ঈদকার্ডের স্মৃতি

প্রথম আলো ফাইল ছবি

আমার প্রিয়াকে ঈদকার্ড দেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঈদকার্ডের ভেতরেই লিখে দেব আমার মনের কথা। তাই ঈদকার্ড কিনতে গেলাম মার্কেটে। যেহেতু ঈদকার্ডে মনের কথা জানাব, সেহেতু বেশি দামি ঈদকার্ড কিনে তো কোনো লাভ নেই। মাত্র ১০ টাকা দিয়ে ঈদকার্ড কিনে বাড়িতে চলে আসি।

ভাবতে থাকি, কীভাবে মনের কথা লেখা যায়। আমার বন্ধুর মতো রাজু ভাইয়ের কাছে গেলাম পরামর্শ নেওয়ার জন্য। তিনি আমার বয়স থেকে অনেক বড় হবেন। এখন পর্যন্ত বিয়েও করেননি। আমাকে দেখলেই ভায়রা বলে ডাকেন। কেননা, রাজু ভাই আমার প্রিয়ার বড় বোনকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করেন এবং তাঁকে বিয়ে করবেন। তাঁর ইচ্ছা আমি যেন তাঁর ভায়রা হই। ভায়রা হওয়ার জন্য রাজু ভাই আমাকে যা করতে বলেন, তা-ই করে দিই—গরুর ঘাস কাটা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ। তিনি যখন আমাকে ভায়রা বলে ডাকেন, তখন আমার কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে যায়।

আমি রাজু ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি সাদা কাগজে লিখলাম—
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি
আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না
তুমি শুধু আমার।’

কাগজটি ঈদকার্ডের ভেতরে রেখে দিলাম। আকাশে ঈদের চাঁদ দেখা গেল। রাত পোহালেই ঈদ। আমি ঈদকার্ড নিয়ে আমার প্রিয়ার বাড়ির দিকে আসি।

কিন্তু ঈদকার্ডটি দিতে সাহস পাচ্ছি না। রাজু ভাইকে খবর দিলাম এখানে আসার জন্য। তিনি এলেন। রাজু ভাইকে ঈদকার্ডটি দিলাম। তারপর প্রিয়ার ছোট বোনের কাছে দিয়ে, প্রিয়াকে দিতে বললেন। প্রিয়া যখন ঈদকার্ডটি হাতে পেল, তখন আমার নাম দেখেই বুঝে গেল, কে ঈদকার্ডটি দিয়েছে! তাদের সামনেই পড়ে শোনাল।

তারপর আমাকে ডেকে আনা হলো প্রিয়ার বড় বোনের কাছে। তিনি আমাকে বললেন—
: কিরে, ঈদকার্ডটা কত দিয়া কিনছস?
আমার খুব ভয় লাগছে—কাঁপছে হাত, পা!
আমি তোতলিয়ে বললাম—
: দ-দশ টাকা দিয়া কিনছি।
: এগুলো তো পাঁচ টাকা কইরা অভাব নেই।
ঈদকার্ডটা বেশি দামি দিবি না, এত কম দামি দিলি ক্যান?
তুই যে বড় কিপটে তা বোঝা গেল। তোর উই কী লাগে?
: বো-বোন লাগে।
: বোন রে এসব কথা কেউ ল্যাখে।
: না, আমার বোন লাগে না। বি-বিয়াইন লাগে।
: বিয়াইন আবার ক্যামনে?
: আরে! রাজু ভাই আপনারে বিয়া করলেই তো
আপনার বোন আমার বিয়াইন অইয়া যাইব।
এই সময় আমার প্রিয়া এসে মুখ ভেংচিয়ে বলল—
: আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।

এ কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে আমার হাতে ঈদকার্ডটি ফেরত দিয়ে সে চলে যায়।

আমার মনটি খারাপ হয়ে গেল।
আমি আমার ঘরে এসে পড়ার টেবিলে বসে কাঁদতে থাকি—যেন আমার বুকটি ফেটে যাচ্ছে।
চোখের জলে ঈদকার্ডটি ভিজে গেল।
এই ছিল আমার প্রথম প্রেমের প্রথম কান্না।
পরদিন ঈদের নামাজ পড়ে ঘরে এসে খুশির দিনে মন খারাপ করে শুয়ে রইলাম। বিকেলে রাজু ভাইকে ঘটনাটা খুলে বললাম। রাজু ভাই আমাকে কোনো চিন্তা করতে মানা করলেন। প্রিয়াকে আমার জীবন সাথি করে দেবে বলে আশা দিলেন।

তারপর আমি রাজু ভাইয়ের ঘরের, খেত-খামারের কাজ, এমনকি গরুর ঘাস কাটাসহ আবার কাজ করতে থাকি শুধু তাকে পাওয়ার আশায়।

অবশেষে রাজু ভাইয়ের পছন্দের মানুষ, রাজু ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিকই রইল। আমার পছন্দের মানুষ চলে গেল কোনো এক বড়লোকের বউ হয়ে। আমি বোকার মতো দূর থেকেই মনে মনে ভালোবেসেই গেলাম। ভালোবাসা আর পেলাম না।

আর এই ঈদকার্ডের স্মৃতি থাকবে সারা জীবন।

*লেখক: শেখ সজীব আহমেদ, মালদ্বীপ
**দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]