বল্টুর নতুন ভাবনা

হ্যামট্রাম্যাক সিটির বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ (কনান্ট অ্যাভিনিউ)
ছবি: পার্থ দেব

রোববার। ছুটির দিন। গিন্নি বাড়িতে নেই। অন্য রকম একটা আনন্দ, কেমন যেন একটু স্বাধীন স্বাধীন লাগছে। ফুরফুরে মেজাজ। দিনটাকে একটু অন্য রকমভাবে উদ্‌যাপন করার চিন্তা ভাবনা করছি। জানালার পর্দা তুলে দেখি বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। মিশিগানে সাধারণত এমন বৃষ্টি হয় না। কিন্তু গত দুই–তিন বছর আবহাওয়া যেন তার মতিগতি পাল্টে ফেলেছে। দরজা খুলে বাইরে বারান্দায় বসে বৃষ্টিটাকে উপভোগ করতে চাইলাম কিন্তু কনেকনে ঠান্ডা বাতাসে তা আর হয়ে উঠল না। ঘরে ঢুকতেই ভাগনে বল্টুর ফোন।

মামা, কেমন আছেন?
এই তো, চলে যাচ্ছে আর কি।
না মানে, সামার তো চলে যাচ্ছে...
সে তো ভালো।
ভালো, কিন্তু সময় তো কম, এ ধরেন দুই মাস, এরপরেই তো আবার বরফ পড়তে শুরু করবে।
তাতে সমস্যা কী?

না সমস্যা না, তবে প্রবাসী বাঙালির সব অনুষ্ঠান তো এই দুই মাস কেন্দ্রীক। যেমন ধরেন মেলা, খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিকনিক, সম্বর্ধনা, পুনর্মিলনী, পুরস্কার বিতরণী, সুইট সিক্সটিন, গ্র্যাজুয়েশান পার্টি, বিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি।

তাতে তোমার সমস্যা কী?
না মানে আমার কোন সমস্যা না তবে আমি ভাবছি, এই দুই মাসকে কেন্দ্র করে নতুন কিছু করা যায় কি না। যেমন পয়সাকড়ি কামানোর কোনো ধান্ধা বের করা  যায় কি না।
সবকিছুর মধ্যেই ধান্ধা খুঁজতে হবে কেন, ভালো কিছু কর।
ভালো কিছু করারই চিন্তা ভাবনা করছি, যাতে কমিউনিটির উপকার হয়।

সেটা কী রকম?
এই ধরেন প্রবাসের যান্ত্রিক জীবনে মানুষ খুব ব্যস্ত। ব্যস্ততার জন্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মানুষ অনেক কিছু করতে পারে না, আমরা সেটা করে দেব, বিনিময়ে সামান্য হাদিয়া নেব—এই আর কি।

আমরা মানে তোমার সঙ্গে কী আরও কেউ আছে?
না মামা। রাজনীতিবিদদের মতো বললাম আর কি। ‘আমরা’ বললে শুনতে ভাল শুনায়, কিন্তু কাজ তো করব আমি একাই, সুতরাং পকেট ভরব আমিই। একের অধিক থাকলেই দল ভাঙার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়, তাই আর রিস্কটা নিলাম না। মাঝেমধ্যে তো নিজের সঙ্গেই নিজের বনিবনা হয় না।

তা ভালো, তো কী কাজ করবে?
এই ধরেন, মিশিগানে এখন বাংলাদেশি রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় চার শ। এবার এখনো অনেকেই ফি দিয়েও পিকনিক স্পট পাচ্ছে না, আমরা তাদের সেটা ব্যবস্থা করে দেব।

ফিস দিয়ে পাচ্ছে, না তাহলে তুমি কোথা থেকে দেবে?
আছে মামা, ফিস ছাড়াও জায়গা পাওয়া যায়। আম পাবলিক তো সেটার খবর রাখে না, বা জানেও না। আমরা সেটার ব্যবস্থা করে দেব, সামান্য ফিস নেব।

আর কী আছে?  
এ ছাড়াও আমাদের অনেক প্যাকেজ ডিল আছে মামা।
সেটা কী?

এই ধরেন মামা, বাঙালি জাতি কিন্তু বক্তৃতা দিতে খুব পছন্দ করে, এখন পয়সাকড়ি খরচ করেও বক্তৃতা দিতে চায়।
বক্তৃতা তো কেউ শুনতে চায় না।
আরে মামা, কেউ শুনুক না–শুনুক, বলতে অসুবিধা কী?
তা ঠিক, কিন্তু এই বক্তৃতার ব্যাপারে তোমরা কী করবে?  
এই ধরেন খেলা, মেলা, ভেলা এসবের প্রাইম টাইমে আমরা আপনার ভাষণের ব্যবস্থা করে দেব, আপনি আমাদেরে একটা ন্যূনতম ফিস দিবেন।

এই প্রাইম টাইমটা কী?
যেমন খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণীর পূর্বমুহূর্ত, মেলায় সবশেষে যখন বিশেষ শিল্পী গান পরিবেশন করবেন, এর আগমুহূর্ত।

আর ঐ ভেলাটা কী?
এটা আমাদের নতুন আবিষ্কার মামা। দেশে নৌকা বাইচ দেখেছেন, বিদেশে বোট প্রতিযোগিতা দেখেছেন। আমরা এখানে একটু ভিন্নভাবে ভেলা প্রতিযোগিতার আয়োজন করব। ভেলা বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠবে গ্রামবাংলার মুখ, সোঁদা মাটির গন্ধ। মিশিগানে প্রচুর হ্রদ (লেক) আছে, তার কোনো একটিতে শুভলগ্ন দেখে শুরু করে দেব। বাঙালির একটা গুণ আছে, নতুন কিছু পেলেই হামলে পড়ে। লেবু তিতা না হওয়া পর্যন্ত এর পিছু ছাড়ে না।

এটা তো নতুন কিছু না, নতুন বোতলে পুরোনো খুশিজল। তো তোমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম কী?
মাল্টি পারপাস হেল্প লাইন।
বাংলা নাম হলে ভালো হতো না?
আরে মামা এখন ফেব্রুয়ারি মাস না কি?
তোমাদের অফিসটা কোথায় হচ্ছে, মানে কোনো সিটিতে?
আমাদের চিন্তা ভাবনা হচ্ছে হ্যামট্রাম্যাক সিটির বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ (কনান্ট অ্যাভিনিউ)।

কেন?
এখানে আমাদের আবেগ, সেন্টিম্যান্টের একটা বিষয় রয়েছে। এখানেই আমাদের প্রবাসী বাঙালির শেকড়।
তোমাদের ওখানে আর কী সুবিধা পাওয়া যাবে?  
যেমন ধরেন আপনি সম্বর্ধনা, পুনর্মিলনী, পুরস্কার বিতরণী, সুইট সিক্সটিন, গ্র্যাজুয়েশান পার্টি করতে চান আমরা স্বল্প খরচে সুন্দরভাবে এসবের ব্যবস্থা করে দেব।
এত সব তুমি একা সামাল দিবে কীভাবে?
না মামা, সঙ্গে মফিজ, মদন, রতন—এরা থাকবে সাহায্যকারী হিসেবে।
তা ব্যবসা–বাণিজ্য কেমন হবে মনে হচ্ছে?
মামা, মিশিগানে এখন প্রায় ৭০–৮০ হাজার প্রবাসী বাঙালির বাস। এ লাইনে আমরাই প্রথম এবং আমাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাই ব্যবসা হবে একচেটিয়া।

শুনেন নাই, কাপড়ের ব্যবসা এখন প্রায় ঘরে ঘরে। তাই বলে ব্যবসা কী কমেছে?
ঘরে ঘরে মানে, কী বলতে চাইছ?
মামা, অনলাইনে এখন প্রচুর কাপড়ের দোকান।

সেটা তো ভালো, তো তোমাদের অনলাইন ব্যবসা থাকবে তো?
তা থাকবে, জমে গেলে তো পুরাটাই অনলাইনে চলে যাবে। তাছাড়া আমরা আরেকটি কাজ করার চিন্তাভাবনা করছি। সেটা হচ্ছে, এই যে বড় বড় কফিল আছে, যাদের সঙ্গে আমজনতা ভিড়তে পারে না, তাদের সঙ্গে স্বাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দেব। কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে আপনাকে বিশেষ অতিথি, প্রধান অতিথি করে দেওয়ার কাজও আমরা করব।

প্রচারেই প্রসার, তোমরা প্রচারের কী ব্যবস্থা করেছ?
মামা ব্যানার, ফ্যাস্টুন, সাইনবোর্ড, ফেসবুক, ইউটিউব, টিভি চ্যানেল—সব রেডি। একটা শুভক্ষণ দেখে শুরু করে দিবো।

তোমার মাথায় এই বুদ্ধি এল কীভাবে?
দেখেন মামা, ব্যবসার ওপরে কিছু নাই। আপনি ব্যবসায়ী হলে ব্যাংক লোন পাবেন, সম্মান পাবেন, চেয়ার পাবেন, পত্রিকায়, টিভি চ্যানেলে স্বাক্ষাৎকার দিতে পারবেন। ভাগ্য ভালো থাকলে ব্যবসা করবেন মিশিগান নমিনেশন পাইবেন চাইলতাপুর আসনে। ভালো, তাহলে শুরু করে দাও।
মামা আপনার একটু দোয়া...
দোয়া তো থাকবেই, এখন সব কিছুইতো দোয়ার ওপরে চলতেছে।