চীনের প্রাচীন সংস্কৃতির চংকিং থেকে ঘুরে এলাম
চীনের চংকিং শহর বাংলাদেশিদের জন্য খুব একটা চেনাজানা হবে না। সম্প্রতি চংকিং এপিআই চীন এক্সপো ২০২৫ আয়োজনে গবেষক হিসেবে আমন্ত্রিত হওয়ার সুবাদে আমি এই বিস্ময়কর নগরীর দেখা পাই।
পর্বতকন্যার কোলে বিলাসবহুল আবাস—
সেখানে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল পাহাড়ের কোলে অবস্থিত একটি বিলাসবহুল হোটেলে। কক্ষের জানালা দিয়ে দেখা যেত মেঘ খেলতে থাকা পর্বতশ্রেণি আর নিয়ন আলোয় সাজা নগরী। প্রতি সকাল যেন শুরু হয় প্রকৃতির দারুণ সব অপরূপ দৃশ্য দেখে। আর প্রতি রাত শেষ হয় পাহাড়ি বাতাসের স্পর্শে। চংকিং শহরটাই যেন একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিখুঁত সমন্বয়।
চংকিং শহরের মুগ্ধতা
চংকিং শহরটি যেন প্রকৃতির অকৃপণ দানের একটি অমূল্য সম্পদ। নদীর কোলজুড়ে গড়ে ওঠা এই নগরী পাহাড়-পর্বত, আধুনিক স্থাপত্য এবং প্রাচীন সংস্কৃতির অদ্ভুত মিশেল। হংগইয়া গুহা আমাদের সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়েছিল। পাহাড়ের গায়ে স্তরে স্তরে নির্মিত এই স্থাপত্যকর্ম রাতে নিওন আলোয় ঝলমল করে উঠলে মনে হয় যেন কোনো রূপকথার প্রাসাদ। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শতাব্দীর ইতিহাস মনে পড়ে যায়। হংগইয়া গুহা বা হংগইয়াডং চীনের চংকিং শহরের জিয়াওলিং নদীর তীরে অবস্থিত একটি বিশাল স্থাপত্য কমপ্লেক্স। হংগইয়া গুহা মূলত একটি ঐতিহাসিক স্থান, যা আধুনিক পর্যটন এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে নতুন করে সেজে উঠেছে। হংগইয়া গুহার স্থাপত্য বাডিয়াও স্টাইলে তৈরি, যা চংকিং অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী নির্মাণ শৈলী। এই শৈলীতে কাঠের তৈরি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে ভবনগুলো পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে ওপরের দিকে ধাপে ধাপে উঠে যায়। এটি দেখলে মনে হয় যেন ভবনগুলো পাহাড়ের গায়ে ঝুলে আছে। প্রাচীনকালে এই স্থানে সামরিক দুর্গ এবং নদীর পাশের বন্দর ছিল। প্রায় ২৩০০ বছর আগেকার বা রাজ্যের সময় থেকে এই অঞ্চলের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, বর্তমান কাঠামোটি আধুনিক পুনর্নির্মাণ হলেও এটি চংকিংয়ে পুরোনো শহরের আসল রূপকে তুলে ধরে। হংগইয়া গুহা মূলত একটি ১১ তলাবিশিষ্ট কাঠামো, যার প্রবেশ এবং প্রস্থান পথগুলো ভিন্ন ভিন্ন তলে অবস্থিত। এর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ভবনের ১১ তলা থেকে বের হলে সরাসরি রাস্তার মূল প্রবেশদ্বারে পৌঁছানো যায়, ঠিক তেমনই ১ তলা থেকেও বের হওয়া যায়। রাতের বেলা যখন হাজার হাজার লাইট জ্বলে ওঠে, তখন হংগইয়া গুহা এক জাদুকরি রূপ ধারণ করে। এটি দেখে মনে হয় যেন হাজার বছরের পুরোনো একটি ফ্যান্টাসি জগৎ। এর মনোমুগ্ধকর স্থাপত্য এবং প্রাণবন্ত নৈশ জীবনের কারণে হংগইয়া গুহা চংকিংয়ের সাংস্কৃতিক প্রতীক এবং পর্যটকদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
আমরা নানআন সাইবার সিটির কাছে এক বিনোদন কেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহী চীনা লোকসংগীত ও নৃত্যের অনুষ্ঠান দেখা সুযোগ পাই। শিল্পীদের বর্ণিল পোশাক, মন্ত্রমুগ্ধ করা সুর এবং নৃত্যের কাহিনি আমাদের সবাইকে চীনের প্রাণময় সংস্কৃতির দেখে ভীষণ মুগ্ধ হই আমরা।
মেট্রোরেলের অদ্ভুত দুনিয়ায় ভ্রমণ
চংকিংয়ের মেট্রোরেল ব্যবস্থা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে অনন্য। পাহাড় টানেল ভেদ করে, নদীর নিচ দিয়ে, উড়াল সড়কের ওপর দিয়ে, কখনো বা রেসিডেনশিয়াল ভবনের ভেতর দিয়েও এই মেট্রো চলাচল করে। লিজিবা স্টেশনে গিয়ে আমরা একটি মেট্রো ট্রেন একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ৬ থেকে ৮ তলার মাঝখান দিয়ে চলাচল করে। প্রকৌশলীরা কীভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, তা দেখে আমরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
এক্সপোতে বাংলাদেশের জয়যাত্রা
চংকিং এপিআই এক্সপো ২০২৫ আয়োজনে আমরা বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের গুণগত মান, উৎপাদন ক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথা অন্যদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাই। বাংলাদেশের প্রতিনিধি আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নেই। এক্সপোতে ভারত, থাইল্যান্ড, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের ফার্মাসিস্ট, সাংবাদিক এবং শিল্পনেতাদের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময়ের সুযোগ হয়েছিল। এই বৈশ্বিক সংযোগ আমাদের পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও প্রসারিত করেছে।
দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]