বৃদ্ধ কাঠুরে ও রাজকুমারী মুনলাইট (কাগুয়া)
বহুকাল আগে, এক গ্রামে এক বৃদ্ধ কাঠুরে দম্পতি বাস করত। তিনি অত্যন্ত দরিদ্র এবং দুঃখী ছিলেন; কারণ, স্বর্গ কোনো শিশুকে তার বৃদ্ধ বয়সে আনন্দ দিতে পাঠায়নি এবং তার জীবনে কাজ থেকে বিশ্রামের কোনো আশা ছিল না যতক্ষণ না তিনি মারা যান এবং শান্তভাবে কবরে শায়িত হন।
প্রতিদিন সকালে তিনি হালকা সবুজ বাঁশের বন এবং পাহাড়ে যেতেন। এরপর তাঁর পছন্দমত বাঁশগুলো কেটে ফেলতেন এবং সেগুলিকে লম্বালম্বিভাবে ভাগ করে বা জোড়ায় জোড়ায় কেটে বাঁশ বাড়িতে নিয়ে ফিরতেন। তিনি এবং তার বৃদ্ধ স্ত্রী বিক্রির জন্য সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতেন ও তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
যথারীতি একদিন সকালে তিনি তাঁর কাজে বেরিয়েছিলেন এবং একটি সুন্দর বাঁশের থোকা পেয়ে সেগুলোর কয়েকটি কাটার কাজ শুরু করেছিলেন। হঠাৎ বাঁশের সবুজ খাঁজ একটি উজ্জ্বল কোমল আলোয় প্লাবিত হল, দেখে মনে হলো যেন পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে জায়গাটির ওপর। বিস্ময়ে বৃদ্ধ চারদিকে তাকিয়ে দেখলেন একটা বাঁশ থেকে উজ্জ্বল তেজ বেরোচ্ছে। বিস্ময়ে ভরা বৃদ্ধ তাঁর কুড়াল ফেলে আলোর দিকে এগিয়ে গেলেন।
কাছে গিয়ে তিনি দেখলেন যে সবুজ বাঁশের কাণ্ডের একটি ফাঁপা থেকে এই উজ্জ্বল কোমল আলো এসেছে এবং দেখতে আরও বিস্ময়কর, দীপ্তির মাঝখানে একটি ক্ষুদ্র মেয়েমানুষ দাঁড়িয়ে আছে, মাত্র তিন ইঞ্চি উচ্চতা এবং চেহারাতে দুর্দান্ত সুন্দর। বৃদ্ধ মনে মনে বললেন,‘অবশ্যই তোমাকে আমার সন্তান হিসাবে পাঠানো হয়েছে; কারণ, আমি তোমাকে বাঁশের মধ্যে খুঁজে পেয়েছি।’ ছোট্ট মানুষকে তার হাতে নিয়ে বাড়িতে গেলেন, তিনি ছোট্ট মানুষকে তার স্ত্রীর কাছে লালন-পালনের জন্য দিলেন। ছোট্ট মেয়েটি এতটাই সুন্দর এবং এতই ছোট ছিল যে বুড়ি তাকে একটি ঝুড়িতে ভরে রাখেন যাতে তাকে কোনোভাবে আঘাত না লাগে।
বৃদ্ধ দম্পতি এখন খুব খুশি, কারণ তাদের আজীবন অনুশোচনা ছিল যে তাদের নিজের কোন সন্তান ছিল না, এবং আনন্দের সঙ্গে তাঁরা এখন তাঁদের বৃদ্ধ বয়সের সমস্ত ভালবাসা মিশিয়ে সেই বিস্ময়কর ছোট্ট শিশুটিকে লালনপালন করতে লাগল। তারপর থেকে বৃদ্ধ লোকটি প্রায়ই বাঁশ কাটার সময় বাঁশের খাঁজে সোনা খুঁজে পেতেন; শুধু সোনাই নয়, মাঝেমধ্যে মহামূল্যবান পাথরও পেতেন, এরপর তিনি ধনী হয়ে ওঠেন। তিনি একটি সুন্দর বাড়ি তৈরি করেন এবং একজন ধনী ব্যক্তি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।
তিন মাস দ্রুত চলে গেল এবং সেই সময়ে বিস্ময়কর বাঁশের শিশুটি একটি পূর্ণবয়স্ক মেয়ে হয়ে উঠলেন, তাই তার পালিত পিতামাতা তাঁর চুল বাঁধলেন এবং তাঁকে সুন্দর কিমোনো পরালেন। তিনি এতই বিস্ময়কর সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন যে তারা তাকে রাজকন্যার মতো পর্দার আড়ালে রাখলেন যাতে কেউ তাকে না দেখে। তাঁকে যে ঘরে রাখা হতো রাতের অন্ধকারেও সেই ঘর ছিল দিনের মতো উজ্বল। বৃদ্ধ যখনই দুঃখ অনুভব করতেন, তখন তাঁর পালক কন্যার দিকে তাকাতেন এবং তাঁর দুঃখ দূর হয়ে যেত এবং তিনি খুব খুশি হতেন।
অবশেষে তাঁদের নতুন পাওয়া সন্তানের নামকরণের দিন এলো, তাই বৃদ্ধ দম্পতি একটি বিখ্যাত নাম-দাতাকে ডাকলেন এবং তিনি তাঁকে রাজকুমারী মুনলাইট (কাগুয়া ) নাম দিলেন; কারণ, তাঁর শরীর এত উজ্জ্বল আলোতে পরিপূর্ণ ছিল যে তাঁকে চন্দ্র দেবতার কন্যা বলে মনে হতো। সন্তানের নামকরণ উপলক্ষে তিন দিন ধরে গান-নাচ-গানের উৎসবের আয়োজন করা হয়। বৃদ্ধ দম্পতির সমস্ত বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয় উপস্থিত ছিল এবং রাজকুমারী মুনলাইটের নামকরণ উদ্যাপনের জন্য আয়োজিত উৎসব তারা উপভোগ করল। যাঁরা তাঁকে দেখেছেন, সবাই বলেছিল যে এত সুন্দর কাউকে আর কখনো দেখা যায়নি; ভূমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থজুড়ে সমস্ত সৌন্দর্যগুলো তাঁর পাশে ফ্যাকাশে হয়ে উঠবে ।
এরপর ধীরে ধীরে রাজকন্যার সৌন্দর্যের খ্যাতি বহুদূরে ছড়িয়ে পড়ল। অনেক তাঁর হৃদয় জিততে চেয়েছিলেন, এমনকি তাঁকে শুধু একবার দেখতে বারান্দা বরাবর এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার সময় দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাক্তিরা বাড়ির বাইরে নিজেদের তাঁবু তৈরি করেছিল এবং বেড়াতে ছোট গর্ত তৈরি করেছিল। তাঁরা দিনরাত সেখানে অবস্থান করতেন, এমনকি তাঁকে দেখার সুযোগের জন্য তাঁদের ঘুমও উৎসর্গ করতেন, কিন্তু সবই বৃথা হলো। তারপর অনেকে বাড়ির কাছে যেতেন, বৃদ্ধ এবং তার স্ত্রী বা চাকরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করতেন, কিন্তু তাও তাঁরা রাজকুমারী মুনলাইটের দেখা পেতেন না। এত হতাশার মধ্যেও তাঁরা দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, অপেক্ষা করতেন শুধু রাজকুমারীকে দেখার জন্য।
যা হোক, অবশেষে, বেশিরভাগ পুরুষ, তাঁদের অপেক্ষা আশাহীন দেখে, নিজ বাড়িতে ফিরে যেতেন। পাঁচজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি প্রিন্স ইশিসুকুরি, প্রিন্স কুরামোচি, ডান আবে নো মিউশির মন্ত্রী, গ্র্যান্ড কাউন্সেল নো মিউশি এবং মিডল কাউন্সেলর ইসোনোকামি নো মারোটারি যাঁদের দৃঢ়তা ক্ষয় না হয়ে, সমস্ত বাধার সঙ্গে আরও বেশি শক্তি নিয়ে রাজকুমারীকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। তাঁরা রোদ বৃষ্টি শীতে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতেন। কখনো কখনো তাঁরা রাজকুমারীকে চিঠি লিখতেন, কিন্তু রাজকুমারী তাঁদের কোনো উত্তর দেননি। তারপর যখন তাঁরা দেখলেন চিঠিতেও কোনো কাজ হলো না, তখন তাঁরা তাঁদের ঘুম, খাবার, বিশ্রাম বাদ দিয়ে রাজকুমারী মুনলাইটের জন্য ভালোবাসার কবিতা লিখলেন, তবুও রাজকুমারী মুনলাইট তাঁদের কোনো উত্তর দিলেন না।
এই আশাহীন অবস্থায় শীত কেটে গেল। তুষার এবং হিম ঠান্ডা বাতাস ধীরে ধীরে বসন্তের মৃদু উষ্ণতাকে স্থান দিল। তারপরে গ্রীষ্ম এল, ওপরের আকাশে জ্বলন্ত সূর্য জ্বলে উঠল, তখনো এই বিশ্বস্ত নাইটরা অপেক্ষা করেছিল। এই দীর্ঘ মাসগুলোর শেষে তাঁরা বৃদ্ধকে তাঁদের প্রতি দয়া করার জন্য এবং তাঁদের রাজকন্যাকে দেখানোর জন্য অনুরোধ করলেন, কিন্তু তিনি কেবল উত্তর দিয়েছিলেন যে তিনি তার প্রকৃত পিতা নন, তাই তিনি রাজকুমারী মুনলাইটেকে (কাগুয়া) জোর করতে পারেন না।
এই কঠোর উত্তর পেয়ে পাঁচজন নাইট তাঁদের বাড়িতে ফিরে আসেন এবং রাজকুমারীর হৃদয় স্পর্শ করার সর্বোত্তম উপায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করেতে থাকেন। তাঁরা তাঁদের বাড়ির মন্দিরের সামনে নতজানু হয়ে মূল্যবান ধূপ জ্বালিয়ে বুদ্ধের কাছে তাঁদের হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে প্রার্থনা করেছিল। এভাবে বেশ কিছু দিন চলে গেল, কিন্তু তারপরও তাঁরা ঘরে বিশ্রাম নিতে পারলেন না। তাই তারা আবার বৃদ্ধ কাঠুরের বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। এই সময় বৃদ্ধ লোকটি তাঁদের দেখে বেরিয়ে এল, এবং তারা তাঁকে তাঁদের জানাতে বললেন যে এটি রাজকুমারীর সিদ্ধান্ত ছিল কিনা যে তিনি কোনো পুরুষের সঙ্গে কখনই দেখা করবেন না এবং তাঁরা তাঁকে তাঁদের পক্ষে তাঁদের ভালবাসার মহত্ত্ব বলার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, যদি তিনি এতে খুশি হয়ে তাঁদেরকে তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেন।
বৃদ্ধ লোকটি তাঁদের প্রেমের গল্পে স্বেচ্ছায় কান দিয়েছিলেন; কারণ, তার অন্তরে তিনি এই বিশ্বস্ত প্রেমিকদের জন্য দুঃখ অনুভব করেছিলেন এবং তাঁদের একজনের সঙ্গে তাঁর প্রিয় পালক-কন্যাকে বিয়ে দেয়ার কথা চিন্তা করেছিলেন। এরপর তিনি রাজকুমারী মুনলাইটের (কাগুয়া) কাছে গিয়ে শ্রদ্ধাভরে বললেন, ‘যদিও আমার কাছে তোমাকে সর্বদা স্বর্গীয় সত্তা বলে মনে হয়, তবুও তোমাকে আমার নিজের সন্তান হিসাবে লালন-পালন করতে আমার কষ্ট হয়েছে এবং তুমি আমার ছাদের সুরক্ষায় আনন্দিত হয়েছ। তুমি কি আমার ইচ্ছামতো কাজ করতে অস্বীকার করবে?’
তারপরে রাজকুমারী মুনলাইট (কাগুয়া) উত্তর দিয়েছিলেন যে তিনি তার ইচ্ছামতো কাজ করবেন, তিনি তাঁকে তাঁর নিজের বাবা হিসাবে সম্মান করেন এবং ভালোবাসেন। এই কর্তব্যপরায়ণ কথাগুলো বৃদ্ধ খুব আনন্দের সঙ্গে শুনলেন। তারপর তিনি তাঁকে বলেছিলেন যে তিনি মারা যাওয়ার আগে তাঁকে নিরাপদে এবং সুখী–বিবাহিত দেখতে চান। ‘আমি একজন বৃদ্ধ, ৭০ বছরের বেশি বয়সী, এখন যেকোনো সময় আমার মৃত্যু হতে পারে। এটি প্রয়োজনীয় এবং সঠিক যে তোমার এই পাঁচজন প্রেমিককে দেখা উচিত এবং তাদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেওয়া উচিত।’
রাজকন্যা দুঃখে বলল, ‘ওহ, কেন, আমাকে এটা করতে হবে? আমার এখন বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা নেই।’ বৃদ্ধ উত্তর দিলেন, ‘আমি তোমাকে খুঁজে পেয়েছি, অনেক বছর আগে, যখন তুমি একটি সাদা আলোর মধ্যে তিন ইঞ্চি উচ্চতার একটি ছোট প্রাণী ছিলে। যে বাঁশের মধ্যে তুমি লুকিয়ে ছিলে, সেই বাঁশ থেকে আলো এসে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে গেল। আমি যতদিন বেঁচে আছি, তুমি যেমন আছ, তোমার মতো থাকাটা, কিন্তু একদিন আমি আর থাকব না, তখন তোমার দেখাশোনা কে করবে? তাই আমি অনুরোধ করি, তুমি একবার এই পাঁচজন সাহসী পুরুষের সঙ্গে দেখা করো এবং তাদের একজনকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নাও!
তারপরে রাজকুমারী মুনলাইট (কাগুয়া) উত্তর দিয়েছিলেন, তাঁরা ততটা প্রেমিক নন, যতটা প্রকাশ করেছে, এবং এমনকি তিনি তাঁদের কাউকে না জেনে বিয়ে করতে সম্মত নয়। তাই তিনি তাঁদের সম্পর্কে নিশ্চিন্ত বোধ করতে পারেনি, যদিও তার বাবা তাকে বলেছিলেন যে তাঁরা বুদ্ধিমান।
বৃদ্ধ বললেন, তুমি যা বলছ তা খুবই যুক্তিসঙ্গত, কিন্তু তুমি কী ধরনের পুরুষ পেলে বিয়েতে রাজি হবে? তারপরে রাজকুমারী মুনলাইট (কাগুয়া) বলেছিলেন যে তিনি তার সাক্ষাত্কারের জন্য তাঁদের অনুরোধ মঞ্জুর করার আগে তাঁদের অবশ্যই প্রেমের আরও পরীক্ষা দিতে হবে। পাঁচজন ব্যক্তিকে তাদের ভালোবাসা প্রমাণ করতে দূরবর্তী দেশ থেকে বুদ্ধের ভিক্ষার বাটি, হোরাই পৌরাণিক দ্বীপের একটি রত্ন, আগুনে পোড়া ইঁদুরের চামড়া, ড্রাগনের গলা থেকে একটি রঙিন রত্ন এবং আবাবিল পাখির গিলে ফেলা চকচকে ও মসৃণ একটি সামুদ্রিক কুঁড়ি আনতে বলেছিল।
একদিন সন্ধ্যায় প্রেমিকরা এসে তাঁদের বাঁশি বাজাতে শুরু করল, এবং তাদের মহান অক্লান্ত ভালোবাসার কথা বলে তাদের স্ব-রচিত গান গাইতে শুরু করে। বৃদ্ধ লোকটি তাঁদের কাছে গেল এবং তাঁরা যে ধৈর্য্য দেখিয়েছিল তাঁর পালক-কন্যাকে জয় করার আকাঙ্ক্ষায়, সে জন্য তাঁদের সহানুভূতি জানাল। তারপর তিনি তাঁদের বললেন যে রাজকুমারী যা বলেছিল যে তা আনতে সফল হয়েছেন, তাঁকে রাজকুমারী মুনলাইট (কাগুয়া) বিয়ে করতে সম্মত হবেন। কারণ, এটি ছিল তাঁদের ভালোবাসার পরীক্ষা।
প্রথমজন একটি কালো পাথর থেকে তৈরি একটি নকল পাথরের বাটি উপস্থাপন করেন, কিন্তু প্রিন্সেস মুনলাইট (কাগুয়া) যখন লক্ষ করেন যে বাটিটি পবিত্র আলোতে জ্বলছে না তখন তা নকল হিসাবে প্রমাণিত হয়। দ্বিতীয়জন দেশটির সেরা জুয়েলার্স দ্বারা তৈরি একটি রত্ন আনে, কিন্তু যখন কারিগরদের একজন বার্তাবাহক রাজকুমারী মুনলাইটের (কাগুয়া) বাড়িতে পেমেন্ট সংগ্রহ করতে আসে তখন এটি নকল হিসাবে প্রমাণিত হয়। তৃতীয়জন চীনের একজন বণিকের দ্বারা প্রতারিত হযন, যিনি তাঁকে একটি ইঁদুরের চামড়া বিক্রি করেন যা আগুন দিয়ে পরীক্ষা করার সময় পুড়ে যায়। চতুর্থজন সমুদ্রে ড্রাগন খুঁজে বের করার জন্য যাত্রা করে, কিন্তু একটি ঝড়ের মুখোমুখি হওয়ার পর তার পরিকল্পনা বাদ শেষ হয়ে যাই। পঞ্চমজন আবাবিল পাখির বাসায় ওঠার সময় উঁচু জায়গা থেকে পড়ে যান।
এরপর জাপানের সম্রাট রাজকুমারী মুনলাইটের সঙ্গে দেখা করতে আসেন এবং তাঁকে দেখে তার প্রেমে পড়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। রাজকুমারী তাঁর প্রেমের পরীক্ষা নেন না কিন্তু রাজকুমারী তাঁর বিয়ের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেন, তাকে বলেন তিনি তাঁর দেশের নয়, তিনি তাই সম্রাটের সঙ্গে প্রাসাদে যেতে পারবেন না। তিনি সম্রাটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, কিন্তু তার প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান করতে থাকেন। চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে রাখতে তিন বছর কেটে যায়।
গ্রীষ্মে, যখনই রাজকুমারী পূর্ণিমা দেখেন, তাঁর চোখ জলে ভরে যায়। যদিও তাঁর পালিত বাবা-মা খুব চিন্তিত হয়ে ওঠেন এবং তাঁকে প্রশ্ন করেন, তাঁদের কী ভুল হয়েছে? তাঁর আচরণ ক্রমবর্ধমান অনিয়মিত হয়ে ওঠে, তারপর তিনি প্রকাশ করেন যে তিনি পৃথিবীর নন এবং তাঁকে অবশ্যই চাঁদে তাঁর লোকেদের কাছে ফিরে যেতে হবে। তাঁকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল, অপরাধের শাস্তি হিসাবে।
তাঁর প্রত্যাবর্তনের দিন ঘনিয়ে আসে। এরপর একদিন স্বর্গীয় একজন দূত বৃদ্ধ কাঠুরের বাড়িতে নেমে আসেন এবং বলেন রাজকুমারীকে অবশ্যই তাঁর সঙ্গে চাঁদে তাঁর আসল বাড়িতে ফিরে যেতে হবে।
রাজকুমারী তাঁর পালিত মা–বাবাকে স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে তার নিজের পোশাকটি উপহার দেন এবং সম্রাটের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য দুঃখজনক পত্র লেখেন এবং একটি অমরত্বের অমৃত উপহার পাঠান। এরপর তিনি আকাশে আরোহণ করেন, রাজকুমারী সুকি নো মিয়াকোতে (চাঁদের রাজধানী) চলে যান।
সম্রাট তার চিঠি পড়ে দুঃখে কাবু হয়ে তার ভৃত্যদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোন পর্বতটি স্বর্গের সবচেয়ে কাছের জায়গা?’ উত্তরে একজন সুরুগা প্রদেশের গ্রেট পর্বতের কথা বলেন। তখন সম্রাট তার লোকদের চিঠিটি পর্বতের চূড়ায় নিয়ে সেটিকে পুড়িয়ে ফেলার আদেশ দেন, এই আশায় যে তার বার্তা দূরের রাজকুমারীর কাছে পৌঁছাবে। তাঁদের অমরত্বের অমৃত পোড়ানোরও আদেশ দেন; কারণ, সম্রাট রাজকুমারীকে না পেয়ে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চান না।
কিংবদন্তি আছে সম্রাটের সেনাবাহিনী তাঁর আদেশ পালন করার জন্য যে পর্বতের ঢালে আরোহণ করে পরবর্তীতে ঐ পর্বতের নাম হয় মাউন্ট ফুজি। আজও মাউন্ট ফুজি থেকে সেই পোড়ানোর ধোঁয়া ওড়ে। (অতীতে, মাউন্ট ফুজিতে অনেক বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ছিল এবং ধোঁয়া উৎপন্ন হতো।)
*দূর পরবাস-এ গল্প, ভ্রমণকাহিনি, ভিডিও, ছবি, লেখা ও নানা আয়োজনের গল্প পাঠান [email protected]–এ