জ্ঞানের নক্ষত্র শুভাগত চৌধুরী স্যারের বিদায়
ডা. শুভাগত চৌধুরী স্যারের ছাত্রী আমি। সময়টা ১৯৯৩ সাল। সদ্য মেডিকেলের ক্লাস শুরু করেছি, বায়োকেমিস্ট্রির মতো কঠিন একটা বিষয় লেকচার গ্যালারিতে কী সুন্দর ও সহজভাবে স্যার বুঝিয়ে দিতেন। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম। সে শিক্ষা কাজে লেগেছে আজীবন। স্যার একসময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হলেন। বরেণ্য এ মেডিকেলকে তিনি অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেলে পড়তে যাওয়ার আগেই মায়ের কাছে শুনেছিলাম স্যারের মা ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর (একজন বরেণ্য লেখক) ভক্ত আমার মা। স্যারের ব্যক্তিত্ব অসাধারণ, যাঁর কাছে তাঁর পরিবারের সম্মান আকাশচুম্বী, যোগ্য মায়ের সুযোগ্য সন্তান স্যারের মতো মানুষের অসম্ভব বেশি প্রয়োজন দেশে। লন্ডন থেকে পিএইডডি করে এসেও দেশে আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য ফিরে এসেছিলেন আপনি, একজন মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে।
যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরপর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে স্যারের লেখা পড়তাম। তারপর স্যারের ফেসবুকে যুক্ত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল বছর কয়েকের জন্য। মাত্র তিন দিন আগে স্যারের জন্মদিন ছিল। জীবনের শেষ লেখাতেও মানুষ কীভাবে সুস্থ থাকবেন, সেসব লিখে গেছেন।
সর্বশেষ লেখাতেও লিখে গেছেন একজন চিকিৎসকের বেতন কত হওয়া উচিত। স্যার শুধু একজন চিকিৎসকে দেখেননি, দেখেছেন একজন মানুষ হিবেবে, যাঁর পরিবার–সন্তান নিয়ে মানবসেবা করতে গিয়ে জীবনের সবটুকু দিয়ে দিতে হয়, জীবনধারণের সামান্য রসদ যুগোপযোগী না দিলে একজন চিকিৎস এ পেশায় কীভাবে টিকে থাকবেন?
স্যারের অসংখ্য বই আছে—কীভাবে সুস্থ জীবন যাপন করা যাবে—এ বিষয়ে। স্বাস্থ্যকর ঘরোয়া রান্না ও ব্যায়ামের ওপর কত কত লেখা তিনি লিখেছেন। লিখেছেন ডায়াবেটিসসহ অনেক ক্রনিক রোগে নিয়ন্ত্রণ করার কথা নিয়ে। কানাডায় মেয়ের কাছে গিয়ে বছর কয়েক আগে একবার অনেক অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন স্যার। ভেবেছিলেন আর হয়তো ফিরবেন না।
স্যার ফিরলেন, দেশেই চিকিৎসা নিলেন জীবনের বাকি কয়টা বছর নিজের ছাত্রছাত্রীদের কাছে, যাঁদের সুনাম তিনি অসংখ্যবার করেছেন। লিখলেন ক্যানসারের সঙ্গে বসবাস বিষয়ে বই। একটা ক্যানসার হাসপাতাল করার ভীষণ ইচ্ছা ছিল স্যারের। আর আজ একটু আগে দূর আকাশের তারা হয়ে গেলেন স্যার আমার মতো দেশি–বিদেশি অনেক ছাত্রছাত্রীর জীবনে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে।
ওপারে ভালো থাকবেন, স্যার। আপনার অভাব জীবনে পূরন হবে না।
চিকিৎসক শুভাগত চৌধুরী আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল আটটায় মারা গেছেন। শুধু চিকিৎসক নন, লেখক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি ছিল। প্রথম আলোয় নিয়মিত লিখতেন। ৫০টির বেশি বই লিখেছেন। অ্যাসোসিয়েশন অব নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়াটেশিয়ানস ফর সোশ্যাল সার্ভিসেসের (এএনডিএসএস) উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে এই সংস্থার পক্ষ থেকে শোক জানানো হয়েছে।
*লেখক: চিকিৎসক, ফারহানা আহমেদ (মেডিসিন বিশেষজ্ঞ)