প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন: জেদ্দায় প্রবাসীদের আগ্রহ কম, প্রক্রিয়া জটিল বলছেন অনেকেই
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রথমবারের মতো বিদেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে। এর ফলে প্রবাসীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
সৌদি আরবের বন্দর নগরী জেদ্দায় এই ঐতিহাসিক উদ্যোগের প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাড়া এখনো আশানুরূপ নয়। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। তাঁদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ২ হাজার ৫০০ জন ভোটার হিসেবে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।
জানা গেছে, প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের প্রাথমিক পর্যায়ে নানা কারিগরি ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—নিবন্ধনের জন্য প্রত্যয়নপত্রের প্রয়োজনীয়তা, যা প্রবাসীদের জন্য জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নোয়াখালী সমিতি জেদ্দার সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়াটা খুব একটা সহজ নয়। ভোটার হতে হলে অন্য তিনজন নিবন্ধিত ভোটারের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হয়, যা প্রবাসজীবনে অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রবাসীরা দেশের প্রতি আন্তরিক। কিন্তু বাস্তবতার কারণে সবাই সব সময় দূতাবাস বা কনস্যুলেটে গিয়ে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন না। তাই প্রক্রিয়া আরও সহজ করা প্রয়োজন। সব প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদনের ব্যবস্থা করা হলে আমরা সহজে ও দ্রুত নিবন্ধন করতে পারতাম।’
দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
অন্যদিকে জেদ্দায় নিয়োজিত বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা বলেন, প্রবাসীরা যাতে নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন, সে জন্য কনস্যুলেট সব ধরনের সহযোগিতা করছে। তাঁরা বলেন, ‘আমরা প্রবাসীদের নিবন্ধনসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দিচ্ছি, ফরম পূরণে সহায়তা করছি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছি। প্রবাসীদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।’
কনস্যুলেট সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন প্রমাণপত্র ও প্রত্যয়ন ফরম জমা দিতে হয়। অনেকে এসব আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করতে না পারায় নিবন্ধন হার কমে যাচ্ছে।
প্রবাসীরা বলছেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইন বা ডিজিটাল নিবন্ধনব্যবস্থা চালু করা গেলে এই হার বাড়তে পারে। জেদ্দায় কর্মরত সফটওয়্যার প্রকৌশলী মুকবুল হোসেন জানান, ‘সব প্রক্রিয়া অনলাইনে হলে আমরা সহজে নিবন্ধন করতে পারতাম। বর্তমানে কাজের চাপে কনস্যুলেটে যাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না।’
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জেদ্দা শাখার নেতাদের মতে, প্রবাসীদের ভোটাধিকারের সুযোগ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে। দেশের উন্নয়নে প্রবাসীরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন, তেমনি তাঁদের ভোটও নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে।
সর্বোপরি তাঁরা মনে করেন, প্রবাসে বসবাসকারী এক কোটি বাংলাদেশির ভোটাধিকার নিশ্চিত করা গেলে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া আরও গণমুখী ও প্রতিনিধিত্বমূলক হবে। তবে এ জন্য প্রবাসীদের আগ্রহ সৃষ্টি, প্রচারণা জোরদার ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।