আজ মায়াবীর বিবাহবার্ষিকী
সকালবেলাটা খুবই প্রিয় মায়াবীর, একান্তই নিজের। সকালের নিত্যকাজ সম্পন্ন করে এক কাপ চা হাতে নিয়ে শোবার ঘরে এসে সোফায় হেলান দিয়ে বসেছে। সকালের চা তার খুব আয়েশ করে পান করা চাই। দিনের শুরু বলে কথা।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ইউটিউবে শাহনাজ রহমতউল্লাহর গান শুনছিল। আজকাল তার গাওয়া মেলোডিয়াস গানগুলো শুনতে বেশ ভালো লাগে। দেশাত্মবোধক গানগুলো বছরজুড়ে বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে প্রায় শোনা যায়। কিন্তু এ ধরনের গান টিভি ছাড়া আলাদা করে কখনো শোনা হয় না।
‘খোলা জানালায় চেয়ে দেখি তুমি আসছ জানাতে সুপ্রভাত মন বাতায়নে’... মর্মস্পর্শী গানটি একনিমেষে পুরোনো কোনো স্মৃতিতে নিয়ে যায়। গানের কথাগুলো মনের চোখে চিত্রায়ণ করলে একটি মিষ্টিমধুর রোমান্টিক পরিবেশের অবতারণা ঘটে, যার সঙ্গে সহজেই সম্বন্ধ স্থাপন করা যায়। কারও জীবনে এমন মধুর স্মৃতি না থাকলেও ক্ষতি নেই, ভালোবাসার মানুষকে সহজেই নিজ কল্পনার রাজ্য নিয়ে আসা যায়।
গানটি শুনতে শুনতে আবিষ্ট মায়াবী আনমনে ঘরের জানালার পর্দা সরিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। শরতের রৌদ্রোজ্জ্বল সকালের সোনারোদ মেখে যত দূর চোখ যায় একদৃষ্টে বাইরে তাকিয়ে থাকে। মুহূর্তেই একরাশ স্মৃতিতে হারিয়ে যায়। জীবনের এ পর্যায়ে এসে পেছনে ফেলা আসা জীবনটাকে খুব ভালো করে নিরীক্ষণ করতে পারে। সময় ও মনের ছাঁকনিতে ছেঁকে যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তাই সম্বল, আর যা ঝরে গেছে, তা অবান্তর।
আজ তার বিবাহবার্ষিকী! ঘর-সংসার নিয়ে ব্যস্ত মায়াবীর বাচ্চাদের জন্মদিন ও তাদের শিক্ষা ধাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিয়ের বয়স ও নিজের বয়স অনেকটাই বেড়ে গেছে। এতগুলো বছর কীভাবে এত তাড়াতাড়ি কেটে গেল! কিন্তু মনে হচ্ছে এই তো সেদিনের কথা, শ্বশুরমশাই দেখতে এসে আংটি পরিয়ে মায়াবীর বাবা-মাকে পাকা কথা দিয়ে গেলেন। হিরণ তখনো তাকে চোখের দেখা দেখেনি। শুধুই ছবি, ফোনালাপ, খুদে বার্তা ও ই-মেইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এমনকি ভিডিও কলও দেওয়া হয়নি তখনো, কিন্তু খুব সহজেই হতে পারত। হয়তো রক্ষণশীলতার খাতিরেই হয়ে ওঠেনি। এত লেখা চালাচালি হতো যে দুজন-দুজনকে জানার জন্য তাই যথেষ্ট ছিল। এই প্রযুক্তির যুগেও হাতে লেখা চিঠির আদান-প্রদান হয়েছে! হিরণ বেশ কয়েকবার বলেছিল, তোমার লেখার হাত খুবই ভালো। বিয়ের এত বছর পর মায়াবীর মনে হচ্ছে হিরণ কি তার লেখার প্রেমেই পড়েছিল?
আজ ছোট একটি স্মৃতি মনে করে মায়াবী তার ছেলেমানুষির জন্য একটু লজ্জা পাচ্ছে। বছরটি ছিল ২০০৭ সাল, একদিন ফোনালাপে মায়াবী বেশ উৎসাহ নিয়ে একটু আবদার করেই হিরণকে প্রস্তাব দিল, ‘চলো আমরা ০৭-০৭-০৭ তারিখে বিয়ে করি। অনেকেই করছে, তারিখটি নাকি শুভ!’
ফোনের ও প্রান্ত থেকে ধীরভাবে হিরণ বলল, ‘তা কি চাইলেই করতে পারি, এখানে সবকিছু সামলে এত কম সময়ের মধ্যে সম্ভব নয়। তুমি মন খারাপ করো না, এই বছরের মধ্যেই আমি দেশে আসছি।’ সেদিন মায়াবীর মনটা সত্যিই খারাপ হয়েছিল। কিন্তু সাংসারিক অভিজ্ঞতায় আজ বুঝতে পারছে যে প্রস্তাবটি বাস্তবসম্মত ছিল না।
কিন্তু বুদ্ধিমান হিরণ মায়াবীর কথা না রাখতে পারলেও অন্য পন্থা ঠিকই বের করে পুষিয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ করেই কম সময়ের নোটিশে ০৭-০৭-০৭ তারিখের দুদিন আগে তার বাসার লোকজনের আগমন ঘটিয়ে ও আংটি পরানোর মধ্য দিয়ে বিয়ের পাকা কথার আয়োজন করেছে; শুধু তা–ই নয়, ট্রিপল ৭ তারিখে মায়াবীর অফিসের ঠিকানায় আড়ং থেকে একজোড়া রুপার নূপুরও পাঠিয়েছিল। মন খারাপ করার আর কোনো জো রইল না। বিয়ের এতগুলো বছর পর মায়াবীর কাছে আজ সবেই অতি মধুর স্মৃতি।
বিবাহিত জীবনটা কেমন যাচ্ছে মায়াবীর? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন ছুড়ে দিল।
একটা বয়সে মেয়েরা তার ভবিষ্যৎ স্বামী দেখতে কেমন হবে, অনেকটা নিজের অজান্তেই একটা ঝাপসা ছবি এঁকে ফেলে। এ ক্ষেত্রে মায়াবীর বিশেষ কোনো চাওয়া ছিল না। গায়ের বর্ণ যা–ই হোক চলবে আর চেহারা মোটামুটি হলেই হবে, তবে লম্বা ছেলে তার বিশেষভাবে পছন্দ ছিল। আর দশটা মেয়ের মতো মায়াবীরও স্বপ্নের পুরুষ ছিল; তবে সিনেমার কোনো নায়ক না। বিটিভিতে যখন ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ’ গানটির চিত্রায়ণে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে প্রায়ই দেখানো হতো। তখন মনে মনে ভাবত, কোনো একদিন দেখতে লম্বা-চওড়া চোখে সানগ্লাস পরা একজন সেনা কর্মকর্তা সামনে এসে দাঁড়াবে এবং বলবে...!!! আজ এসব চিন্তা করে মায়াবীর ভীষণ হাসি পাচ্ছে, কেমন বোকা বোকা ছিলাম।
সেই স্বপ্ন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে একবার পরীক্ষাও দিয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত টেকেনি। তারপর একটি কৃষিভিত্তিক (অ্যাগ্রোবেজড কোম্পানিতে) চাকরিরত অবস্থায় বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ভূত চাপল। কয়েক ধাপ পার হয়ে সেটাও হয়নি। আজ মনে হচ্ছে, পড়াশোনায় আরেকটু মনোযোগী হলে হতো। কী জানি, ভাগ্যে আজ যে জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে, সেটাই সর্বোত্তম।
অল্প বয়সে রাশিচক্রেরও পোকা ভর করেছিল। রাশিফল কোথাও ছাপা হলে তা নিয়ে বসে পড়ত। কোনো একটি ম্যাগাজিন বা পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল কোন রাশির জাতক-জাতিকা কোন রাশির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে দাম্পত্য জীবন সুখের হবে। মায়াবীর রাশিফল বলছিল, তুলা ও ধনু রাশির জাতকের সঙ্গে জমবে ভালো। হলোও তা–ই, দীর্ঘদেহী ও সুদর্শন তুলা রাশির জাতকের সঙ্গে আজ তার সংসারবাস।
বলা হয় বিয়ের প্রথম কয়েক বছর মধুচন্দ্রিমার সময়। তারপরে এসে দাঁড়ায় দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতা। মায়াবীর কাছে দাম্পত্যজীবন অনেকটা রংধনুর সাত রঙের মতো। কখনো রক্তিম ভালোবাসায় জর্জরিত, আবার হলুদ-কমলায় উচ্ছ্বসিত, কখনো সবুজ শান্তি আবার কখনো নীল বেদনায় আচ্ছাদিত। সুখ-দুঃখ, মান-অভিমান, কলহ-বিবাদ, খুনসুটি, আদর-যত্ন, মনোমালিন্য, ভালোবাসা, সন্তান, ব্যস্ততা—সবকিছু মিলিয়ে ভালো আছে বলতে হবে। এমনটাই তো সে চেয়েছে, যেখানে দিন শেষে নিজেকে প্রচণ্ড সুখী ও ভাগ্যবতী মনে হবে।
খুঁত কি নেই সম্পর্কে, একেবারেই কি পারফেক্ট?...নিজেকেই আবার পাল্টা প্রশ্ন মায়াবীর।
আছে তো!
সবকিছু নিখুঁত হতে নেই। কিছু কিছু বিষয়ে খুঁত থাকাই মন্দের ভালো।
নিখুঁত সম্পর্ক আবেদনহীন, একটু খুঁত একঘেয়েমিটা কাটিয়ে দেয়। যেখানেই দ্বন্দ্ব, সেখানেই সম্পর্ক!
হিরণ তো কথায় কথায় বলে তাদের সম্পর্কের রসায়ন নাকি খুবই ভালো। কী জানি, অতটা পরখ করে দেখা হয়নি। তবে দারুণ খুনসুটি ও অযথা বাগ্বিতণ্ডা হয়, তা অস্বীকার করা যায় না। খুব আগের স্মৃতি আওড়াতে হবে না, এই তো সেদিনের কথা—
হিরণ হঠাৎ বলে উঠল, আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়নি।
মায়াবী একটু আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, হঠাৎ ধন্যবাদ জানাবে কী কারণে?
জবাবে হিরণ দুষ্টুমিমাখা কণ্ঠে বলল, ‘তোমাকে produce করার জন্য, আর সে জন্যই আমি তোমার মতো একজনকে পেয়েছি।’
মায়াবী মনের খুশিটা চেপে রেখেই চোখ নাচিয়ে জানতে চাইল, ‘Produce’, এটা কী ধরনের শব্দ হলো?—এ কথা শুনলে আমার আব্বা-আম্মা বলবেন, ‘কী বেয়াদব মেয়ের জামাই রে বাবা, এসব কী কথা!’
এভাবেই কিছুক্ষণ চলতে থাকে খুনসুটি।
আবার বিরক্তি প্রকাশ,
এই, তুমি শুয়ে আছ কেন? তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও, আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে—মায়াবী আয়নার সামনে চুল আঁচড়চ্ছিল।
হিরণ নিরুপায় হয়ে উঠে গেল।
মায়াবী একটু গলা উঁচিয়ে আবার যোগ করল, ব্লু জিনস দিয়ে সাদা শার্টটা পরে নিয়ো।
খানিকক্ষণ পর হিরণ তৈরি হয়ে মায়াবীকে উদ্দেশ করে বলল, দেখো তো ঠিক আছে কি না?
মায়াবী চোখ ফিরিয়ে অভিযোগের সুরে বলে উঠল, কতবার বলেছি একটা সলিড ইন্ডিগো ব্লু জিনস কিনতে, এটা কেমন মলিন হয়ে গেছে। এখনো কেনোনি, তা আমাকেই কিনতে হবে। খুব বিরক্ত করো। তুমি জানা তো ব্লু জিনসের সঙ্গে সাদা শার্ট আমার খুবই পছন্দের।
হিরণ সান্ত্বনাসূচক সায় দিয়ে বলল, আচ্ছা কিনব। বাহ, তোমাকে তো অপরূপ লাগছে!
হয়েছে, এখন আর কথা ঘুরিয়ো না। চলো, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ওপাশ থেকে বাচ্চাদের হইচই আওয়াজ ভেসে আসছে। নিশ্চয় আবার ঝগড়া বেধেছে!
কখনো ভর করে ক্লান্তি,
নিত্যদিনের সাংসারিক ঝামেলা পোহাতে গিয়ে মাঝেমধ্যে মায়াবী হাঁপিয়ে ওঠে। আজ তার কোনো কারণে মন-মেজাজ ভালো না। একটু গম্ভীরভাবেই সাংসারিক কাজে ব্যস্ত।
আর তা টের পেয়ে হিরণ পরিস্থিতি সহজ করার জন্য মায়াবীর উদ্দেশে বলল, তুমি এ রকম চেহারা করে থেকো না, আমার ভয় লাগে।
প্রত্যুত্তরে মায়াবী চটজলদি বলে, আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে ভয় করতে হবে! আমি তো শান্তই আছি, কোনো রাগ দেখাচ্ছি না। কেন অযথা বকছ।
হিরণ একটু কাছে এসে চাপা স্বরে বলল, তুমি হচ্ছ ‘Silent বাঘিনী’!
একনিমেষে মায়াবীর সব ক্লান্তি ও রাগ দূর হয়ে গেল।
স্মিত হেসে মায়াবী সায় দিল, ‘সানশাইন, হলুদ প্রজাপতি আরও কত কী নাম দিয়েছ, কিন্তু সব নাম ছাপিয়ে বিয়ের এত বছর পর ‘Silent বাঘিনী’ উপাধিটা আমার খুব মনে ধরেছে।’
এভাবেই চলতে থাকে দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর...
হঠাৎ মোটরসাইকেলের কর্কশ আওয়াজে মায়াবীর ধ্যান ভাঙে। ততক্ষণে কাপের বাকি চা–টুকু ঠান্ডা হয়ে গেছে। মায়াবীর মনে হয়, একেকটা জীবন একেকটা জীবন্ত গল্প বা উপন্যাস। জীবনটা অনেক সুন্দর, মায়াবী দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
তখনো গান বেজে যাচ্ছিল, ‘সাগরের সৈকতে কে যেন দূর হতে আমারে ডেকে ডেকে যায়...।’
চায়ের কাপটি ড্রেসিং টেবিলের ওপর রেখে মায়াবী আলমারির কপাট খুলে দাঁড়ায়। ভাবতে থাকে বিবাহবার্ষিকীর দিনটি কীভাবে উদ্যাপন করা যায়। বাচ্চাদের স্কুল, অফিস এসব কারণে বাইরে ঘুরতে যাওয়া সম্ভব নয়। হিরণ খেতে পছন্দ করে এমন কিছু রান্না করা যায়, কিন্তু আলসেমিপনায় তা–ও ইচ্ছে করছে না। বড়জোর রাতে বাইরে কোথাও ডিনারে যাওয়া যায়।
‘যেদিন যে উপলক্ষ ওই দিনেই তাকে করতে হবে, আগে-পরে পছন্দ না’—এটা বড় বাড়বাড়ি, নিজেকেই শাসিয়ে বিড়বিড় করতে থাকে মায়াবী।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সযত্নে ভাঁজ করা লাল টুকটুকে জামদানি শাড়িটাতে চোখ আটকে যায়। বিয়ের কিছুদিন পরেই হিরণ তাকে সঙ্গে নিয়ে কিনে দিয়েছিল। গায়ের ওপর শাড়িটা রেখে আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরখ করে দেখছে। লাল রংটা বরাবরই খুব প্রিয়। তার শ্যামবর্ণে লাল রংটা ভালোই মানায়। যেই চিন্তা সেই কাজ। চট করে শাড়িটা জড়িয়ে নিল। আলতো করে ফেস পাউডার বুলিয়ে নিয়ে চোখজোড়ায় কাজলের প্রলেপ এঁকে নিল আর ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক লাগিয়ে, ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় চেপে রাখা লাল ছোট টিপটি কপালে বসিয়ে দিল। খোঁপার বাঁধন আলগা করে দিয়ে কাঁধ ছাড়িয়ে যাওয়া ঢেউখেলানো চুলগুলো মুক্ত রাখল। দেখতে খারাপ লাগছে না, কিন্তু কী যেন একটা কমতি আছে। গয়না, তাই তো! ঝট করে পুরোনো গয়নার বাক্সটা খুলে বিয়ের পর শাশুড়ির দেওয়া সোনার বালাটা ও সঙ্গে লাল রেশমি চুড়ি দুই হাতে গলিয়ে নিল। বালাটা শেষ কবে পরেছিল, মনে নেই। বিয়ের সময় বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া ঝুমকো জোড়ার নেকলেস সেটটাও কত বছর পরা হয়নি। শাড়িটার সঙ্গে মানাবে ভালো।
প্রতিটি জিনিসের পরতে পরতে কত মধুর স্মৃতি জড়ানো, যা আজও অম্লান। এসব অনুভূতির কাছে নতুন গয়না, ক্যান্ডল লাইট ডিনার, দামি উপহার বা ডেস্টিনেশন ওয়েডিং অ্যানিভার্সারি অনেকটাই নিষ্প্রাণ ও নিষ্প্রভ। জীবনে যতই আধুনিকতার ছোঁয়া লাগুক না কেন, গতানুগতিক ধারা তার আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতা আজও হারায়নি। অনেকটা সাদাকালো ছবির মতো। কখনো মলিন হয় না।
আলমারির কোনায় রাখা বড় খামটি হাতে তুলে নিয়ে মায়াবী খাটের একদিকে গিয়ে বসল। বড় খামটির ভেতরে বিভিন্ন আকারের খামগুলোতে হিরণের দেওয়া চিঠি, কার্ড, নোট ও অসংখ্য ই–মেইলের কপি সযত্নে রাখা আছে। খামগুলো খুলে পাতা ও কার্ডে হাত বোলাতে বোলাতে মায়াবীর মনে হচ্ছে স্মৃতিগুলো আজও কেমন তাজা! লেখাগুলোর ওপর চোখ রাখতেই ভেসে বেড়াচ্ছে কত আবেগ ও স্বপ্নের মালা।
কখন যে হিরণ পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে মায়াবী টেরও পায়নি।
বাহ্, তোমাকে তো নতুন বউয়ের মতো দেখাচ্ছে! মায়াবী লাজুক হেসে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
হিরণ একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে ধরিয়ে বলল, শুভ বিবাহবার্ষিকী!
লেখক : সুরাইয়া সিদ্দিকী, টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র।