অর্থহীন–তপু সান ডিয়েগো : এক ভক্তের স্বপ্ন
‘মেয়ে, তুমি এখনো আমায় বন্ধু ভাবো কি, কখনো কি আমায় ভেবেছিলে বন্ধুর চেয়ে একটুখানি বেশি?’ অথবা ‘তুমি তো দিয়েছিলে মোরে কৃষ্ণচূঁড়া ফুল, আমি তো বসেছিলাম নিয়ে সেই গানের সুর’—এই গানগুলো শুনে কেউ কি সঙ্গে গান না গেয়ে থাকতে পারে? কত শুনেছি! কত গেয়েছি! নিজের গলা যত খারাপই হোক না কেন, এই গানগুলো শুনলেই, মন খুলে গান না গেয়ে থাকতে পারিনি। বড় হয়েছি ‘অর্থহীন’ আর তপুর গান শুনে, এসব সব গান মাথার ভেতর এমনভাবে গেঁথে আছে যেন আমার নিজেরই এক অংশ।
ছোটবেলা থেকে শখ ছিল ‘অর্থহীন’ অথবা তপুর গান কনসার্টে গিয়ে সামনাসামনি শুনব। তাদের সঙ্গে গলায় গলা মিলিয়ে গান গাইব! বেজ বাবা সুমন যখন গিটার বাজাবেন, আমি ‘এয়ার গিটার’ বাজাবার ভঙ্গি ধরব! উফ কি মজাটাই না হবে! তপু যখন ‘একটা গোপন কথা ছিল বলবার বন্ধু/ সময় হবে কি তোমার’ গানটা ধরবে, আমি আমার নিজের মানুষটার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তার হাত ধরে তপুর গাওয়া গান শুনব!
চটজলদি চশমাটা পরিষ্কার করে আবার পোস্টটা পরে নিলাম, কোথাও যদি পড়তে ভুল হয়! না ঠিকই পড়েছি, গ্রেটার সান ডিয়েগো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত কনসার্ট। অর্থহীন আর তপুর একসাথে কনসার্ট হবে জেমস ট্রায়াক্স পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল চারটায়।
হাইস্কুল থেকেই অর্থহীন আর তপুর গানের সঙ্গে পরিচয়! বিদেশে যখন ‘লিংকইন পার্ক’ আর ‘গ্রিন ডে’ সবার মুখে মুখে, তখন বাংলাদেশে ছিল অর্থহীনের ক্রেজ! বাইরের কোনো রক ব্যান্ডের চেয়ে অর্থহীন কোনো অংশ কম ছিল না! অর্থহীনের সুমন ভাই, বাংলাদেশের তখনকার সবচেয়ে সেরা ‘বেজ গিটারিস্ট’, তাই বলে সবাই তাকে ‘বেজ বাবা’ বলে চিনত। তার গিটার বাজানো শুনলেই আমরা সবাই পাগল হয়ে যেতাম! এখনো এত বছর পর তার এই নামটাকেও নিজ অস্তিত্ব থেকে সরাতে পারেনি। আজও তিনি বেজ বাবা! মিড ২০০০ সালে একদিকে যেভাবে রক ব্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল অর্থহীন, অন্য দিকে বাংলা মেলোডিক পপ গানের জনপ্রিয় কণ্ঠ ছিল তপুর! এককথায় তারা আমাদের হাইস্কুল ও কলেজ জীবনের অনেক বড় অংশ!
বিদেশের মাটিতে অনেক কনসার্টেই গেছি, তাদের মধ্যে হাতে গোনা দু–একজন বাংলাদেশি শিল্পী ছিলেন। সত্যি বলতে, সান ডিয়েগোতে বাংলাদেশি কনসার্ট তেমন একটা হয় না। যেই দু–একটি বাংলাদেশি কনসার্টে গিয়েছি, সেসব বেশ দূরে ছিল! তাই সেদিন যখন ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখলাম, নিজেকে সামলাতে না পেরে চিৎকার করে উঠলাম। অর্থহীন আর তপু নাকি কনসার্ট করছে, তা ও আবার একসাথে! বিশ্বাস হয়? তারা ১৩ বছর পর একসাথে কনসার্ট করছে! তা–ও আবার আমাদের সান ডিয়েগোতেই! লটারি জিতলে মানুষ যতটুকু খুশি হয়, আমার খুশিটা তারচেয়ে একটু বেশি ছিল!
চটজলদি চশমাটা পরিষ্কার করে আবার পোস্টটা পড়ে নিলাম, কোথাও যদি পড়তে ভুল হয়! না ঠিকই পড়েছি, গ্রেটার সান ডিয়েগো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত কনসার্ট। অর্থহীন আর তপুর একসঙ্গে কনসার্ট হবে জেমস ট্রায়াক্স পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল চারটায়। সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি টিকিট কিনে ফেললাম! ফোনের ক্যালেন্ডার খুলে ১০টায় অ্যালার্ম দিয়ে ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ সেভ করে রাখলাম।
খুশিতে গলা ফাটিয়ে একবার অর্থহীনের সেই ‘চাইতে পারো জোছনা কুয়াশা ঢাকা, চাইতে পারো ঘরের সিলিঙের সন্ধ্যাতারা’ গানটা গেয়েও ফেললাম! বাংলাদেশে বড় হওয়া এই আমি এখন বিদেশের মাটিতে, বেজ বাবা সুমন, অর্থহীন, তপু সবাইকে সামনাসামনি দেখব বিশ্বাস হচ্ছে না! এখন শুধু দিন গোনা! ১৪ ডিসেম্বর এত দূর কেন?
*লেখক: তানজিয়া চৌধুরী, ক্যালিফোর্নিয়া
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]