রাতের রোমান্টিক চাঁদ ক্ষতবিক্ষতের অপেক্ষায়

একসময় পৃথিবীর পরাশক্তিদ্বয়ের স্নায়ুযুদ্ধে হাজারো মানুষের জীবন দিতে হয়েছিল। নব্বই দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ধানে সেই স্নায়ুযুদ্ধ অনেকটা অস্তমিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে পুঁজিবাদ ও কমিউনিজমের আদর্শিক লড়াই না থাকলেও অর্থনৈতিক লড়াইয়ের এক ভয়াবহ দাবানল দ্রুত বেগে ছুটে আসছে। এ লড়াই এখন ভূমণ্ডল ছাড়িয়ে নভোমণ্ডলে গিয়ে পৌঁছাবে এবং এর প্রথম শিকার হতে যাচ্ছে আমাদের জ্যোৎস্না দেওয়া আলোকিত চাঁদ। এ লড়াইয়ের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড়েরা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো একদিকে, আর চীন, রাশিয়া, সম্ভবত ভারত এর বিপরীতে। এর মধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মেরুকরণে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কয়েক দিন আগে নতুন বিদেশ নীতির ঘোষণা দিয়ে মিত্রদের একটা সম্ভাব্য তালিকাও দিয়েছিলেন।

গত ১১ সেপ্টেম্বর রয়টার্স রিপোর্টে জানায়, চীন-ভারতের বিতর্কিত লাদাখ অঞ্চলে উভয় দেশই তাদের মোতায়েন করা সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে। উজবেকিস্তানের সমরখন্দে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন, চীনের সি চিন পিং ও ভারতের নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ হয়েছে। এদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া কিছুটা পিছুটান দেওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো তাদের স্ট্র্যাটেজি কাজ করছে বলে আরও সাহায্যে নিয়ে এগিয়ে আসছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে তাইওয়ান পাঠিয়ে চীনকে প্রভোক করার চেষ্টা করেছিল। চীন ব্যাপক সামরিক মহড়া করে তার পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আবারও ছয় কংগ্রেসম্যানকে তাইওয়ানে পাঠায়। এতেও চীন সংযমের পরিচয় দিয়েছে। মোটকথা, বিশ্ব পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমেরিকার এক সাংবাদিক জন অলিভার বলেছেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা অনেক বেশি এবং যদি যুদ্ধ লেগেই যায়, তাহলে কে হারবে বা কে জিতবে, তা দেখার লোক পাওয়া যাবে না।

চাঁদের প্রসঙ্গ

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ চীনের গ্লোবাল টাইমসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, চীনের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আগামী ১০ বছরে চাঁদে তিনটি বাণিজ্যিক নভোযান পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২০ সালে চীন তাদের চেঞ্জ-৫ নভোযান চাঁদে প্রেরণ করে যে ক্রিস্টাল চন্দ্রশিলা (যাকে চীনের বিজ্ঞানীরা Changsite–Y বলে) নিয়ে আসে, তাতে তারা ফসফেট মিনারেল পায়। আর এ মিনারেলে হিলিয়াম-৩ রয়েছে, যা আগামী দিনে এনার্জী জোগান দেবে বলে তাদের বিশ্বাস। এই মিনারেলের খবর তার আগে শুধু আমেরিকা ও রাশিয়াই জানত। চীন জানার পর আমেরিকা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা নতুন করে চাঁদ মিশনের ঘোষণা দিয়ে নতুন নভোযান আর্টেমিস-১ তৈরি করে দুবার উৎক্ষেপণের চেষ্টা করে। কারিগরি ত্রুটি বা অন্য কোনো কারণেই হোক তারা তা উৎক্ষেপণ করতে পারেনি। এদিকে ভারতসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ও চাঁদ মিশনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। এখন ধারণা করুন, এই দেশগুলো যদি আমাদের দেশের ‘বালুখেকো’দের মতো চাঁদ খোদাই করে শিলা সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, তাহলে কি হবে মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের? কোনো বস্তুর ভর মাধ্যাকর্ষণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া চাঁদে যে শুধু হিলিয়াম-৩ আছে, তার সত্যতাই–বা কী? সেখানে হয়তো আরও কোনো মূল্যবান ধাতব পদার্থ রয়েছে, যা পৃথিবীতে খুবই মূল্যবান, কিন্তু তারা তা বলছে না। মূলকথা, সেখানে যা–ই থাকুক, তা সংগ্রহের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষ, পরিবেশবাদী বা নিরপেক্ষ বিজ্ঞানীরা কি পারবেন আমাদের সবার প্রিয় চাঁদকে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে?