প্রথম আলো আমার কাছে পরিবারের মতোই

লেখিকা
ছবি: সংগৃহীত

৪ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, যা কিনা সন্তানের জন্মদিন মনে রাখার মতোই মনে রাখি। প্রথম আলোর রজতজয়ন্তীতে পত্রিকাটির প্রতি রইল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

অনেক দিন পর প্রথম আলোতে লিখছি। সময়ের সঙ্গে নাকি মানুষেরও অভিমান হয়েছে, ঠিক বলতে পারছি না। তবে এই দূর পরবাসে সময়ের খুব অভাব। এখানে জীবন একধরনের ছকে বাঁধা নিয়মে আবর্তিত হতে থাকে। লেখালেখি করা আমার একটা শখ। কিন্তু এ জন্য একটা নিরবচ্ছিন্ন সময় দিতে হয়। অনেক কষাকষি করে যতটুকু সময় পাওয়া যায়, তার জন্য নিজ পরিবারের মানুষগুলো এমনকি ঘরের জড় পদার্থগুলোও হা করে বসে থাকে সেই সময়টুকু কেড়ে নেওয়ার জন্য! কিন্তু এ ব্যস্ততার মধ্যেও প্রথম আলোকে উপেক্ষা করতে পারিনি। কারণ, প্রথম আলোর সঙ্গে সম্পর্কটা অনেক পুরোনো। তা ছাড়া প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বলে কথা। আমার প্রথম পত্রিকা পড়া শুরু প্রথম আলোর মাধ্যমেই, তখন থেকেই প্রথম আলোর সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। সেই কাগজের ছোঁয়াটা আজ এই প্রবাসজীবনে না পেলেও প্রতিদিন প্রথম আলো ওয়েবপেজে সুযোগ পেলেই ঢুঁ মারি। সময়ের অভাবে সবগুলো খবর বিস্তারিত না পড়তে পারলেও অন্তত শিরোনামগুলোয় চোখ বুলিয়ে নিই। যদি কোনো দিন অতি ব্যস্ততায় পড়া না হয়, তাহলে সেদিন নিজেকে অন্ধ ও দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে হয়। এ পত্রিকাটি পড়ার মধ্য দিয়ে প্রতিদিন দেশের সঙ্গে নিজের সম্পর্ককে ঝালাই করে নিই ও কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করি।

প্রথম আলো যেদিন প্রথম হাতে পেয়েছিলাম, সেদিন থেকেই পত্রিকাটির নাম, নামটি লিখার ধরন, শব্দ ও গোলাকার লাল সূর্য মনে গেঁথে গিয়েছিল। আজও আমার কাছে প্রথম আলোই সেরা পত্রিকা। একধরনের অদ্ভুত বিশ্বাস, ভালো লাগা ও আস্থার জায়গা করে নিয়েছে প্রথম আলো।

প্রথম দিকে যখন পত্রিকাটি পড়া শুরু করি, তখন প্রথম আলোর রাশিফল, নকশা, ছুটির দিনে, বিনোদন ও আন্তর্জাতিক পাতার খবরগুলো খুব উপভোগ করতাম। পরবর্তী সময় একপর্যায়ে সম্পূর্ণ পত্রিকাটি পড়া শুরু করি। বিয়ের পর যখন দেখলাম শ্বশুরবাড়িতেও প্রথম আলো নিয়মিত রাখা ও পড়া হয়, তখন একধরনের স্বস্তি পেয়েছিলাম। কারণ, এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত যে প্রথম আলোর পাঠক যারা, তারা রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এই প্রথম আলোকে ঘিরে। কে কার আগে পত্রিকাটি হাতে পাবে এই নিয়ে হতো এক নীরব প্রতিযোগিতা, কখনোবা পত্রিকাটির বিভিন্ন সংখ্যা ও ক্রোড়পত্র নিয়ে চলত লুকোচুরি খেলা। বালিশ, তোশক, কাপড় বা বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে রাখার সেকি ব্যর্থ চেষ্টা! আজ হাসি পাচ্ছে ওসব ছেলেমানুষির কথা মনে করে।

আনিসুল হকের সঙ্গে আমার শাশুড়ি (বাঁ থেকে দ্বিতীয়জন)
ছবি: সংগৃহীত

যখন দেশের বাইরে চলে আসি, তখন অনলাইনে প্রথম আলো নিয়মিত পড়া শুরু করি। আজ বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে প্রথম আলো বিশেষভাবে সমাদৃত। আর প্রথম আলোর দূর পরবাস প্ল্যাটফর্মেই আমার প্রথম লেখালেখির হাতেখড়ি। প্রিয় পত্রিকাটির দূর পরবাস-এ নিজের লেখা ছাপা হলে খুব ভালো লাগা কাজ করে এবং আত্মতৃপ্তি প্রকাশ পায়। অনেক প্রবাসীরা দূর পরবাসে নিয়মিত লিখে থাকেন। এসব লেখায় প্রবাসীদের অভিজ্ঞতা, ভালোবাসা, আবেগ ও মূল্যবান সময় জড়িয়ে থাকে। তাই আমার ব্যক্তিগত অনুরোধ থাকবে প্রবাসীদের এই লেখাগুলো অনলাইনের পাশাপাশি কাগজে মুদ্রিত সংস্করণে প্রকাশিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এর মাধ্যমে প্রবাসীদের আবেগকে সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি তাঁদের লেখাকেও মূল্যায়ন করা হবে বলে আমার বিশ্বাস, যা পুরস্কৃত করার শামিল।

প্রথম আলো যেহেতু ভালো লাগা ও ভালোবাসার জায়গা, সেহেতু প্রত্যাশাও থাকে অনেক বেশি ও উচ্চ মাপের। প্রথম আলো বরাবরই মানসম্পন্ন ও রুচিসম্মত খবর প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি বিনোদন পাতার কিছু কিছু খবর পড়ে হতাশ হয়ে পড়ি। বিনোদনের নামে এমন কিছু ছাপানো ও দেখানো হয় যা অবান্তর, অপ্রাস‌ঙ্গিক ও সস্তা বলে মনে হয়। যেমন, ‘চতুর্থ বিয়ের জন্য যেমন পাত্র চান কিম কার্ডাশিয়ান’, ‘বিয়ের পর আলিয়া ভাট শ্বশুরবাড়ির রান্নাঘরে প্রথম রান্না করেছেন’ বা ‘.....নায়িকার ঘাগরা বা শাড়ির দাম অতো’, কখ‌নো আবার ‘অমুক অভিনেত্রীর মেকাপবিহীন ত্বকের রহস্য’ -শিরোনামে দৃষ্টিকটু ছবির প্রদর্শন, যা মোটেও কাম্য নয়। অন্তত প্রথম আলোর তার প্রয়োজন পড়ে না। বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে বলে আশা রাখি। ভালোবাসা থেকেই এই ক্ষুদ্র অভিযোগ। এই অপ্রিয় সত্য বা সমালোচনা নেওয়ার মতো ক্ষমতা প্রথম আলোর আছে বলেই আমার বিশ্বাস।

কারণ, প্রথম আলো—‘ভালোর সাথে আলোর পথে’।

মাসখানেক আগে আমার শাশুড়ি ফোন দিয়ে বেশ আনন্দের সঙ্গে জানালেন উনি প্রথম আলো অফিসে তাদের আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন আলোচনায় উনি আনিসুল হকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। আমার শাশুড়ি রওশন আরা সিদ্দিকী লেখালেখি করেন। প্রথম আলো আমার কাছে পরিবারের মতোই। পরিশেষে প্রথম আলো তার সম্মানজনক ধারাবাহিকতা বজায় রাখুক, সে কামনা করছি।