নভেম্বরের ইতিকথা
নভেম্বর ইংরেজি বছরের ১১তম মাস, আর একটি মাস পেরুলেই আসবে নতুন একটি বছর। নভেম্বর মাসটি ইউরোপিয়ানদের নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোমান ক্যাথলিকদের মতানুসারে এই মাসটি যিশুখ্রিষ্টের আগমনের পূর্ববর্তী মাস এবং এই মাসের প্রথম দুটি দিন তারা ধর্মীয়ভাবে উদ্যাপন করে, ১ নভেম্বরকে বলা হয় ‘All saint day’, এবং ২ নভেম্বর বলা হয় ‘All souls day’।
জার্মানদের কাছেও মাসটির গুরুত্ব আছে বটে...
প্রথমত, ৯ নভেম্বর দিনটি জার্মানদের ভাগ্য নির্ধারণের দিন হিসেবে পরিচিত, অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৮৯ সালের এ দিনে বার্লিন ওয়ালের পতনের মধ্যদিয়ে পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানি আবার একত্রিত হয়।
মার্কিনিদের কাছেও মাসটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ১৯১৮ এর ১১ নভেম্বর, প্যারিসের অদূরে রোতুন্ড নামক স্থানে জার্মানরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং আধুনিক আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পরে ইন্টারনেট দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি বার যাঁকে খোঁজা হয়, তিনি জন এফ কেনেডি, তিনি ২২ নভেম্বর আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।
সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকেও দিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, নভেম্বর ইংরেজি বছরের ১১তম মাস, ১+১=২, অর্থাৎ এটি একটি জোড়া সংখ্যা, পৃথিবী সৃষ্টির আদি সূত্র বলা হয় এই সংখ্যাকে, মানব সৃষ্টির শুরু থেকে অনেক ঘটনার সঙ্গে এ জোড়া সংখ্যা বেশ গুরুত্ব বহন করে আসছে।
গত শতাব্দীর ষাটের দশকে ব্রিটেনে এক নতুন পপ সঙ্গীতের প্রচলন হয়, (সাইকিডেলিক পপ), আর এই সঙ্গীতের অন্যতম কর্ণধার ‘পিঙ্ক ফ্লয়েড’। তাদের সেই বিখ্যাত গান (Another Brick in the wall) এবং এ অ্যালবামটিও এ মাসে রিলিজ হয়। আগ্রহী শ্রোতারা চাইলে গানটি শুনতে পারেন, সাইকিডেলিক পপ বলতে আসলে কী বোঝায়।
অন্যদিকে আরেক দুনিয়া কাঁপানো ব্যান্ড বিটেলস তাঁর বিখ্যাত গান (I want to hold your hand) ১৯৬৩ সালের নভেম্বর রিলিজ করেন। বিপ্লবের সুতিকাগার বলতে যে দেশটিকে বোঝায়, সেই কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো মারা যান এই মাসেই। বিশ্ব ইতিহাসে অনেক ঘটনাবহুল ঘটনার জন্ম এই মাসে।
এবার আসি নিজের দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে...
১৯৭৫–এর নভেম্বর ছিল বাংলাদেশিদের জন্য আরেকটি ভাগ্য গণনার মাস। ১৫ আগস্টের শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতার আশায় সেনানিবাসের নব্য নেতৃত্বের তখন জয় জয়কার। হত্যা করা হলো জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধে জীবিতদের অসামান্য অবদানে বীর উত্তম খেতাব পাওয়া মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফকে। ৭ নভেম্বর ক্ষমতায় আসেন মেজর জিয়াউর রহমান। গ্রেপ্তার করা হয় কর্নেল তাহেরকে। এই কর্নেল তাহেরের জন্ম নভেম্বরে।
আমার বেশ কিছু পছন্দের মানুষের জন্ম এ মাসে বাংলাদেশের অনেকের প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ, নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন, সিনেমাবোদ্ধা ঋত্বিক ঘটক এবং ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত কবি আল্লামা ইকবালের জন্ম এই মাসেই।
বর্তমানের ইন্টারনেটের দুনিয়াতে একটু ঢু মারলে দেখব হাজার ঘটনার বর্ণনা এ মাসে, তবে এ মাসটির সবচেয়ে বেশি যে গুরুত্ব বহন করে, যাঁরা আমরা ইউরোপিয়ান বাসিন্দা।
নভেম্বর আসলেই হাড় কাঁপানো শীতের আগমনী বার্তা শুরু হয়ে যায়। যাদের শীতপ্রধান দেশে থাকার অভিজ্ঞতা আছে, তারা ভালোভাবেই বুঝতে পারেন শীতের তীব্রতা।
গত সাত বছর নিজেই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তাই এই মাসে মানুষ খুব একা হয়ে যান, অনেকটা ঘরবন্দী হয়ে পরে, তাঁরা কিছুটা আশায় থাকেন, আসছে ক্রিসমাস নতুন এক আনন্দ, নতুন এক উৎসব তাঁদের সামনে।
বিশ্বের বুকে চলছে এক যুদ্ধ। প্রতিদিন নিহিত হচ্ছে তাজা প্রাণ। আমরা কেউই যুদ্ধ চাই নাই। একটি ফিলিস্তিনির শিশুর যেমন বাঁচার অধিকার রয়েছে তেমনি একজন ইসরায়েলের শিশুর বাঁচার অধিকার রয়েছে।
আমরাও আশায় বুকবেঁধে আছি, এক মাস পড়েই নতুন একটি বছর আসবে।
সেই বছরটি হবে পৃথিবীর জন্য যুদ্ধবিহীন সুখময়, আনন্দময় এক শান্তির পৃথিবী।
পরিশেষে, Gans N Roses-এর বিখ্যাত গান ‘November Rain’–এর কথাগুলো মনে পড়ছে,
When I look into your eyes
I can see a love restrained
But darling when I hold you
Don't you know I feel the same?
Nothing lasts forever
And we both know hearts can change
And it's hard to hold a candle
In the cold November rain
আসলেই কোনো কিছু চিরকাল স্থায়ী হয়ে থাকে না, একসময় সব কিছুই বদলে যায়, যেতে হয়।