অস্ট্রেলিয়ার গল্প: ৪—গোল্ড কোস্টের বঙ্গ সমাজ
তেহরানে যখন থাকতুম, প্রথম ছয় মাস কোনো বাঙালের চিহ্ন দেখিনি।
শুনেছি অনেক ডাক্তার কোবরেজ থাকতেন পারস্যে, সেই আশির দশকে। কিন্তু সবাই থাকতেন গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। তেহরানে ছিল না কেউ। সবেধন নীলমণি দু–চারটে বাঙাল হয়তো পাওয়া যেত এম্বাসিতে। আপিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় সেদিকে পা মাড়ানো হয়নি কখনো।
আমি নিজেই ছিলুম আফিসের বড় কর্তা। মাত্রই নতুন প্রজেক্টে হাত দিয়েছি।
তাই অনেক লোকবল লাগবে। সুযোগ পেয়েই তাই গ্রামীণফোন থেকে ছিনতাই করে নিয়ে এলুম আট–দশজন বাঙাল প্রকৌশলী। অনেকেই দারা পুত্র পরিবার নিয়ে তল্পিতল্পা গুছিয়ে চলে এল তেহরানে। সব মিলিয়ে প্রায় পঁচিশ জন আদম সুরত। আপিস থেকে পুরো একটা বিল্ডিং ভাড়া করে নিলুম। অভিজাত নিয়াভারান এলাকায়। আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রাসাদের একদম সন্নিকটে। সেই বিল্ডিংয়ের নাম দিলুম ‘বঙ্গভবন’!
তেহরানের বুকে মোটামুটি এক বাঙাল উপনিবেশ বানিয়ে ফেললুম ছয় মাসের মধ্যে। তা–ও আবার খোদ আয়াতুল্লাহর নাকের ডগায়!
এদের দিয়েই প্রতিষ্ঠা হলো তেহরানের বঙ্গ সমাজ আর সংস্কৃতি। এরাই যাওয়া আসার সময় বাকশো ভরে বাঙালি বইপত্তর, মাছ, শাকসবজি, মসলাপাতি নিয়ে আসত। সেই পঁচিশ জন আদম সুরত নিয়েই নববর্ষ, ঈদ, পূজা, ভাষা দিবস, বসন্ত—সব উৎসবই পালন হতো। বঙ্গভবনে দু–চারটে ভারতীয় আর পাকিস্তানিও ছিল। বঙ্গবাসীর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে ওরাও মোটামুটি বাঙাল হয়ে গেল।
এরপরে প্রজেক্ট বড় করতে হলো, আমদানি করলুম আরও জনা দশেক বঙ্গদেশি ইয়ার দোস্ত। উপনিবেশ আরও বড়ো হলো। বঙ্গভবন করদরাজ্য থেকে হলো সাম্রাজ্য। বঙ্গভবনের কর্ত্রী আমার বেগম আবার সবারই খোঁজখবর রাখতেন। যাবতীয় উৎসব অনুষ্ঠানের প্ল্যান প্রোগ্রাম উনিই করতেন।
সেই খ্রিষ্টের জন্মের পাঁচ শ বছর আগে বঙ্গজাতি উপনিবেশ বানিয়েছিলো লংকাকে। বঙ্গ রাজপুত্র বিজয় সেনা লংকা দখল করে গড়েছিলেন শ্রীলঙ্কা বা সিংহল। হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রথম রাজা। ইতিহাস ঘুরে ঘুরে আসে। সেই লংকা দখলের আড়াই হাজার বছর পরে আমরা দখল করলুম তেহরান।
নাদির শাহের ভারতবর্ষ আক্রমণের প্রতিশোধও নিলুম আয়াতুল্লাহর নাকের ডগায় উপনিবেশ বানিয়ে। এক ঢিলে দুই পাখি!
এরপর সেই তেহরান হতে হিজরত করলুম দুবাই।
সেখানে আগে থেকেই সপরিবার বেশ কয়েকজন বঙ্গজাত টেলিকম প্রকৌশলী ছিল। এরা হলো ‘আনসার’ মানে সাহায্যকারী। যারপরনাই সাহায্য সহযোগিতা করল আমাদের হিজরত প্রক্রিয়ায়। তারপর আবার কিছু প্রকৌশলী আমদানী করলুম পারস্য আর বঙ্গদেশ থেকে। এরা হলো ‘মুহাজির’ মানে হিজরতকারী। এই আনসার আর মুহাজির ভাইবোন আর তাদের আন্ডা–বাচ্চাদের নিয়ে আমাদের দিনকাল ভালোই চলছিল। সবমিলে আবারও প্রায় পঞ্চাশ জনের কাফেলা।
সেই আনসার বাহিনীর প্রধান ছিলেন আমাদের সাঈদ ভাই। দুবাইয়ের অলিগলি ওনার হাত ধরেই চেনা। শুধু দুবাই কেন, আবুধাবি, আজমান, ওমান, সৌদি—সবই। ওনার আর আমার ভ্রমণের কাহিনি লিখতে বসলে সে ইবনে বতুতার কাহিনির চেয়ে কম কিছু হবে না। সময়–সুযোগ মোতাবেক সে লিখব খন।
বলা বাহুল্য দুবাইয়ে এসে তেহরানের ঐতিহ্য মোটামুটি বজায় থাকল। দুবাইয়ে বাঙালের অভাব নেই। চারদিকে লক্ষাধিক বাঙালের মধ্যে আমরা হলুম টেলিকম বাঙাল। মোটামুটি এই টেলিকম বাঙাল বাহিনী নিজেদের মতো করে একটা বাঙাল সমাজ গড়ে নিয়েছিলুম। তাতে করে আমাদের বাঙালিত্ব শনৈঃশনৈ সমৃদ্ধ হতে থাকল।
পরবাসের তেমন কিছুই মালুম করলুম না।
অতঃপর গোল্ড কোস্টে হিজরত করে পড়লুম মহাবিপাকে।
এ দেখি নানা পেশা, ধর্ম, গোত্র, বর্ণ, পেশার মানুষজন। বাঙাল টেলিকম সমাজ আর সেই সাম্রাজ্য কই পাই? এখানে সেই রামও নাই আর তার রাজত্ব মানে অযোধ্যাও আর নাই।
সারা কুইন্সল্যান্ডে বঙ্গজ আদমসংখ্যা সাকুল্যে পাঁচ হাজার। এর মধ্যে গোল্ড কোস্টবাসী হলো মোটে হাজারখানেক। বাকিরা হয় রাজধানী ব্রিসবেন নয়তো কুইন্সল্যান্ডের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
আমার দুই অকাল কুষ্মাণ্ড ভ্রাতা এখানে আগে থেকেই বসবাস করত। কিন্তু এদের দেখলুম বাঙাল সমাজে তেমন একটা যাওয়া আসা নেই। যাহোক, আল্লাহ ভরসা। উনি জুটিয়ে দিলেন তিন তিনজন অকৃত্রিম আনসার। চঞ্চল ভাই, পলাশ ভাই আর রিয়াজ ভাই। এঁরাই সমাজের উঁচু–নিচু, গণ্যমান্য, ধনী–নির্ধন সবার সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দিলেন।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: dp@prothomalo. com
দেখলুম এখানে বাঙালিত্ব আর বাঙাল সংস্কৃতির রমরমা অবস্থা।
তখন অবশ্য এত বাঙাল ছিল না এ অঞ্চলে। সব মিলে শ দুয়েক হবে। এর মধ্যে আবার দুই গ্রুপ। সিনিয়র গ্রুপ আর জুনিয়র গ্রুপ। সিনিয়র গ্রুপ বয়স্কদের, সবারই একটু ধর্ম কর্মে মন। আর জুনিয়র গ্রুপ একটু সংস্কৃতি মনা। এই যা তফাত।
দ্বিতীয় গ্রুপের কর্ণধার ছিলেন এই তিন আনসার ভাই। এরাই বঙ্গজ আবালবৃদ্ধবনিতার প্রয়োজনে–অপ্রয়োজনে, বিপদে–আপদে, আনন্দ–বেদনায় কাছে থাকেন। এর বাইরে আছেন কিছু ডাক্তার–কোবরেজ। এরা আবার নিজেদের মতো করে গ্রুপ বানিয়ে থাকেন। শুধু রমজান, ঈদ আর পালা–পার্বণে এদের দৃষ্টিগোচর হয়। দু–চারজন সংস্কৃতিমনা কোবরেজ অবশ্য আলাদা। ওনাদের হামেশাই দেখা মেলে।
গোল্ড কোস্টের বাঙালিত্ব আর বঙ্গসংস্কৃতি ধরে রাখার কান্ডারি হলো কয়েকটা পরিবার। এদের জন্যই বঙ্গ সংস্কৃতি, কৃষ্টি–কালচারের ছোঁয়া পাই এই পরবাসে। খোদ বঙ্গদেশে থাকার সময়ও বঙ্গ সংস্কৃতির এত ছোঁয়া পাইনি। পয়লা বৈশাখ, বসন্ত, ভাষা দিবস, নবান্ন, বিজয় দিবস, চৈত্রসংক্রান্তি—সব প্রোগ্রামই হয় এখানে। বাংলার হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—জাত–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সবার জন্য প্রোগ্রাম হয়। ঈদ, রমজান, পূজা, বড়দিন—কোনোটাই বাদ যায় না। ধর্ম যার যার উৎসব সব বঙ্গজ গোল্ড কোস্টারদের।
তাই এদের গপ্প না করলেই নয়।
প্রথমত সঞ্জীবদা। আমিও বলি সঞ্জীবদা, আমার কন্যাও বলে সঞ্জীবদা। উনি বঙ্গজ আপামর সবার ভালোবাসার দাদা। জুনিয়র গ্রুপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট উনি। মানুষের দুঃখে ওনার মন কাঁদে, মানুষের আনন্দে উনি হাসেন। গোল্ড কোস্টবাসী বঙ্গজাতির শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক বিকাশ ওনার ধ্যানজ্ঞান। খেলার প্রতিযোগিতা, ছোটদের ছবি আঁকা, সংগীত শেখা, মাছ ধরা-কোনটাতে উদ্যোগ নেই ওনার? আর বঙ্গজাতির পালা–পার্বণ আর বিনোদনের যাতে কোনো ঘাটতি না হয়, সে জন্য সদা তটস্থ তিনি। যে কেউ কোনো প্রয়োজনে ডাকলে বাকি সবকিছু ফেলে চলে আসবেন উনি। আমি বলি এ যুগের মাস্টারদা সূর্য সেন উনি—বঙ্গ সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছেন। ওনার এ সংগ্রাম চলবেই।
আর পর্দার পেছনে আছেন সোনিয়া ভাবি। বাঙালি সংস্কৃতির এক জীবন্ত মূর্তি। ওনাকে দেখলে মনে হয় যেন রবীন্দ্রনাথের কোনো এক বই থেকে সরাসরি উঠে এসেছেন। হৈমন্তি, কাদম্বিনী, কি বিমলা কি বিনোদিনী—যেকোনো চরিত্রেই ওনাকে বিনা কসরতে চালিয়ে দেওয়া যাবে। সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্ল্যান থেকে শুরু করে সাজানো গোছানো, পরিচালনা দক্ষ হাতে সামলান। নিভৃতে কাজ করে যান। হইচই কম করেন। আমরা কেউ কিছু টেরই পাই না। শাস্ত্রে কহে ‘খালি কলস বাজে বেশি আর ভরা কলস কম’। নিঃসন্দেহে ওনার কলস বঙ্গ সাহিত্য, সংস্কৃতি আর কৃষ্টিতে সমৃদ্ধ। ভাবির কর্তা, মুকিত ভাই, উনিও বহুৎ সংস্কৃতিপ্রেমী। গানবাজনা, সাহিত্য নিয়ে থাকেন। আমার গিন্নিরও খুব পছন্দের এই ভাবিকে।
আর আছেন চঞ্চল ভাই আর চঞ্চলা ভাবি। মানে পাপড়ি ভাবি। টোনাটুনি দম্পতি। এঁরা দুজনই অসম্ভব সংস্কৃতিমনা। এদের বাড়িতে ঢুকলে মনে হয় যেন বঙ্গ সংস্কৃতির জাদুঘর। ঢেঁকি, কুলা, তালপাখা, শাড়ি, চুড়ি থেকে শুরু করে কী নেই ওনার ঘরে? ওনার বাড়িতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষা করে থাকে গোল্ড কোস্টের সবাই। দুজনই খুব দিলখোলা অমায়িক মানুষ। মাঝেমধ্যেই আড্ডাবাজির মজলিস বসে ওনার বাড়িতে। সদা হাস্যোজ্জ্বল এই দম্পতি গোল্ড কোস্টের প্রাণোচ্ছলতার প্রতীক! শুধু প্রাণোচ্ছলতা নয়, ওনারা দুজন বেশ রোমান্টিক কাপলও বটে। এনাদের রোমান্সের ইতিহাস আরেক আরব্য রজনীর সমান কাহিনি। সে আরেক দিন বলব।
বঙ্গের সিনেমাকে অনেকেই নাক সিটকান। তেনারা আসলে বঙ্গ সংস্কৃতিকেই অস্বীকার করেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরের সময়ের সেই কালজয়ী সিনেমাগুলো বঙ্গ জাতি কি করে ভুলে যায়? পিন্টু ভাই আমাদের সেটা মনে করিয়ে দেন। গোল্ড কোস্টে তাই বঙ্গীয় সিনেমা সমাদৃত, কেউ অবজ্ঞা করে না। এই বঙ্গীয় সিনেমার গোল্ড কোস্টের কান্ডারি হলেন পিন্টু ভাই আর জাকিয়া ভাবি। এনাদের বাড়িতে বঙ্গীয় সিনেমা থিমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্যে গোল্ড কোস্টবাসী চাতক পাখির মতো হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। পালা–পার্বণে সারা বাড়িঘর সাজান বঙ্গীয় সিনেমার পোস্টারে। ফ্যাশন সচেতন দুজনকে দেখলে মনে হয় এই বুঝি সিনেমার নায়ক আর নায়িকামাত্র শুটিং করে ফিরলেন।
বঙ্গদেশি সিনেমা আর নাটকের আরেক দিকপাল রিয়াজ ভাই আর ইতি ভাবি। গোল্ড কোস্টের নতুন প্রজন্মের মধ্যে সিনেমা আর নাটকের আগ্রহ তৈরি করেছেন। কচি–কাঁচাদের নাটক আর সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম নিয়ে অনেক পরিশ্রম করেছেন এনারা। দুজনের বাড়ি আবার মিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বৃক্ষ ভালোবাসেন এনারা। বঙ্গদেশি আম, জাম, লিচু, কাঁঠালের সারি সারি গাছ এনাদের বাড়িতে। মাঝেমধ্যে নিজ গাছের ফল বিলান বাঙাল জনতার মাঝে। আমরাও ভাগ পাই মাঝেমধ্যে।
আর সাহিত্যের নিশান ধরে আছেন লিটন ভাই। নিভৃতচারী এই শক্তিমান লেখক ওনার কলমের জাদুতে লিখে যাচ্ছেন তো যাচ্ছেনই। এক নয় দুই নয়, সতেরো খানা বাংলা বই লিখেছেন উনি। অনেক বড় লেখক, পুরস্কার পেয়েছেনও অনেক। শুধু বঙ্গদেশ নয়, ওনার খ্যাতি ছড়িয়ে গেছে কলকাতাতেও। উনি যেখানেই যান, শুধু লিখেন আর লিখেন। গাড়িতে বসে, বাড়িতে বসে, রাস্তার পাড়ে, পার্কে, সমুদ্রের পাড়ে। কোথায় নয়? ওনার বেগম মানে জলি ভাবি সর্বংসহার মতো এই লেখার অত্যাচার সহ্য করে যান মুখ বুঝে। তবে এই দুজনও বহুৎ রোমান্টিক। ব্যাকগ্রাউন্ডে ভালো কোনো দৃশ্য মানে পাহাড় পর্বত, নদী সমুদ্র পেলেই লিটন ভাই হাঁটু গেড়ে বসে প্রেম নিবেদন করেন ভাবিকে। ভাবিও গুন গুন করে গান ধরেন, ‘ওরে আমার রসিয়া বন্ধু রে’। ভাব খানা যেন একবার নয়, দুবার নয়, ভালোবাসি বারবার। জনমে, জনমে। এ জনমে, পর জনমে।
এই পাপড়ি ভাবি, জাকিয়া ভাবি আর জলি ভাবি প্রমুখ। এনারা হলেন আমার বেগমের প্রাণসখী। কর্ত্রীর ইচ্ছেয় কর্ম। এনাদের কর্তারা তাই গোল্ড কোস্টে আমার সবচেয়ে ভালো ইয়ার বন্ধু।
আরও অনেকের গল্পই করা যায়। আছে নতুন প্রজন্ম। এরা বঙ্গদেশে থাকেনি কখনো কিন্তু ভালোবাসে বাংলাকে। আছে ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রী আর ওদের পরিবার। গোল্ড কোস্টে উচ্চশিক্ষার জন্য এসেছে অনেক স্বপ্ন বুকে নিয়ে। সামনে বন্ধুর পথ, দুস্তর পারাবার। যেতে হবে বহুদূর। যাত্রীরা হুঁশিয়ার! এদের সাহস জোগায় সিনিয়ররা। সাহস জোগায় বঙ্গ সংস্কৃতি। সাহস জোগায় বঙ্গজাত অগ্রজেরা।
আর আছে ডাক্তার–কোবরেজরা।
এরা একটু দূরে দূরে থাকে। হয়তো বেশি কর্মব্যস্ত, নয়তো এরা নিজেদের একটু উঁচু জাত মনে করে। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়!
অধমের আয় ইনকাম এদের চেয়ে বেশি বই কম নয়। কিন্তু আমার আর বেগমের হলো সাদাসিধে জীবনযাপনের অভ্যাস। যথেষ্ট অর্থকড়ি থাকলেও দামি একখানা মাসেরাতি গাড়ি কিনতে পারলুম না। এত অর্থ অপচয়ে মন সাই দেয়নি। ব্র্যান্ডের দামি পোশাক পরার অভ্যাসও নেই। বেগমেরও হীরা–জহরতের শখ নেই। তাই উঁচু জাতের সঙ্গে খুব বেশি ভাব হয় না আমাদের। তাই ওনাদের বলি, ‘লা কুম দিনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন’, মানে তোমার ধর্ম তোমার কাছে, আমার ধর্ম আমার।
এসব ভালোমন্দ দিনরাত্রি মিলে আমাদের গোল্ড কোস্টের বঙ্গ সমাজ।
এরা সুখে–দুঃখে একে অপরের পাশে থাকে। বারো মাসে তেরো পার্বণ আর চৌদ্দ উৎসব করে এই পরবাসে এক টুকরো বঙ্গ বানিয়ে নিয়েছে সবাই মিলে। নিজেদের মতো করে।
জয়তু বঙ্গজ, জয়তু বঙ্গ ভাষা, জয়তু বঙ্গ সংস্কৃতি! চলবে...
আগামীকাল পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার গল্প: ৫—বঙ্গজ অস্ট্রেলিয়ানদের দ্বিতীয় প্রজন্ম