যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন: জয় পরাজয় নির্ধারণে অন্যতম রাজ্য মিশিগান
২০২৪ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো জয়–পরাজয় নির্ধারণ করবে বলে ইতিমধ্যেই সংবাদ শিরোনাম হয়েছে, সাতটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে মিশিগান অন্যতম। মিশিগানের ১৫টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১২টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্যে ৯টিতে যে দল মিশিগানে জয়লাভ করেছে, তারাই হোয়াইট হাউসে গিয়েছেন। তাই দুই দলই কোমর বেঁধে লড়ছে মিশিগানে জিততে। সাধারণ ভোটারদের একটা ধারণা মিশিগানে যিনি জিতবেন, তিনিই হবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। মিশিগানের ভোটারেরা এবার নির্বাচনে যে বিষয়গুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেগুলো হচ্ছে অর্থনীতি, অভিবাসন, গণতন্ত্রের হুমকি, স্বাস্থ্য, হাউজিং, শিক্ষা, অপরাধ, গর্ভপাতবিষয়ক আইন। এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও মিশিগানবাসীরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মিশিগানে ট্রাম্প ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। অন্যদিকে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১ লাখ ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বাইডেন জিতেছিলেন। তবে এবারের নির্বাচনে ফলাফলে ভিন্নতা আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
জনমত জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তা মিশিগানে খুব কাছাকাছি, যা যেকোনো সময় যে কারোরই পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে পারে। গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক নির্বাচনে ১ লাখেরও বেশি ভোটার কাউকে ভোট দেননি। তাঁরা অনিশ্চিত (Uncommitted) বিকল্পটি বেছে নিয়েছিলেন। অনুমান করা হচ্ছে, ডেমোক্রেট তথা বাইডেনের ইসরায়েল নীতি অর্থাৎ গাজায় যুদ্ধ নিয়ে ভোটারেরা এ অবস্থান নিয়েছেন। মিশিগানে আরব–আমেরিকানদের ভোট প্রেসিডেন্ট ইলেকশনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। এ দিকে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ইসরায়েলকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের এই বক্তব্যে মিশিগানে আরব–আমেরিকানরদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বেড়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া মিশিগানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও ডেমোক্রেটদের ইসরায়েল নীতি, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থন কমছে ও ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতি বেড়েছে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প মিশিগানে জিতেছিলেন, এবার এখানের ভোটারদের কাছে টানতে তিনি একাধিকবার মিশিগানে এসেছেন। এ দিকে গত কয়েকদিন মিশিগানপ্রবাসী বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির বাংলাদেশিদের সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বললে তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেউ কেউ জানান, তাঁরা আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। কারণ হিসাবে তাঁরা উল্লেখ করেন, গত টার্মে যখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন সারা বিশ্বে কোনো যুদ্ধ ছিল না, যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছেন। সে সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ভাল, কাজকর্মের সংস্থান ছিল, সীমান্ত নিরাপত্তা ছিল, অবৈধ অভিবাসী আগমন সর্ব নিম্ন পর্যায়ে ছিল, দেশের বেকারের সংখ্যা ন্যূনতম ছিল। সাংবাদিক মাহমুদুল হক লিটু বলেন, ‘এবার ভোট আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেবো। কারণ, আমি মনে করি ট্রাম্প সত্যবাদী ও যা করবে সরাসরি বলবে, বতর্মান সরকারের মতো সামনে বলবে একটা আর ভেতরে করবে আরেকটা এ রকম নয়। আমরা সাধারণ মানুষ রাজনীতি বুঝি না, ট্রাম্প এলে দ্রব্য মূল্য, কর্মসংস্থান, শেয়ারবাজারসহ অর্থনীতি ভালো থাকে যা বিগত সময় ছিল, পাশাপাশি আমি বা আমাদের কমিউনিটি সুরক্ষিত থাকবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, তিনি কমলা হ্যারিসকে ভোট দেবেন। কারণ, তিনি ডেমোক্রেট দলকে ভালোবাসেন। সব সময় এই দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে আসছেন—সেটা স্থানীয় বা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যেটাই হোন না কেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আমরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হবেন কমলা হ্যারিস, তাঁর নেতৃত্বে আমরা এক নতুন আমেরিকা দেখতে পাব।’
একজন নারী ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি ট্রাম্পকে ভোট দেব। আমি মনে করি তিনি আমেরিকান অর্থনীতির জন্য ভালো। তিনি নিজেকে একবার প্রমাণ করেছেন। প্রত্যেক মানুষের ভালো দিক আছে এবং খারাপ দিকও আছে কিন্তু আমি মনে করি তিনি সব সময় আমেরিকানদের জন্য আগে চিন্তা করেন। আপনি যদি আপনার দেশকে শক্তিশালী করতে না পারেন, তাহলে আপনি কীভাবে অন্যদের সাহায্য করবেন?’
একজন পেশাজীবি বলেন, ‘ডেমোক্রেটরা সব সময়ই অভিবাসীদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। তা ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও কল্যাণমুখী কাজে অবদান রাখেন। তাই আমি কমলা হ্যারিসকে ভোট দেব।’
কমিউনিটি নেতা ও বিশিষ্ট আবাসন ব্যবসায়ী বিজিত ধর মনি বলেন, ‘আমি ট্রাম্পকে ভোট দেব। কারণ, তার শাসনামলে কোন যুদ্ধ ছিল না, যুদ্ধে বড় বড় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, জীবনযাপন ব্যয় বৃদ্ধি পায়।’
কবি ও গীতিকার ইশতিয়াক আহমেদ রুপু বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া উচিত, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মানে বিশ্বের প্রেসিডেন্ট, কমলাকে মনে হচ্ছে তিনি এখনো সেই গুরুদায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।’
এ ছাড়া কেউ কেউ বলেছেন এখনো তাঁরা কাকে ভোট দেবেন, ঠিক করেননি। এ দিকে মিশিগানের হ্যামট্রাম্যাক শহরের মেয়র আমির গালিব আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি ফেসবুক ও এক্সে জানিয়েছেন, ট্রাম্প একজন নীতিবান মানুষ, তাঁর বিভিন্ন নীতি, পছন্দগুলো আমি সঠিক মনে করি, যার জন্য আমি তাঁকে সমর্থন করছি। আশা করি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন।’
আমির গালিব একজন নির্বাচিত মেয়র, তাঁর প্রচুর অনুসারী রয়েছেন। তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন করায় তাঁর অনেক অনুসারী তাঁকে অনুসরণ করবেন বলে মনে করে অভিজ্ঞমহল।