বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে যা করছে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে জনগণকে সচেতন করে ভিন্ন ভিন্ন পদক্ষেপের সঙ্গের শর্তও বেঁধে দিচ্ছে। যুদ্ধের ফলে উৎপাদন ঘাটতিতে পড়ে কোনো কোনো দেশ প্রয়োজনকেও কাটছাঁট করতে নাগরিককে উৎসাহী করছে। এ তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও আছে অস্ট্রেলিয়া সিঙ্গাপুর, জার্মানি, জাপান, পাকিস্তান, স্পেন ও ইতালির মতো দেশ।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের বৃহত্তম কয়লা রপ্তানিকারক, তবে এর ৮ মিলিয়ন নাগরিককে ব্ল্যাকআউট এড়াতে দিনে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্যবহার না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে, জ্বালানিমন্ত্রী ক্রিস বোয়েন রাজ্যের নাগরিকদের প্রতি সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আহ্বান জানিয়েছেন।
মন্ত্রী জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যদি আপনার নির্দিষ্ট পণ্য একান্ত ব্যবহার দরকার হয়, তবে সেগুলো সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চালাবেন না। যে নিউ সাউথ ওয়েলসের পাওয়ার গ্রিড সন্ধ্যায় তীব্র চাপের মধ্যে থাকে, তবে জনগণ সঠিক সময়ে সহায়তা করলে ব্ল্যাকআউট বন্ধ করা সম্ভব হবে।
সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুরের এনার্জি মার্কেট অথরিটি (ইএমএ) জ্বালানি–সংকট এড়াতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। ইএমএর মতে, যদিও আমরা বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য থেকে গ্রাহকদের বাঁচাতে পারি না, বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রভাবিত না হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
সিঙ্গাপুরের ৯৫ শতাংশ বিদ্যুৎ প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির মাধ্যমে উত্পাদিত হয়, তবে ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং দেশগুলোর জ্বালানি মজুত সরবরাহের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ফেলতে পারে। এ লক্ষ্যে, ইএমএ নাগরিকদের তাদের বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে এবং শক্তি-সাশ্রয়ী পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বানসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
জার্মানি
জার্মানির নাগরিকদেরও তাদের বিদ্যুৎ খরচ কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এটি বিভিন্ন কারণে রাশিয়া কর্তৃক জার্মানিতে সরবরাহ করা গ্যাসের পরিমাণ ৬০ শতাংশ কমে এসেছে। ফলে অতীতের মতো সমানতালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এ কারণেই জার্মানির অর্থনীতিমন্ত্রী রবার্ট হেইবেক টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন, এনার্জি সঞ্চয় করার সময় এসেছে। আপনার প্রতি কিলোওয়াট সাশ্রয় পরিস্থিতির উন্নতিতে সহায়তা করবে বলে জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে সচেতন করেন। তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করি।’
জাপান
জুনের শুরুতে, জাপান নাগরিক এবং সংস্থাগুলোকে যতটা সম্ভব বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য অনুরোধ করেছিল কর্তৃপক্ষ যাতে করে গ্রীষ্মের সময় জ্বালানি–সংকটের মুখোমুখি না হতে হয়। জাপান সরকার নাগরিকদের কাছে সচেতন আবেদন জানিয়েছিল, যদি আমরা বিদ্যুৎ সঞ্চয় না করি, তাহলে শুধু রাজধানী টোকিওতেই ২ থেকে ৩ মিলিয়ন পরিবার রাত ৮টার পরে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে পারে।
সরকারের জারি করা একটি বিবৃতিতে নাগরিকদের প্রয়োজনকেও ছোট করতে তাঁদের বাড়িতে শুধু একটি টিভি দেখার এবং এ সময়ের মধ্যে অন্যান্য কক্ষে এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার না করার আহ্বান জানানো হয়েছে, তাতেও যদি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হয়। জাপানে জ্বালানি–সংকটের প্রধান কারণ হলো ফুকুশিমা ট্র্যাজেডির পর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পুনর্বাসনে ধীরগতি এবং বিষাক্ত গ্যাসের নির্গমন কমাতে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া।
স্পেন
তেল ও গ্যাসের ওপর রাশিয়ার নির্ভরতা কমাতে স্পেনে মে মাসে বিভিন্ন জ্বালানি ব্যবহার সাশ্রয়ী করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে, সরকারি কর্মচারীদের এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার না করে যতটা সম্ভব বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যদি অফিসে এয়ারকন্ডিশনার একান্ত চালাতেই হয়, এ ক্ষেত্রে সত্য হলো দিনের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রির বেশি থাকতে হবে।
ইতালি
রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে ইতালিও এপ্রিল মাসে সরকারি অফিস ও ভবনে এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পাকিস্তান
পাকিস্তানে জ্বালানি–সংকট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে, যার আওতায় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সারা দেশে বাণিজ্যিক ফিডার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দিনের বেলায় বাণিজ্যিক ফিডারে কোনো লোডশেডিং থাকবে না। এটি কেবল পাকিস্তানেই ঘটছে না, বাস্তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বর্তমানে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। এ জন্য দেশে দেশে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বা জনগণকে কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে।