উপহার

উপহার কখনো ফুল নয়,

কারণ ফুল ভুল বোঝায়—

কথা বলে বেশি, তার রঙে অকারণে

হৃদয়ের দরজা খুলে যেতে পারে।

পারফিউমও নয়, কারণ সুগন্ধ সহজেই

মনের মণিকোঠায় পৌঁছে যায়।

চকলেটও নয়—

চকচকে মোড়কে ভুল ইশারা থাকে।

গয়না কখনো উপহার হয় না,

কারণ ধাতু কঠিন প্রশ্ন তোলে—

কে দিল, কাকে দিল, কেন দিল,

কোন অধিকারে?

আমি খুঁজি এমন কিছু

যা হাত ছোঁয়, কিন্তু হৃদয় স্পর্শ করে না,

তথাপি গ্রহীতাকে যথাযথ সম্মান জানায়।

উপহার হতে পারে একটি বই—

যার প্রথম পাতায় তোমার নাম নয়,

লেখা থাকবে তার অবদান।

হতে পারে একটি কলম—

যার কালিতে কোনো কালিমা নেই,

নেই কোনো ইঙ্গিত, শুধু বলে ধন্যবাদ।

উপহার মোড়ানো থাকবে

নকশাকাটা কাগজে নয়, সাধারণ সাদামাটা খামে—

যেমন সৎ উদ্দেশ্যের কোনো

ব্যাখ্যা লাগে না।

আমি কিনে আনি

চা-ব্যাগের একটি বাক্স—

যাতে আলোকিত সকাল আছে,

কিন্তু কোনো গোপন সন্ধ্যা নেই।

সঙ্গে খেজুর—

ইফতারির টেবিলের মতো

স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।

অথবা শুকনা ফল, বাদাম—

যা শরীর বুঝে, মনে প্রশ্ন জাগায় না।

উপহার এমন হবে

যা বাসায় নেওয়া যায়,

যা সন্তানও দেখতে পারে,

মা-ও আপত্তি করে না।

দেওয়া হবে আলো-আঁধারির খেলায়,

কফিশপের টেবিলে নয়,

অফিসের খোলা ঘরে,

দিনের কাজের ফাঁকে—

যেখানে চোখ আছে,

কিন্তু গভীর চাহনি নেই।

এই সমাজে

সব কৃতজ্ঞতা খোলামেলা বলা যায় না,

কিছু ধন্যবাদ চুপচাপ থাকলেই পবিত্র রয়।

তিনি তোমার সহমর্মী নন,

সহযাত্রীও নন,

ক্ষণিকের পথচলার কয়েকটি মুহূর্ত মাত্র।

মনে রাখবে আরেকটি কথা—দেওয়ার সময়

পাশে থাকবেন তোমার স্ত্রী—

সবচেয়ে শক্ত প্রমাণ,

এই উপহারে কোনো কালো ছায়া নেই,

নেই কোনো অযাচিত মায়া।

হাত বাড়বে দুজনের, কথা বলবে একজন—

সংক্ষিপ্ত, নির্ভুল। এভাবে উপহার হবে—

নিরীহ, নীরব, নিষ্পাপ ও সম্পূর্ণ নিরাপদ—

উভয়ের জন্য।

দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]