যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে এ বছর ২০২৫–এর ২৬ জুলাই, শনিবার পেনসিলভানিয়াতে অনুষ্ঠিত হলো ঢাবি রসায়নবিদদের সংগঠন ডুকা অ্যালামনাই–এর মিলনমেলা ও পিকনিক। ঢাকা ইউনিভার্সিটি কেমিস্ট্রি অ্যালামনাই ইন আমেরিকা–এর সংক্ষেপ ডিইউসিএএ বা ডুকা। ফিলাডেলফিয়া শহরের অদূরে লোয়ার পার্কিওমেন ভ্যালি পার্কে ছিল এই বিশাল আয়োজন। এতে রসায়নবিদদের পরিবারসহ উপস্থিতি প্রায় ৯০ জন, যেখানে ৬০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও বাকিরা কচিকাঁচা সন্তান। নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভানিয়া, দেলাওয়ার, মেরিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়াসহ ছয়টা অঙ্গরাজ্য থেকে রসায়নবিদেরা আত্মার টানে ছুটে এসেছেন এই মিলনমেলায়।
রসায়নের এই গ্র্যাজুয়েটরা একতাবদ্ধতায় অত্যন্ত আগ্রহী, সবার কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। সিনিয়র, সহপাঠী, জুনিয়র সবাই দারুণ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমেরিকা খুব বড় দেশ—যেকোনো অ্যালামনাই–এর মিলনমেলায় অনসাইটে উপস্থিতি সবার সম্ভব নয়। কিন্তু আশার কথা এই যে আমেরিকায় রসায়ন পরিবারের এক বড়সংখ্যক গ্র্যাজুয়েট ডুকা আয়োজিত ২০২৫–এর এই মিলনমেলায় উপস্থিতির নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। উপরিউক্ত ছয় অঙ্গরাজ্য থেকে পরিবারসহ আত্মার টানে মিলনমেলায় ছুটে এসেছেন ফাহিম ভাই, রহমান ভাই, মাহবুব ভাই, আমজাদ ভাই, জামাল ভাই, আসাদ ভাই, খবির ভাই, অপু ভাই, সুরভী আপা, মাজহার ভাই, সাদেক, ইভা, আলিম, মুনির, সোহেল, নিলা, সাজ্জাদ, নাজমুল, মনির, সাদিয়া, এমরান, আনন্দ, হাসান, নাদিম, জহুরা, মাহফুজ, জয়সহ কয়েকজনের মা ও বাবারা। অভিজ্ঞতা, আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসার বন্ধনে যুক্ত হতে এই মিলনমেলা ও পিকনিকে তাঁরা এসেছেন দূরদূরান্ত থেকে।
ডুকা অ্যালামনাইয়ের সবচেয়ে সিনিয়র, আর ব্রিলিয়ান্ট পেশাগত ও সামাজিক সংগঠনের অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ শক্তিমান মানুষ ফাহিম ভাই। আশি ছুঁই ছুঁই বয়স, কিন্তু বিশাল বড় গাড়ি তিনি নিজেই ড্রাইভ করে ৪ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে সুদূর ভার্জিনিয়া প্রদেশ থেকে সস্ত্রীক এই মিলনমেলায় এসেছেন। ভেন্যুতে তাঁর উপস্থিতি প্রায় সবার আগেই, শুধু পিকনিক কমিটির সদস্যরা ছাড়া। বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা—সংক্ষেপে বিসিবিএসএনএ–এর অন্যতম সংগঠক তিনি। আশির দশকে নর্থ আমেরিকায় এই অ্যালামনাই বিসিবিএসএনএ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ধারাবাহিকভাবে এর উন্নতি হয়। ফেলে আসা অতীতের গৌরবোজ্জ্বল গল্প আর বর্তমানের স্বপ্ন ও আশার কথা দিয়ে তিনি গল্পে গল্পে ডুকা পরিবারকে উজ্জীবিত করেছেন।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
পিকনিকের সকালে এক দুঃসংবাদ আসে সিনিয়র কামরুল ভাইয়ের কাছ থেকে। ভ্যাপসা গরমের আবহাওয়ায় আমাদের ভাবি মানে তাঁর স্ত্রী হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সবার জন্যই পারিবারিক দায়িত্ব সবকিছুর ঊর্ধ্বে—এটাই সত্যি, এটাতেই সৌন্দর্য। তাঁদের উপস্থিত হতে না স্বাভাবিক এবং আমরা ডুকা পরিবারকে খুব মিস করেছি। ডুকা অ্যালামনাইয়ের এই মিলনমেলা ও পিকনিকের জন্য শ্রদ্ধেয় কামরুল ভাইয়ের বড় অবদান রয়েছে। এই আয়োজনে উপস্থিতির জন্য তিনি দারুণ আগ্রহী ছিলেন, পরিবার নিয়ে আসার সব প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন, শেষ মিনিটের বাস্তবতায় পরিবেশকে উল্টো করে দেয়। ভাবি সুস্থ হবেন, আমরা আনন্দিত হব।
আরেক সিনিয়র রহমান ভাইও সত্তরোর্ধ্ব মানুষ, বেশ প্রাণোচ্ছল আর প্রাণবন্ত। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত কর্মজীবী দুজন মেয়েকে সাথে নিয়ে তিনি রসায়নের এই মিলনমেলায় উপস্থিত হয়েছেন। জীবন পথে পাড়ি দিয়ে আসা গল্পে তিনি সবাইকে উৎসাহিত করেছেন। ব্রিলিয়ান্ট রসায়নবিদ তিনি। অতীত পেশাগত জীবনে অর্গানিক সিন্থেটিক কেমিস্ট্রির গবেষণায় বহু ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর বিশাল অবদান। সিনিয়র মাহবুব ভাই অত্যন্ত মেধাবী একজন গবেষক—শিক্ষায় ও পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতায় তাঁর সফলতার ভান্ডার অনেক বিশাল। রসায়নের বহু প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সেক্টরে তাঁর কাজের সফল অভিজ্ঞতা। দুই সন্তানের জনক মাহবুব ভাইয়ের মেয়ে ও ছেলে দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী। সন্তান ও সহধর্মিণীকে সাথে নিয়ে তাঁর উপস্থিতি আনন্দ দিয়েছে। সিনিয়র আমজাদ ভাই সদাসর্বদা হাসিখুশি আর কর্মচাঞ্চল্য মানুষ। হরেক রকমের খাওয়াদাওয়া, রসালাপ ও কর্মচাঞ্চল্যতায় সবাইকে মুগ্ধ করা এই মানুষটি ঢাকাইয়া সংস্কৃতিকে মনে প্রাণে ধারণ করেন।
সিনিয়র জামাল ভাই ও আসাদ ভাই দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, দারুণ কর্মঠ, অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও দূরদর্শিক। তাঁদের সাথে নিয়ে ঢাবি রসায়ন বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের একতাবদ্ধ হওয়ার চেষ্টায় বহু সময় ইতিমধ্যেই দিয়েছি। মিলনমেলায় তাঁদের শুধু উপস্থিতিই নয়, পেছনে থেকে সব শক্তি দিয়ে এই আয়োজনের সফলতার কারিগরেরা তাঁরা। খবির ভাই আসাদ ভাইয়ের ব্যাচমেট, দারুণ বন্ধুত্ব তাঁদের। প্রায় ৩ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ছেলেকে সাথে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন তিনিও।
অপু ভাই ও সুরভী আপা নরম মনের কিউট কাপল। পিকনিকের এই বিশাল আয়োজনে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সব দায়িত্ব ছিল তাঁদের কাঁধে। সুস্বাদু ও মুখরোচক সব খাবার খেয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার আনন্দিত হাসিমাখা মুখ বলে দেয় সবকিছু-খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গ্রেড–এ প্লাস! মাজহার ভাই অত্যন্ত অমায়িক মানুষ, গল্পে গল্পে হাস্যরস দিয়ে সবাইকে আনন্দ দিয়েছেন।
সাদেক, আলিম ও মুনির বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সহপাঠী আর বন্ধু। জীবনের বিস্তর পথ ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে কাটিয়ে আবারও কাছাকাছি তাঁরা। আবারও একসাথে চলা—বন্ধুত্বের আনন্দ এখানেই। এই তিন বন্ধুই নিজ নিজ পরিবারের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই মিলনমেলায় তাঁদের একসাথে উপস্থিতি আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়েছে। সাদেক এই আয়োজনের অন্যতম সংগঠক আর আর্টিকেল লেখক। ডুকা ২০২৫ মিলনমেলার গণযোগাযোগ উপদেষ্টা ইভা একজন বিজ্ঞানী আর সাদেক পরিবারের হোম মিনিস্টার।
সোহেল ও নিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী, ভালো বন্ধু থেকে হয় জীবনসঙ্গী। এই দুজন রসায়নবিদ নরম মনের কিউট কাপল। মা ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি সবাইকে আনন্দিত করেছে। তাদের মতো মনির ও সাদিয়াও রসায়নের কাপল, সুইট কন্যাকে সাথে নিয়ে এসেছে। রসায়নের কর্মক্ষেত্রে দুজনেই কর্মব্যস্ত। সাজ্জাদ ভদ্র ও অমায়িক ছেলে, কর্মক্ষেত্রে দারুণ পারফরমার। বিজ্ঞান নাজমুল কর্মব্যস্ত ও পারিবারিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন মানুষ। মা, বাবা, সন্তানদের সাথে নিয়ে সস্ত্রীক তার উপস্থিতি দারুণ সোন্দর্যের।
হাসান, আনন্দ ও এমরান তিন সহপাঠী ও ভালো বন্ধু। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে রসায়নের গবেষক। নাদিম কর্মব্যস্ত রসায়নবিদ। জয় ও জহুরা পিএইচডি গবেষক। অনুষ্ঠানের ক্রীড়া ও খাদ্য ব্যবস্থাপনায় মাহফুজের বড় অবদান অনস্বীকার্য। এ তরুণেরা সস্ত্রীক উপস্থিত হয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করল, এতে আগামী দিনে তারা ডুকা অ্যালামনাইকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এই আশা।
প্রস্তুতকৃত অনুষ্ঠানসূচিতে যা ছিল—
ক. পিকনিকের সময় ও স্থান: জুলাই ২৬, ২০২৫। ইস্টার্ন সময় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা, যদিও পার্ক বুকিং সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা, স্থান পেনসিলভানিয়া প্রদেশের ফিলাডেলফিয়ার অদূরে লোয়ার পার্কিওমেন ভ্যালি পার্ক।
খ. ভেন্যু প্রস্তুতি: সকাল ১০টা-১০টা ৩০টা, অপু ভাই ও আসাদ ভাইসহ পিকনিক কমিটির উপস্থিত ও ভেন্যু প্রস্তুতকরণ।
গ. অভ্যর্থনা: সকাল ১০টা ৩০টা-১১টা, অংশগ্রহণে ইচ্ছুক সবাই পরিবারসহ উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ।
ঘ. নাশতা/এপ্পেটাইজার: বেলা ১১টা-১১টা ৩০টা, সাজ্জাদ ও জয়ের সঞ্চালনায় সবার জন্য নুডলস, সমুচা, কাপকেক, ও ডোনাট, মাফিনসহ ইত্যাদির মাধ্যমে আপ্যায়ন।
ঙ. লোগোসহ টি–শার্ট পরিধান ও ফটোশেসন: বেলা ১১টা ৩০টা-দুপুর ১২টা, আসাদের সঞ্চালনায় সবাইকে টি–শার্ট বিতরণ, তারপর বিভিন্ন গ্রুপে ছবি তোলা।
চ. ফুলেল বরণ ও পরিচিতি: দুপুর ১২টা-১টা, সাদেক ও আসাদের সঞ্চালনায় সবাইকে বরণ, সিনিয়রদের ফুলেল বরণ, প্রাপ্তবয়স্ক সবার পরিচিতির জন্য বরাদ্দ ১-২ মিনিট।
ছ. মূল খাবার আপ্যায়ন: বেলা ১টা ১৫টা-২টা ১৫টা, অপু ও সুরভীর ব্যবস্থাপনায় কাচ্চি, রোস্ট, কাবাব, সালাদ ও পিৎজাসহ অন্যান্য রকমারি দিয়ে আপ্যায়ন।
জ. সন্তানদের খেলাধুলা: বেলা ২টা ৩০টা-৩টা ৩০টা, সঞ্চালক মাহফুজ, জহুরা, জয় ও নেহার সহোযোগিতায় ছোটদের বিভিন্ন মজার খেলা।
ঝ. প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ও পুরুষের ফান গেম: বেলা ৩টা ৩০টা-৪টা, সঞ্চালনায় মাহফুজ, আসাদ, সুরভী আপা ও ইভা।
ঞ. ডেজার্ট ও চা: বিকেল ৪টা-৪টা ৩০টা, সবার পছন্দসই মিষ্টি, তরমুজ, কয়েক রকম স্পেশাল কেক, চা পরিবেশন, যেখানে সার্বক্ষণিক সহযোগিতায় আমজাদ, নাজমুল ও জয়।
ট. পুরস্কার বিতরণী, বক্তৃতা ও আগামীর ভাবনা: বিকেল ৪টা ৩০টা-৫টা ৩০টা, ছোটদের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার, প্রতিযোগিতায় স্থান পাওয়া মহিলা-পুরুষের পুরস্কার, এসবের মাঝে মাঝে সিনিয়র কয়েকজনের বক্তৃতাসহ অতীত অভিজ্ঞতা ও আগামীর ভাবনা, এই বিশেষ পর্বে সঞ্চালক আসাদ ও সাদেক।
ঠ. সমাপনী: বিকেল ৫টা ৪৫টা-৬টা ৪৫টা, অনুষ্ঠান সমাপ্তি করে গোছানো, পরিষ্কার ও বিদায়ের পর্ব-সুখ, শান্তি ও আনন্দ নিয়ে ফিরে যাওয়া।