কানাডার বরফঢাকা প্রান্তরে এক টুকরা বাংলাদেশ, ম্যানিটোবায় প্রবাসীদের বড়দিন উদ্‌যাপন

ম্যানিটোবায় নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিশেলে বড়দিন উদ্‌যাপন করেছেন কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশিরাছবি: লেখকের পাঠানো

কানাডার হাড়কাঁপানো শীত আর তুষারপাতের শুভ্রতায় ঘেরা ম্যানিটোবা প্রদেশে এবার যেন এক টুকরা বাংলাদেশ ফুটে উঠেছিল। বেথলেহেম থেকে যাত্রা শুরু করা খ্রিষ্টধর্ম আজ বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত হলেও প্রবাসের মাটিতে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিশেলে বড়দিন উদ্‌যাপনে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশিরা।
প্রতিবছরের মতো এবারও ম্যানিটোবায় বসবাসরত অধ্যাপক রোমেল হালদার ও তাঁর পরিবারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ বড়দিন উৎসব। তবে এই আয়োজন কেবল একটি বিশেষ ধর্মের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি; এটি পরিণত হয়েছিল সব ধর্মের প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক মিলনমেলায়।

আয়োজন সব ধর্মের প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল
ছবি: লেখকের পাঠানো

পাশ্চাত্য ও দেশীয় সংস্কৃতির সেতুবন্ধ

ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় বড়দিন উদ্‌যাপনের ধরন সাধারণত কনসার্ট বা পশ্চিমা ধাঁচের খানাপিনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ম্যানিটোবার এ আয়োজনে দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। সেখানে বাইবেল পাঠের পবিত্রতার সঙ্গে মিশে ছিল রবি ঠাকুরের গান ও বাঙালি ঢঙের কীর্তন। আগত অতিথিরা জানান, দেশের কৃষ্টিকে হৃদয়ে ধারণ করেই তাঁরা এই উৎসবে শামিল হন, যা কানাডীয় সংস্কৃতির চেয়ে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।

ম্যানিটোবায় বসবাসরত অধ্যাপক রোমেল হালদার ও তাঁর পরিবারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ বড়দিন উৎসব
ছবি: লেখকের পাঠানো

মাছে-ভাতে বড়দিন

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল খাঁটি দেশি রসনা। সাদা চামড়ার মানুষদের দেশে বড়দিনের টার্কি বা হ্যামের ভিড়ে প্রবাসীরা এদিন তৃপ্তি খুঁজে পেয়েছেন দেশি মাছ, মুরগি, পোলাও আর মিষ্টি-দধিতে। এর সঙ্গে বাড়তি পাওনা হিসেবে ছিল রকমারি পিঠা-পুলি, যা অতিথিদের ক্ষণিকের জন্য হলেও ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের গ্রামবাংলার হিমেল সন্ধ্যায়।

দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

প্রার্থনা বিশ্বশান্তি ও দেশের জন্য

অনুষ্ঠানে গির্জার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়। প্রার্থনায় উঠে আসে বিশ্বশান্তি, মানবকল্যাণ এবং বিশেষ করে কানাডা ও বাংলাদেশের মঙ্গলের কথা। আয়োজক রোমেল হালদার বলেন, ‘আমরা দেশ ছেড়ে দূরে থাকলেও আমাদের শিকড় তো বাংলাদেশেই। কানাডায় আমরা সবাই মিলেমিশে বড়দিনের আনন্দ ভাগ করে নিতে চেয়েছি, যেখানে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই বাংলাদেশি পরিচয়ে এক হতে পারি।’

লেখকের সঙ্গে অন্যরা
ছবি: লেখকের পাঠানো

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা বলেন, বিদেশের মাটিতে বসে এমন বাংলাদেশি আবহে বড়দিন উদ্‌যাপন করাটা তাঁদের জন্য এক পরম পাওয়া। কীর্তনের সুর আর রবীন্দ্রনাথের গানে মুখর এই বড়দিনের সন্ধ্যা হয়ে উঠেছিল যেন এক টুকরা একাত্তরের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।