দেয়ালঘড়ি

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

সামনে আমার ফাইনাল পরীক্ষা। পড়ার টেবিলে মন বসছে না। শুধু ভালো লাগা পছন্দের মানুষ প্রিয়াকে নিয়ে ভাবি। সে চোখের আড়াল হলেই আমার দম যেন বন্ধ হয়ে আসে।

প্রিয়ার বাড়ি বেশি দূরে নয়, ঘরের দক্ষিণার জানালা খুললেই দেখা যায়। সব সময় তো জানালার দিকে চেয়ে থাকতে পারি না। তাই আমি বাজার থেকে একটি দেয়ালঘড়ি কিনে এনে দক্ষিণা জানালার বরাবর বিপরীত পাশে টাঙিয়ে দিলাম। দেয়ালঘড়ির সামনে পড়ার টেবিলটিও রেখে দিলাম। আমি বই হাতে নিয়ে দেয়ালঘড়ির দিকে চেয়ে চেয়ে পড়তে থাকি। দেয়ালঘড়ির দিকে চাওয়ার দৃশ্য দেখে কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলি, টাইম দেখে দেখে পড়ছি। এভাবে পড়লে আমার তাড়াতাড়ি মুখস্ত হয়ে যায়।

আমি লুকিয়ে লুকিয়ে আর কত দেখব।

প্রিয়া আমাকে পছন্দ করে না। অনেক আগেই প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, নাকচ করে দিয়েছে। আমার সামনে এলে বা আমি সামনে গেলে প্রিয়া মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। আর আমি মনে মনে ভেবে বলি, শুধু দেয়ালঘড়ির আয়নায় নয়, হৃদয়ের আয়নাতেও তোমাকে দেখতে পাই। তুমি আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলেও সমস্যা নেই। আমি তোমাকে প্রতি মুহূর্তে দেখব।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

আরও কটি দেয়ালঘড়ি কিনে অবশিষ্ট জানালার বিপরীত পাশে টাঙিয়ে দিলাম। প্রিয়া ঘর থেকে বের হয়ে কোন রাস্তা দিয়ে কোন দিকে যাচ্ছে, তা দেখার জন্য।

একদিন দেখতে পেলাম সে পশ্চিম দিকের রাস্তা দিয়ে কোথায় জানি যাচ্ছে প্রতিবেশী এক ছেলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে। সে ছেলেটি মাঝেমধ্যে তার গায়ে দুষ্টুমির ছলে টাচ করে হাসাহাসি করছে। পশ্চিম দিকের জানালার বিপরীত দিকের দেয়ালঘড়ির আয়নায় তা দেখতে পেলাম। এই দৃশ্য দেখে আমার মাথা গরম হয়ে যায়, যেন নিজের মাথা নিজেই ফাটিয়ে ফেলি। রাগান্বিত হয়ে দেয়ালঘড়িতে ঘুষি মারলাম। ঘড়ির আয়না ভেঙে যায়, হাতও কেটে রক্ত ঝরে।

একসময় প্রিয়া তার বান্ধবির গায়ে হলুদ দিতে গিয়েছিল সেই সময় ভিডিও করা হয়েছিল। কিছুদিন পরে গোপনে ভিডিও ক্যাসেড সংগ্রহ করে বাজারে গিয়ে এক স্টুডিও থেকে তার ভিডিও থেকে কটি ছবি তুলে নিয়ে আসি। প্রতি রাতেই ঘুমানোর সময় তার ছবিগুলো বুকে রেখেই ঘুমিয়ে থাকি।

সেই ছবিগুলো এনে আগুন জ্বালিয়ে দিলাম। আমার বুকটা ফেটে কান্না আসছে। ঘরের দরজাটি বন্ধ করে কিছুক্ষণ কাঁদলাম। ছবিতে লাগা আগুন চোখের জলে কিছুটা নিভেও গেল। তারপর এক এক করে সব দেয়ালঘড়ি ভেঙে ফেললাম। তবে ছবির ছাইগুলো এখনো স্মৃতি হিসেবে বাক্সের ভেতরে রেখে দিয়েছি।

* লেখক: শেখ সজীব আহমেদ, মালদ্বীপ