ডলফিন ট্যুর, আইল অব স্কাই

ছবি: লেখক

পোট্রির ওল্ড হারবারে গতকালই ওয়াইল্ড লাইফ সি সাফারির টিকিট কেটে রেখেছিলাম। গ্রীষ্মে পর্যটকে ভরা থাকে স্কটিশ এই দ্বীপ আইল অব স্কাই। ট্রিপ অ্যাডভাইজারের মতে ওয়াইল্ড লাইফ সাফারি এ দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ। কাছ থেকে সিল, ডলফিন, সি ইগল দেখার সুযোগ ব্রিটেনের অল্প কিছু জায়গায় আছে। মাঝেমধ্যে তিমিরও নাকি দেখা পাওয়া যায়। তবে দেখা যে যাবে, তার কোনো গ্যারান্টি ওরা দেয় না। তারপরও সি সাফারিগুলো এত জনপ্রিয় যে আগে টিকিট না কাটলে সিট পাওয়া যায় না।

আমাদের ক্যাটামারান সি বোটের ক্যাপ্টেন ও গাইড টমি। বোট ছাড়ার আগে প্লেনের মতো সেফটি ব্রিফিংয়ে টমি মজা করে একটা লাল বাটন দেখিয়ে সবাইকে বলেছে ওর হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক বা কিছু হলে এই রেড বাটনে প্রেস করলে রেসকিউ বোট চলে আসবে।

টমির জন্ম ও বেড়ে ওঠা আইল অব স্কাইয়ে। প্রতিদিন পর্যটক নিয়ে তিনবার সাগরে যায়, তা–ও আমাদের নিয়ে যখন সকাল ১০টায় সাগরে রওনা হলো মনে হলো যেন সে–ও প্রথমবারের মতো ডলফিন, ইগল খুঁজে যাচ্ছে।

ছবি: সংগৃহীত

আইল অব স্কাই একদম ‘এই মেঘ এই বৃষ্টি, অশান্ত নীলিমা।’ বোটের জন্য অপেক্ষা করার সময়ই এক দফা বৃষ্টি শেষে সূর্য উঁকি দেওয়া শুরু করছে। হারবার ছেড়ে সমুদ্রে পড়তেই বিশাল ঢেউ এসে বোটে লাগছে। বোটে মাত্র ১২টি আসনের অর্ধেকই আমাদের ছয়জনের টিমের দখলে। টমি বোটটি খুব ধীরগতিতে আটলান্টিকের নীল পানিতে চালানোর সঙ্গে দূরে ডলফিনের সন্ধান করছে। ইসরা ইনায়দা বাইরের প্রচণ্ড ঠান্ডা হাওয়া থেকে বাঁচতে টমির কেবিনের পাশের সিটে বসে আছে। আমরা সামনের ডেকে দাঁড়িয়ে দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে সামনের বিশাল আটলান্টিকের দৃশ্য উপভোগ করছি।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে লেখক

কিছুক্ষণ পরেই টমি সবাইকে বাঁ দিকে তাকাতে বলল। দুটি ডলফিন কয়েকবার পানি থেকে উঁকি দিয়ে মিলিয়ে গেল। ক্যামেরা অন করে ছবি তোলার কোনো সুযোগই মিলল না। সবার চোখই যখন দূরের সমুদ্রে আমাদের সহযাত্রী এক পর্যটক বোটের পাশ দিয়ে একটি ডলফিনকে দেখালেন। একটি নয়, এরপর কয়েক মিনিট ধরে ৫০-৬০টি ডলফিন বোটের পাশ থেকে এসে দ্রুত সাঁতার কেটে বোটের সামনে গিয়ে কয়েকবার পানি স্প্লাস করে চলে যেতে লাগল। এবার ক্যামেরার শাটার পড়তে লাগল একের পর এক। অনেক ছবি তোলার পর ২–৩ মিনিটের ভিডিও করে ফেললাম। এত কাছ থেকে যে ডলফিন দেখা যাবে আমি কল্পনাও করিনি। আমাদের দুই মেয়ে ইসরা ও ইনায়দা তো মহাখুশি। ডলফিনগুলো ক্লিক ক্লিক সাউন্ড করে রীতিমতো বোটের সঙ্গে খেলা করছিল। পাশের এক ফ্রেঞ্চ ট্যুরিস্ট মুগ্ধ হয়ে টমিকে বলছিলেন ‘তুমি তো দেখি ডলফিনদের ভালো পে করো। এরা একদম ফুললি ট্রেন্ড।’

এরপর সিল কলোনিতে কয়েকটি সিল দেখার পর আমাদের বোট চলল সি ইগলের সন্ধানে। সি ইগল ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় পাখি। টমি দূরের পাহাড়ে একটা ইগল দেখাল। এত দূর যে ক্যামেরার সব জুম দিয়েও কিছু বোঝা যায় না। কিন্তু আমাদের ডলফিন ভাগ্যের মতো ইগল ভাগ্যও খুবই সুপ্রসন্ন ছিল সেদিন। ইগল পাখির হঠাৎ খিদে পাওয়ায় উড়ে এসে আমাদের বোটের সামনে সাগর থেকে একটি মাছ পা দিয়ে ধরল। এত দ্রুত এসে রাজকীয় কায়দায় মাছটি ধরল যেন দূর থেকে মাছটি দেখেছিল।

এরপর টমি বোটটি আরও গভীর সমুদ্রে নিয়ে গেল তিমির সন্ধানে। দুই দিন আগে নাকি ওখানে তিমি মাছ দেখা গেছে। আমরা মিনিট দশেক সমুদ্রে ঘোরাঘুরি করে ফেরার পথ ধরলাম। তিমি না আসায় সেই ফ্রেঞ্চ ভদ্রলোক টমিকে বললেন ‘তুমি মনে হয় তিমি মাছের পে অ্যাফোর্ড করতে পারো নাই।’

দুই ঘণ্টার সি সাফারি যেন খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। পোট্রির হারবারের বিভিন্ন দালান বেলামোরির মতো বিভিন্ন রঙে কালার করা। ফেরার পথে দূর সমুদ্র থেকে রঙিন হারবারকে অপরূপ লাগছিল।