মা ও আমি
মা দিবস পালিত হয়েছে ১২ মে। প্রবাস থেকে পাঠানো পাঠকের লেখা থেকে বাছাই করা লেখা প্রকাশিত হচ্ছে দূর পরবাসে।
মা, ছোটবেলার সবচেয়ে কাছের মানুষ, যার স্নেহছায়ায় মানুষ হয়ে ওঠা, তালের কাদায় মানুষ হয়ে ওঠার পেছনে যার অক্লান্ত ও অমানুষিক ক্লেশ আজ ছোট্টটি থেকে বড় ও সাবলম্বী হয়ে ওঠার কথা ও কাহিনি। মা, আমাদের মানুষ হয়ে ওঠার কারিগর, আমাদের শিরদাঁড়া সোজা রাখা, সমস্ত প্রতিকূলতাকে সহজে জয় করার শিক্ষক, প্রাথমিক শিক্ষক। মা মানে আমাদের বাঁচতে শেখার হাতিয়ার। মা মানে সমস্ত আবদারের সমাধান ও স্বীকৃতি। মা মানে আলাদা একটা অনুভূতি, সেই অনুভূতিতে রামধনুর রং লেগে আরও রঙিন হয়ে ওঠে, ফানুস হয়ে আকাশে ভেসে বেড়ায়।
মা আমাদের কাছে এমন একটা জগৎ, যেখানে আমাদের সমস্ত অনুভূতি জাগ্রত হয়। সূক্ষ্ম অনুভূতির অন্য নাম হলো মা। মা আমাদের কাছে অন্য জগৎ। তাঁর আঁচলের তলায় আমরা সুরক্ষিত, তাঁর উষ্ণতায় আমরা নিশ্চিন্ত। মা মানে হাতে ধরে ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়া, টিফিন খেয়েছি কি না তার খোঁজ করার দায়িত্ব প্রথমে মা গিয়ে নিতেন, স্কুলে ক্লাসে পড়াশোনা করেছি কি না, কোনো অসুবিধা হয়েছে কি না, তার খুঁটিনাটি খোঁজখবর প্রথমে মা নিতেন। মা স্কুল থেকে যত্ন করে নিয়ে আসার পর, পিঁড়ি পেতে, থালা ধুয়ে খেতে দেওয়া ইস্তক। খাওয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে খেলতে যাতে না যাই, সেদিকে কড়া নজর মা রাখতেন। ১০–১৫ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে তবে খেলতে যাওয়ার নির্দেশিকা থাকত। সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে বাড়ি ঢুকতে হবে।
আঁকতে নিয়ে যাওয়া, আঁকার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য নাম দেওয়া, কখন, কোথায় সেই প্রতিযোগিতা হবে, প্রতিযোগিতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকা, প্রতিযোগিতার শেষে খাবারের জল থেকে খাবার এগিয়ে দেওয়া, প্রথম পাবলিক পরীক্ষা মাধ্যমিকের সময় পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রোদ্দুরে বসে থাকার দায়িত্ব নীরবে করে গেছেন। এখনো কাগজে আমার লেখা বেরোলে সেগুলো যত্ন করে সংগ্রহ করে রাখার নীরব দায়িত্ব পালন করে চলেছেন মা।
*লেখক: রথীন কুমার চন্দ, চন্দননগর, হুগলি, ভারত
*দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]