নেপালের চন্দ্রগিরি হিল ভ্রমণ

চন্দ্রগিরি হিলের দ্বারপ্রান্তে যখন এসে পৌঁছালাম, তখন প্রায় দুপুর। চন্দ্রগিরি হিল হিন্দু পুরাণের এক পৌরানিক স্থান। কাঠমান্ডু থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ১৬ কিলোমিটার দূরে চন্দ্রগিরি হিল।

সম্ভবত চন্দ্রগিরি হিলের পৌরাণিক তাৎপর্য বিবেচনা করে নেপাল সরকার চন্দ্রগিরি দর্শনে কেব্‌ল কার নির্মাণ করেন। চন্দ্রগিরির উচ্চতা ৮২৬৮ ফিট। পৌরাণিক যুগে এই উচ্চতা কীভাবে পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের মাথায় ভালেশ্বর মন্দির গড়ে উঠেছিল, সে তথ্য অজ্ঞাত। যেমন অজ্ঞাত মিশরের সুউচ্চ পিরামিডগুলোয় বিশাল বিশাল পাথর স্থাপন। সে যাই হোক, কেব্‌ল কারের যাত্রাটি মোটামুটি ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। পাহাড়ের উচ্চতায় যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১৪ মিনিট, সেটি আবার নির্ভর করে বাতাসের গতির ওপর। কেব্‌ল কার থেকে কাঠমান্ডু উপত্যকা, প্রকৃতিক দৃশ্য ও অন্নপূর্ণা থেকে এভারেস্ট পর্যন্ত হিমালয় পর্বতমালার চমৎকার দৃশ্য অবলোকন করা যায়। কেব্‌লওয়ে সিস্টেমে ৩৪টি গন্ডোলা রয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় ১০০০ জন যাত্রী বহনে সক্ষম।

আমাদের নেপাল ভ্রমণের তৃতীয় দিনে কাঠমান্ডু থেকে বান্দিপুর যাওয়ার পথে চন্দ্রগিরিতে যাওয়া। নেপাল ট্যুর এজেন্টের দেওয়া চালকসহ একটি জিপ সর্বক্ষণ আমাদের সঙ্গে ছিল। চালক ভুলে চন্দ্রগিরি পার হয়ে আবার ফিরে আসায় কিছুটা সময় চলে যায়। চন্দ্রগিরি হিলের দ্বারপ্রান্তে যখন এসে পৌঁছালাম তখন প্রায় দুপুর। এবার কেব্‌ল কার স্টেশনে টিকেট কেটে উপরে ওঠা। স্টেশনটি আধুনিক বিধিব্যবস্থা সম্পন্ন। টিকিটের বিভিন্ন দাম। সার্ক দেশভুক্ত দেশগুলোর জন্য জনপ্রতি যাতায়াত ১ হাজার ১২০ নেপালি রুপি। আর সার্ক বহির্ভূত দেশগুলোর জন্য ১ হাজার ২৮০ নেপালি রূপি। নেপালি রূপি ও বাংলাদেশি টাকার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই, ৮০ টাকায় নেপালি ১০০ রূপি পাওয়া যায়।

আমরা চারজন। চারটি টিকেট নেওয়া হল। চারটির মধ্যে তিনটি সার্ক আর সার্কের বাইরে একটি। একটির পর একটি স্বয়ংক্রিয় কেব্‌ল কার আসছে আর যাত্রীরা উঠে যাচ্ছেন। আমরাও একটি কারে উঠে গেলাম।

আমরা অর্থৎ তাহমিনা আলিম, হাবিবুল্লাহ, রেহানা হোসেন ও আমি। তাহমিনা ও হাবিবুল্লার এ প্রথম বিদেশযাত্রা, প্রথম বিমানযাত্রা আর আমাদের সবার প্রথম কেব্‌ল কারযাত্রা, তাই সবাই উত্তেজিত। কেব্‌ল কার ধীরে ধীরে ওপরে উঠছে, দীর্ঘ উচ্চতায় নিচের বাড়িঘর, গাছপালা, মানুষজন সব ছোট হয়ে আসছে।

এত উচ্চতায় ভয় হওয়া স্বাভাবিক। আমাদের পাশ দিয়ে কয়েকটি কেব্‌ল কার নিচে নেমে গেল। কয়েকটি ওপরে উঠছে যাত্রী ও রেস্তোরাঁর রসদ নিয়ে। যাত্রীদের সুবিদার্থে পাহারের মাথায় একটি রেস্তোরাঁ আছে।

পাহারের মাথাটি অনেকটা সমতল। অনেক দর্শনপ্রার্থী। আমাদের আগে অনেকে এসেছেন, পরে এলেন আরও অনেকে। পাহারের চারদিক রেলিং দিয়ে ঘেরা। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ, আকাশ নীল। অন্নপূর্ণা থেকে এভারেস্ট পর্যন্ত হিমালয় পর্বতমালার চমৎকার দৃশ্য।