খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৩০ বছর পূর্তি উদ্যাপন যুক্তরাষ্ট্রে
সময় পেরিয়েছে ৩০টি বছর। কিন্তু হৃদয়ের বন্ধন কখনোই পুরোনো হয় না, বিশেষ করে যখন সেই বন্ধনের শিকড় শৈশব, যৌবন আর স্বপ্নের দিনে গাঁথা থাকে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (বিজিই) ডিসিপ্লিনের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য ২০২৫ সালের ১৮ ও ১৯ জুলাই দুই দিনের মিলনমেলা ছিল এমনই এক অন্তরঙ্গ, হৃদয়ছোঁয়া অভিজ্ঞতা—যেখানে স্মৃতি, ভালোবাসা আর আশা ভেসে বেড়িয়েছে আবেগের ঢেউয়ে।
প্রবাসে শতাধিক অ্যালামনাই পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নানা শহর, এমনকি ইউরোপের নরওয়ে থেকেও অংশ নিয়েছেন এই প্রাণের উৎসবে। জুলাইয়ের ১৮ ও ১৯ তারিখ—এই দুই দিন ছিল প্রাক্তনদের জন্য এক আন্তরিক, আবেগময় ও আনন্দভরা স্মৃতির পসরা।
১৮ জুলাই সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় আগমন ও নিবন্ধন। ১৮ জুলাই দুপুরে পেনসিলভানিয়ার বিখ্যাত পিস ল্যারি পার্কে বারবিকিউ পার্টি যেন প্রকৃতির মাঝে পুরোনো দিনের গল্প, হাসি আর স্মৃতির জোয়ারে মুহূর্তগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। শিশুদের ছুটোছুটি, পরিবারের আন্তরিকতা আর বন্ধুর নিঃশর্ত আড্ডা মিলিয়ে পিকনিকের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান ফেরে ইনডোর ভেন্যুতে। এই পর্যায়ে ছিল নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা—গান, কবিতা, স্মৃতিচারণা আর ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা বিনিময়। অতিথিরা ভাগাভাগি করেছেন প্রবাসী জীবনের গল্প, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর স্মৃতি কিংবা হৃদয়ের টান। শেষে রাতের খাবারে দেশীয় স্বাদের হরেক আয়োজন—সভ্যতা যেন একমুহূর্তে ফিরে যায় মাটির গন্ধ খুঁজতে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের ৩০ বছর পূর্তি উদ্যাপন যুক্তরাষ্ট্রে
এই সুন্দর আয়োজনের পেছনের কারিগর ছিলেন ৯৫ ব্যাচের মোস্তফা শরীফ লাভলু, ২০০০ ব্যাচের নাজমুল সোহাগ ও মামুনুন হক—তাঁদের নিবেদন আর পরিচালনায় স্বতঃস্ফূর্ত ও উদ্যমী একদল প্রাক্তন শিক্ষার্থী সফল করে তুলেছেন পুরো অনুষ্ঠান। প্রস্তুতি ও সংগঠনের প্রতিটি ধাপেই তাঁদের আন্তরিকতা ছড়িয়ে ছিল। আর পুরো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন ২০০০ ব্যাচের নেসার উদ্দিন অভি এবং ২০০০ ব্যাচের সোহাগের সহধর্মিণী খুশি। তাঁদের প্রাণবন্ত ও সাবলীল উপস্থাপনা মিলনমেলাকে করে তুলেছিল আরও প্রাণচঞ্চল ও উৎসবমুখর।
অনুষ্ঠানের প্রতিটি মুহূর্তে অনুরণিত হয়েছে এই উপলব্ধি—কিছু সম্পর্ক কখনো পুরোনো হয় না। এখানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা শুধু একজন পেশাজীবী বা গবেষক নন, তাঁরা প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকড় থেকে বেড়ে ওঠা এক মূল্যবোধ, সৌহার্দ্যবোধের অংশ। কারও মতে, ‘বিজিই কেবল পেশাগত দীক্ষা দেয়নি, দিয়েছে জীবনবোধ, বন্ধুত্ব, আর সহানুভূতির পাঠ।’
এবারের মিলনমেলায় অ্যালামনাইদের আলোচনায় উঠে এসেছে ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী আরও সংগঠিত নেটওয়ার্ক গড়া, স্কলারশিপ এবং গবেষণার মতো উদ্যোগ। সবাই একমত, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একজন শিক্ষার্থীর বা পেশাগত জীবনের অংশ নয়—এটি জীবনভর গৌরবের, ভালোবাসার ও নিজেদের পরিচয়ের গর্বিত ইতিহাস।
দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে থেকেও এ আয়োজন যেন জীবনের এক অনিঃশেষ সংযোগের প্রতিচ্ছবি—শিক্ষা ও সম্পর্কের শক্তি, ভালোবাসা আর মিলনের উদাহরণ। বিজিই ডিসিপ্লিনের ৩০ বছর পূর্তি উদ্যাপন হয়ে থাকল স্মৃতি, ভ্রাতৃত্ব আর গর্বের অনন্য এক উপাখ্যান।
*লেখক: শাহরিয়াজ ফারজানা খুশি, উইলো গ্রোভ, ফিলাডেলফিয়া, পেনসিলভেনিয়া, আমেরিকা
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]