কুয়ালালামপুরের তিতিওয়াংসা পার্ক : শহরের বুকে প্রাকৃতিক নিবড়

তিতিওয়াংসা পার্কে দশনার্থীরালেখকের পাঠানো ছবি

কুয়ালালামপুর শহরের কোলাহলের মাঝেই এক টুকরা শান্তি ও সবুজের আশ্রয় খুঁজে পেতে চান? তাহলে আপনার গন্তব্য হওয়া উচিত তামান তাসিক তিতিওয়াংসা পার্ক। রাজধানীর উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত পার্কটি স্থানীয় বাসিন্দা, প্রবাসী এবং পর্যটক সবার কাছেই সমানভাবে জনপ্রিয় একটি বিনোদন ও অবসরকেন্দ্র।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অবকাঠামো

প্রায় ৯৫ হেক্টর আয়তনের এই পার্কের প্রাণকেন্দ্র হলো ৫৭ হেক্টরজুড়ে বিস্তৃত একটি বিশাল কৃত্রিম লেক। লেকের মাঝে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা ও চারপাশের সুসজ্জিত হাঁটার পথ, সবুজ ঘাস আর গাছপালা দর্শকদের মনে এনে দেয় অনাবিল প্রশান্তি। পার্কজুড়ে রয়েছে শিশুদের খেলার মাঠ, পিকনিকের জন্য ছাউনি ও বসার ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন রকমের খাবারের স্টল।

তিতিওয়াংসা পার্কে দুই ভাই আইদিন ও আয়মান
ছবি: লেখকের পাঠানো ছবি

যা যা করতে পারবেন

এই পার্কে প্রবেশের জন্য কোনো টিকিটের প্রয়োজন হয় না। এটি প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। দর্শনার্থীরা এখানে হাঁটা, দৌড়ানো, জগিং ও সাইকেল চালানোর মতো নানা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। পার্কের ভেতরেই রয়েছে সাইকেল ভাড়ার ব্যবস্থা, যেখানে মাত্র ১০ রিঙ্গিত প্রতি ঘণ্টায় সাইকেল ভাড়া নিয়ে পুরো পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এটি পার্কটি ঘুরে দেখার একটি জনপ্রিয় ও সাশ্রয়ী মাধ্যম।

একটি বহুমাত্রিক স্থান

তিতিওয়াংসা পার্ক কেবল পর্যটক বা স্থানীয় লোকজনের জন্যই নয়, বিনোদনজগতের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এর প্রাকৃতিক ও নগরীয় পটভূমি এটিকে নাটক, চলচ্চিত্র এবং বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিংয়ের জন্য একটি আদর্শ লোকেশনে পরিণত করেছে, যেখানে দেশি-বিদেশি অনেক নির্মাতাই কাজ করতে আসেন।

তিতিওয়াংসা পার্কে লেখক
ছবি: লেখকের পাঠানো ছবি

দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশি প্রবাসী সরোয়ার হোসেন তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘সপ্তাহের ব্যস্ততার মধ্যে একদিন এখানে এসে মনে হয়, শহরের ভেতরেই যেন প্রকৃতির সঙ্গে একান্ত সময় কাটানো সম্ভব।’ আরেক দর্শনার্থী জায়েদ যোগ করেন, ‘বিকেলের দিকে এখানকার সূর্যাস্ত ও লেকের পানিতে আকাশের রঙের প্রতিফলন অপূর্ব এক দৃশ্যের সৃষ্টি করে, যা দিনের সকল ক্লান্তি দূর করে দেয়।’

যাওয়ার উপায়

তিতিওয়াংসা পার্কে সহজেই যাওয়া যায়। এলআরটি বা মনোরেলের তিতিওয়াংসা স্টেশন থেকে মাত্র কয়েক মিনিট হাঁটলেই পার্কের গেটে পৌঁছে যাবেন। ব্যক্তিগত গাড়িতে এলে পার্কের চারপাশে পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

কাজের চাপ বা নাগরিক জীবনের নিয়মিত রুটিন থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে একটু নিরিবিলি সময় কাটাতে তিতিওয়াংসা পার্ক তাই কুয়ালালামপুরের ভেতরেই এক টুকরা অনন্য প্রশান্তির ঠিকানা।

লেখক: মোস্তাকিম জনি, ভ্রমণপ্রেমী ও ফ্রিল্যান্সার

দূর পরবাস-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]