবকিছুর চেয়ে বড় পরিচিতি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র শহর, যেখানে ৭০ ইঞ্চি তুষারপাত হলেও তুষার পরিষ্কার করতে হয় না।
আশির দশকের শেষ দিকে শহরটি ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপন করে গরম পানি সঞ্চালনের মাধ্যমে রাস্তা, ফুটপাত ও পার্কিং লট তুষারমুক্ত রাখছে। বর্তমানে ১৯০ মাইল এলাকাজুড়ে প্রতি মিনিটে ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার ৪ হাজার ৭০০ গ্যালন গরম পানি সঞ্চালন করে তুষার গলানো হয় এ শহরে।
হল্যান্ড শহরের ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে, ১৯৮৮ সাল থেকে শহরের বাসিন্দা ও পর্যটকেরা পুরো শীত মৌসুমে তুষারমুক্ত রাস্তা ও ফুটপাত ব্যবহার করছেন। যদি তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (হিমাঙ্কেরও নিচে) ও বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০ মাইলও থাকে, তবে এ প্রক্রিয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ১ ইঞ্চি তুষার গলানো যায়।
এ প্রক্রিয়ার আওতায় রয়েছে শহরের ৬ লাখ ৯০ হাজার বর্গফুট রাস্তা, ফুটপাত ও পার্কিং লট। এই তুষার গলানোর পদ্ধতির জন্য এ শহরের অধিবাসীদের শাবল দিয়ে তুষার পরিষ্কার করতে হয় না, লবণ ছিটাতে হয় না, স্খলন বা পা পিছলে পড়া থেকে মুক্তি পান, যা অন্যান্য শহরে প্রচুর পরিমাণে ঘটে থাকে।
আশির দশকে হল্যান্ড শহরের ডাউন টাউনের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হলে অন্যান্য শহরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রাণবন্ত, ব্যবসার উত্থান, নতুন কিছুর দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা করার জন্য হল্যান্ড সিটি ও পাবলিক ওয়ার্কস বোর্ডের সঙ্গে দেখা করেন।
এ সময় সেখানে হল্যান্ডের স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রিন্স করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা এডগার ডি প্রিন্স যোগ দেন। সেই সভায় তিনি বলেন, ইউরোপ থাকাকালে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন, ভূগর্ভস্থ পাইপিংয়ের মাধ্যমে গরম পানির সঞ্চালনের মাধ্যমে তুষার গলিয়ে তুষার ও বরফমুক্ত শহর করা যাবে। এখান থেকেই তুষার গলানো প্রকল্পের শুরু।