লন্ডনে বিজয়ফুলের বিজয় কনসার্ট অনুষ্ঠিত

বিপুলসংখ্যক দর্শকের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কালজয়ী গান নিয়ে ‘বিজয়ফুল’–এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বিজয় কনসার্ট। মাসব্যাপী বিজয়ফুলের অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে ১০ ডিসেম্বর পূর্ব লন্ডনের একটি হলে উপস্থিত রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা মোমবাতি প্রজ্বালন এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পী মৃদুলের পরিবেশনায় ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’ গাওয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়।

বিজয়ফুলের সমন্বয়ক কবি মিলটন রহমানের উপস্থাপনায় বিজয়ফুলের প্রতিষ্ঠাতা কবি শামীম আজাদ বিজয়ফুলের ১৭ বছরের পথচলা–ইতিহাস চমৎকারভাবে তুলে ধরেন।

তারপর শুরু হয় বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী বিজয়ফুলের দূত গৌরী চৌধুরীর নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে গণজাগরণের মূল হাতিয়ার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিছু দেশাত্মবোধক গান। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবরে’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’, ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’, ‘আমার বাংলাদেশের মাটি, আমার জন্মভূমির মাটি’, ‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা’ গানগুলো যখন পরিবেশন করা হচ্ছিল, তখন উপস্থিত শ্রোতারা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। সমবেত কণ্ঠে, একক বা দ্বৈতভাবে শিল্পীরা যখন গান গাইতে ছিলেন, তখন গানগুলো স্টেজের গণ্ডি ছাড়িয়ে দর্শকসারিতে সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে। মনে হচ্ছিল, সবাই চলে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময়ে।

চায়না চৌধুরীর পরিচালনায় ‘আয় আয়রে কৃষাণ, আয় আয়রে শ্রমিক’ গানের সঙ্গে নাচও ছিল খুব উপভোগ্য।

গান ও নাচের মাঝখানে ছিল বিলেতের স্বনামধন্য বাচিক শিল্পীদের আবৃত্তি। একই সঙ্গে এক পাশে একটি বড় টেবিলে চলছিল ছেলেমেয়েদের বিজয়ফুল বানানো। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যখন বিজয়ফুল বানাচ্ছিল, তাদের পাশে বসে বিজয়ফুলের স্বপ্নদ্রষ্টা শামীম আজাদ বিজয়ফুলের পাঁচটি সবুজ পাপড়ি, মাঝখানের লাল বৃত্তের বর্ণনা দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনিয়েছেন। ছেলেমেয়েরা মুগ্ধ হয়ে সেসব গল্প শুনেছে। বিজয়ফুলকে যারা ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, সেসব খুদে সদস্য যারা গান গেয়েছে, বিজয়ফুল বানিয়েছে, তারা হলো মৃদুল, শ্রেয়সী দাস, অয়ন্তী, আনন্দরূপ, ইশাল, সামির, সাহির, তানিশা ও ঈশা।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লোকমান হোসেন, ফয়জুর রহমান খান, আবু মুসা হাসান, মেফতাউল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, হাবিব রহমান। বিজয়ফুলের আন্তর্জাতিক দূত সেলিম জাহান, বিজয়ফুলের কেন্দ্রীয় কমিটির দূত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ঊর্মি মাজহার, বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সামাদুল হক।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন গৌরী চৌধুরী, সাদিয়া আফরোজ চৌধুরী, রূপি আমিন, শম্পা কুণ্ড, জান্নাত এ কাউসার লীনা, ইমদাদুল ভূঁইয়া সুমন ও সাদি।

কবিতা আবৃত্তি করেন শহীদুল ইসলাম সাগর, মুজিবুল হক মণি ও স্মৃতি আজাদ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের চরমপত্র থেকে পাঠ করেন ফিরোজ আহমদ বিপুল। অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করেন বিজয়ফুলের উজ্জীবক অপু ইসলাম ও সেলিনা হায়দার।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিল্পী লুসী রহমান, মাহবুব মোর্শেদ, দেওয়ান মাহমুদুল হোক, বিজয়ফুলের উজ্জীবক সাংবাদিক নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, নিকেল, উপদেষ্টা মুজাহিদ চৌধুরী, সতব্রত দাস স্বপন, সাহেব আহমেদ বাচ্চু, মোস্তফা কামাল, সিসিলী কামাল, সৈয়দ হামিদুল হক, সালেহা চৌধুরী, জামাল খান, নাজু, শিরিনউল্লাহ, আরফুম্যান, লিপি ফেরদৌসী ও আরও অনেকে।

গত ৩০ নভেম্বর পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে বিজয়ফুলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাসব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে। সেই থেকে প্রতিবছরের মতো বিজয়ফুলের কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন সমাপনী বক্তব্যে বিজয়ফুলের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। সবশেষে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।