ফ্রান্সে বাংলাদেশি বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান সম্পন্ন
শত শত পুণ্যার্থীর সমাগমে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের অদূরে বাংলাদেশি নিজস্ব বিহার কুশলায়ন বুড্ডিস্ট মেডিটেশন সেন্টারের দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রোববার (১২ অক্টোবর ২০২৫) বিকেলে দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব বিহারের নিকটবর্তী সালন দো সাবরিনা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। কুশলায়ন বুড্ডিস্ট মেডিটেশন সেন্টারের দায়ক-দায়িকাদের আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে দূরদূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে শীলগ্রহণ, বুদ্ধপূজা, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, কল্পতরু দান, সবশেষ বহু আকাঙ্ক্ষিত কঠিন চীবর দানসহ নানা দান কার্য সম্পাদন করা হয়। এ সময় সব প্রাণীর মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনাও অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিল ফ্রান্সে প্রথম দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দান।
বিকেলে বিহারের নিকটবর্তী সালন দো সাবরিনা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কঠিন চীবর দানসভায় সভাপতিত্ব করেন ফ্রান্স বুদ্ধগয়া প্রজ্ঞাবিহারের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ মহাথের, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্স ধম্মাচাক্কা বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত কে আনন্দ নায়ক থের, প্রধান ধর্মালোচক ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ওয়াট থাই জ্ঞানবিরীয়া, কোলকাতা বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত জ্ঞানালংকার মহাথের, বিশেষ ধর্মালোচক ছিলেন ফ্রান্স বিশ্বশান্তি ধ্যানকেন্দ্রের অধ্যক্ষ বিদ্যাবারিধী বরসম্বোধি মহাথের, উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কুশলায়ন বুড্ডিস্ট মেডিটেশন সেন্টারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত জ্যোতিসার ভিক্ষু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বার্মিজ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত উ কুমারা ছেয়াদ, ভদন্ত বিজয়ানন্দ মহাথের, ভদন্ত বিমলানন্দ থের, ভদন্ত আনন্দ থের, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সর্বজনীন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত বুদ্ধপ্রিয় থের, ভদন্ত অপ্রমাদ ভিক্ষু, ভিক্ষুনী সংঘামিত্রা থেরি প্রমুখ।
অনুপম বড়ুয়া অনু ও প্রীতি কণা বড়ুয়ার সঞ্চালনায় পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন জগৎ বড়ুয়া উদয়ন, স্বাগত বক্তব্য দেন সুমেষ বড়ুয়া, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সুধীর বড়ুয়া।
বক্তারা বলেন, চীবর দান ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৌদ্ধদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দান জন্ম-জন্মান্তরে সুফল প্রদায়ী। প্রতিটি বৌদ্ধবিহারে বছরে একবার চীবর দান করা হয়। এদিন বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ গৃহীরা ভিক্ষু সংঘকে চীবর দান করেন। ভিক্ষু সংঘও তাদের বিনয়-বিধানের সব নিয়ম অক্ষুণ্ন রেখে পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে এ চীবর গ্রহণ ও ব্যবহার করে। কঠিন চীবর দানের বহুধা গুণের কথা স্মরণে রেখে প্রত্যেক বৌদ্ধ জীবনে অন্তত একবার হলেও চীবর দান করার মানসিকতা পোষণ করেন।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
অনুষ্ঠানে ফ্রান্সে বসবাসরত কয়েকটি দেশের নাগরিকেরা এ উৎসবে অংশ নেন। সবশেষে রণজিৎ বড়ুয়ার পরিচালনায় প্রমত বড়ুয়ার সঞ্চালনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। তবলায় সংগত করেন শাপলু বড়ুয়া চৌধুরী, কি–বোর্ডে অমিত বড়ুয়া। স্থানীয় শিল্পীরা এতে অংশ নেন।
উল্লেখ্য, গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় মহাউপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা এবং সুতা রং করে কাপড় বুনে তা সেলাই করে চীবর (ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র) দান করে এই কঠিন চীবর দানের সূচনা করেন প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। এই পদ্ধতিতে দান করলে কায়িক, বাচনিক মানসিকভাবে অধিক পরিশ্রম হয় এবং অধিকতর পুণ্য লাভ হয় বলে বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।