‘এম্পটি নেস্ট’
ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়, আরবানা-শ্যাম্পেইনের স্থাপত্যবিদ্যার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মীর মাসুদ আলীকে আমি আমার অগ্রজতুল্য মনে করি। অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখি। তিনিও আমাকে আপন ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করেন। তার সাথে মাঝেমধ্যে টেলিফোনে কথা হয়। এ রকমই এক আলাপচারিতায়, আমাকে একদিন বললেন, ‘ওয়াহিদ, “এম্পটি নেস্ট” কেমন লাগছে?’ আপন সন্তানেরা বড় হয়ে বাইরে চলে যাওয়ার পর বাড়ির শূন্যতাকে বোঝানোর জন্য যে ‘এম্পটি নেস্ট’ কথাটি ব্যবহৃত হয়, আমি তখন তা জানতাম না। আমি ভেবেছি, তিনি বলছেন, ‘এম্পটিনেস’, কিন্তু আমি শুনতে ভুল করেছি। আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছি, কীভাবে তার প্রশ্নের কী জবাব দেব, বুঝতে পারছিলাম না। ভ্রাতৃপ্রতিম অধ্যাপক খুবই বিচক্ষণ ব্যক্তি। মনে হলো আমার বিব্রতকর অবস্থা আন্দাজ করতে পেরে তিনি তাড়াতাড়ি প্রসঙ্গটি পাল্টে ফেললেন। সেদিনকার মতো আমারও মুখ রক্ষা হলো।
এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি আমার মতো আনাড়ির পক্ষে নতুন কিছু নয়। কোনো সময় বুদ্ধির অভাবে, কোনো সময় না জানার কারণে আমাকে প্রায়ই এমন বেকায়দায় পড়তে হয়। অন্য একটি কারণেও অসুবিধা হয়। সময় এলে সে গল্প হবে আরেক দিন। টেলিফোন রাখার পর গিন্নি আমাকে বললেন, ‘তুমি জানো না, এম্পটি নেস্ট’ কাকে বলে? তুমি কি আমাকে শিখিয়েছ? বুদ্ধিদীপ্ত পাল্টা এমন সওয়াল ছাড়লে তিনি নিশ্চয়ই খুশি হতেন, কিন্তু তাৎক্ষণিক মাথায় খেলল না। একজন সুবোধ ভালো ছাত্র সেজে ওই দিন স্ত্রীর কাছ থেকে জেনে নিলাম ‘এম্পটি নেস্ট’ কাকে বলে এবং এর মর্মবাণীটি কী। এ পর্যন্ত সবই ঠিক আছে, তারপরও সন্তানহীন শূন্য ঘরের সাথে ‘এম্পটি নেস্ট’-এর এমন তুলনায় আমার একটু মৃদু আপত্তি আছে বৈকি। পুত্র-কন্যারা জীবন-জীবিকার সন্ধানে দূরে চলে গেলেও বাবা-মায়েরা সেই ঘরে বসবাস করতে থাকেন। মনের দুঃখে বাড়ি ছেড়ে তাঁরা পালিয়ে বেড়ান না। কিন্তু পাখির ব্যাপারটা আমি একটু ভিন্নভাবেই দেখি।
ডিম পাড়ার সময় হলে পাখি জুতসই গাছ খোঁজে। নিরাপদ জায়গায় বাসা বাঁধে। সময়মতো ডিম পাড়ে। বাচ্চা ফোটায়। খাইয়েদাইয়ে তাদের বড় করে। ছানারা আত্মনির্ভর হয়ে উড়ে গেলে ‘এম্পটি নেস্ট’-এ বা তার আশপাশে মা পাখি কিংবা পাখির মা-বাবা কেউই থাকে না। থাকার প্রশ্নই আসে না। পাখির বাচ্চারা জঙ্গলে অন্য পাখিদের মিছিলে শামিল হয়। পাখির অভিবাবকেরা নীড় ছেড়ে চলে যায়। কোথায় যায়, কে জানে। এই দুনিয়ায় যাওয়ার জায়গার কি কোনো অভাব আছে। গাছের ডালে খালি পাখির বাসা খালিই থাকে। ঝড়–তুফানে হয় লন্ডভন্ড হয়ে যায়, নয়তো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার কোনোটি না হলে সময়ের সাথে নীড়ের বাঁধানো খড়কুটোগুলো ক্ষয়ে ক্ষয়ে একে একে ঝরে পড়ে। বাতাসে ওড়ে। এই পরিত্যক্ত পাখির বাসা বা ‘এম্পটি নেস্ট’ নিয়েই আমার আজকের গল্প।
‘এম্পটি নেস্ট’-এ আবার ফিরে আসব, তবে তার আগে পাখি সম্পর্কে আমার সাধের দু-একটি কথা বলে নিই। গোটা জীবজগতের মধ্যে পাখি আমার অত্যন্ত প্রিয় একটি প্রাণী। পাখির রূপ-মাধুর্য ও তার করিৎকর্মা জীবনচাঞ্চল্য কার না পছন্দ? পাখির অবয়ব, নানান ধরনের গায়ের রং, পাখির কিচিরমিচির ডাক, তার উড়ে বেড়ানো, ডানা ঝাপটানো, মাটিতে পাখির হাঁটা, ঘাড় কাত করে ঠোঁট নিয়ে গা চুলকানো, গাছের ডালে বসে এদিক–ওদিক তাকানো, রেললাইনের ধারে টেলিগ্রাফের তারে বসে বিশ্রাম নেওয়া, লাইন ধরে এঁকেবেঁকে আকাশে পাখির ওড়াউড়ি, জমে থাকা বৃষ্টির অল্প পানিতে ডানা ভিজিয়ে গোসল করা, পোকামাকড় ধরে যাওয়া, শিলাবৃষ্টিতে বিষান্ত অনুখনু পাখির করুণ দশা ইত্যাদি হামেশাই আমার কৌতূহলী মনকে ময়ূরের মতো নাচায়।
পাখির সবই সুন্দর। সবই নির্মল। তবে সে একটি অঘটনও ঘটাতে পারে। সেটা রীতিমতো বিরক্তিকর। বলব, সেটা কী? মনে করুন, কোনো এক ছুটির দিনে আপনি ফুরফুরে মেজাজে আপনার ঘরের পিছে ডেকে বসে কিছু একটা লিখছেন অথবা পড়ছেন। হঠাৎ করে একটা পাখি উড়ে গিয়ে বসল আপনার বাড়ির কোনার বড় তেঁতুলগাছে। যাওয়ার সময় তার শরীর। থেকে নির্গত বস্তুটি আপনার মাথায় অথবা বই-খাতায় টপ করে পড়ে গেল। ভাবুন তো, তখন কেমন লাগবে আপনার। বিরক্ত হবেন। সবাই জানি। তবে আপনাদের মাঝে এমন কি কেউ আছেন, যিনি রেগেমেগে তৎক্ষণাৎ বন্দুক নিয়ে বেরোবেন পাখিটিকে মারার জন্য। আমি মনে করি না। আর আমার এই অনুমান যদি সত্যি হয়, তাহলে আপনারা সবাই পাখিপ্রেমিক এবং আমি এখন নির্দ্বিধায় পাখি নিয়ে এলোমেলো যা তা লিখতে পারি। আপনারা অবশ্যই পড়বেন। কারণ আপনারা পাখি ভালোবাসেন।
পাখিপ্রেমিক ভাইয়েরা, বলতে পারেন কাদাখোঁচা নদীর চরে কিংবা বিলের ধারে তার লম্বা ঠোঁট নিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে যখন মাছ ধরে, তখন সে দৃশ্য দেখতে কেমন লাগে? আমার কাছে তো মনে হয় কালাখোঁড়া একজন সুদক্ষ দরজি। আপনাদের কাছে নিশ্চয়ই অবাক লাগছে। তা কেমন করে, পাখি আবার দরজি হয় কী করে। ঠিক আছে, আরেকটু ভেঙেই বলি। চলন্ত সেলাইয়ের কলের সুই যেমন ওঠানামা করে, কাদাপানিতে কাদাখোঁচার চক্ষু চালনা তেমনটা লাগে না? কাঠঠোকরা যখন তার ধারালো শক্ত ঠোঁট ঠুকে ঠুকে গাছে গর্ত করে বাসা বানায়, তখন মনে হয় না যে একজন কাঠমিস্ত্রি মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা বানানোর জন্য গাছ খোদাই করছে। এই দুই পাখির কর্মরস উপভোগ করতে গেলে আমার লেখা পড়ে কাজ হবে না। রবি ঠাকুরের ‘গল্পগুচ্ছ হাতের কাছে থাকলে পড়ে নিন, ‘একটি ক্ষুদ্র পুরাতন গল্প’খানা।
এবার আসি শিকারি পাখির কথায়। চিল যখন অনেক ওপরে উড়তে উড়তে ডানা দুটি স্থির করে দুদিকে মেলে দিয়ে মাটিতে প্রশ্ন দৃষ্টি ফেলে শিকার খোঁজে, তখন ভাবি—সে আরামের বাদশা। বাতাসে তার রাজসিংহাসন নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। ওই সময় আমার কাছে আরও মনে হয় পৃথিবীতে চিলের চেয়ে আয়েশি এবং সুখী পাখি বুঝি আর কোনোটিই নেই। আবার শিকার ধরতে যখন লম্বভাবে দ্রুতগতিতে মাটিতে নেমে ছোঁ মারে, তখন ভাবি চিলের মতো তেজি এবং ক্ষীণ প্রাণী বুঝি তাবৎ জীবকুলেই আরেকটি নেই।
মাছরাঙার মাছ ধরার দৃশ্যও দেখার মতো। পুকুরপাড়ে মরা গাছের ডালে অথবা পানিতে পোঁতা কোনো খুঁটির ওপর একমনে শিকারের ওপর গভীর মনোযোগসহ দৃষ্টি ফেলে এমনভাবে বসে থাকে, যেন সে দীনদুনিয়ার আর কোনো খোঁজখবর রাখে না। আচমকা ধ্যান ভেঙে চোখের পলকের সাথে মাছরাঙা তার রাঙা ঠোঁট নিয়ে শিকারের ওপর হামলে পড়ে। ছোটবেলা নির্জন বিকেলে বাড়ির পেছনে গোসলের জন্য ছোট্ট পুকুর ঘাটে বসে বসে আমি এই সুন্দর পাখির সব শিকারি কসরত দেখতাম। পেছন ফিরে তাকালে আজ মনে হয়, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই প্রতিটি কাজ যদি মাছরাঙার মতো নিধিত্ব ও নির্দিষ্ট মন নিয়ে করতে পারতাম, তাহলে জীবনটা বোধ হয় আরও সফল, সার্থক এবং অর্থবহ হতে পারত।
জীবনে সফলতা এবং সার্থকতা যে এক নয়, তা নতুন করে উপলব্ধি করলাম মাত্র সেদিন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের কথায়। নিউইয়র্কের বাংলা বইমেলায় এসে তিনি বলেছিলেন, ‘ফুল যখন তার বাহারি রং নিয়ে বিকশিত হয়, এটা তার সফলতা, কিন্তু সে যখন তার সুরভি দিয়ে মানুষের মন ভরিয়ে দেয়, সেটা তার সার্থকতা। ফুলের খুশবু ছড়ানো খলি সার্থকতা হয়, তাহলে তার রূপ বিতরণ কেন সার্থকতা হবে না? এ প্রশ্ন কি করা যায় না? ফুলের সুগন্ধে যেমন আমরা আনন্দ পাই, তেমনি তার বিচিত্র রংও তো আমাদের হৃদয়-মনকে প্রফুল্ল করে। নির্মল আনন্দ দেয়। আমার মনে হয়, সায়ীদ স্যারের প্রস্তাবটি ঠিক। উদাহরণটি আমি ভুল বলছি না, তবে নিশ্চয়ই আরও সুন্দর হতে পারত। আমি যদি বলি, যে লোকটি শুদ্ধ পথে অঢেল অর্থবিত্ত কামাই করলেন, তিনি সফল হলেন। কিন্তু যখন সেই সম্পদ তিনি গরিবদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিলেন, তখনই সার্থক হলেন, তার আগে নয়। এ বিতর্ক এখানেই শেষ করে আপনাদের ভাবনার জন্য রেখে দিলাম। আগামী দিনে এ নিয়ে আরও আলোচনা হতে পারে।
এবার বলি পাখির বাসার কথা। এ জিনিসটির প্রতি আমার আকর্ষণ তো একেবারে ছোটবেলা থেকেই। প্রথমবারের মতো পাখির বাসার ওপর আমার চোখ পড়ে তখন, যখন আমার বয়স মাত্র পাঁচ কি ছয় বছর। আমাদের বাড়ির সামনে সারি বাঁধা উঁচু উঁচু অনেকগুলো সুপারির গাছ ছিল। সুপারিগাছের মাথায় বাবুই পাখির ঝুলন্ত বাসা দেখে আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতাম! একবার ঝড়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া বাবুইয়ের বাসা ঘরে কুড়িয়ে এনেছিলাম। গভীর কৌতূহল নিয়ে উল্টেপাল্টে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছিলাম। তারপর বাসাটা কী করেছিলাম, আজ মনে করতে পারছি না। আমাদের ঘরের ঠিক পেছনেই একধরনের ছোট ছোট জঙ্গলি গাছ গজাত, যার পাতা ছিল সেগুনপাতার মতো বড় বড় এবং চ্যাপটা। ওই সব দু–তিনটা বড় পাতা একত্র করে সেলাই দিয়ে টোনাটুনি বাসা বানাত। এসব পাখির বাসায় হাত ঢোকাতে গাছ বাইতে হতো না। পাখির নীড়গুলো নাগালের ভেতরেই থাকত। সন্ধ্যার পরে হাত ঢুকিয়ে পাখির ডিম, পাখির বাচ্চা, অনেক সময় বুড়ো টোনাটুনিকেও ধরে নিয়ে আসতাম। মা ভয় দেখাতেন, ‘বাবা, পাখির বাসায় হাত দিস না। ওখানে সাপ থাকে। কে শোনে কার কথা।
আরেকটু বড় হওয়ার পর আমি নিজেদের এবং আশপাশের দুই গ্রামের বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়াতাম। পাখির বাসার খোঁজে। বিশেষ করে শীতকালে শেওড়াগাছ এবং শিমঝাড়ে খুঁজতাম ঘুঘুর বাসা। দু-একবার শালিক পাখির বাসা থেকে পাখির ছানা পেড়ে আনতে লম্বা সুপারিগাছ বেয়ে উঠেছি। সে কথা আজও মনে পড়ে। পাখির ছানাকে খাওয়ানোর জন্য বাড়ির পেছনের বিল থেকে ঘাসফড়িং ধরে বাঁশের চোঙ করে ঘরে নিয়ে আসতাম। বিলের পানিতে জোঁকের উপদ্রব ছিল অত্যধিক। তাতেও আমরা দমার পাত্র ছিলাম না। এসব রোমাঞ্চকর দুঃসাহসিক কাজে আমাদের অগ্রপথিক ছিলেন আমার ছোট চাচা মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। তার সাথে আমার বয়সের তফাত খুব একটা বেশি নয়। শালিক ভেবে পেলেপুষে বড় করার পর একবার দেখা গেল বাচ্চাগুলো শালিকের নয়। কোকিলের। সুবিধাবাদী কোকিল শুধু বসন্তের সুদিনে বেরিয়ে কুহু কুহু ডাকে না, সে শালিকের বাসায় গোপনে, কৌশলে নিজের ডিমগুলো পেড়ে আসে। অলস, ধুরন্ধর, ফাঁকিবাজ ও প্রতারক কোকিল নীড় বাঁধার কষ্টটাও নিজে করতে চায় না। নিজের প্রজনন প্রক্রিয়াটার কঠিন কাজটিকে কায়দা করে অন্যের ঘাড়ে ঠেলে দেয়। কোকিলের মতো দুষ্টু স্বভাবের মানুষ আপনার আমার আশপাশেই থাকতে পারে। তাদের থেকে সব সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। তবে তাদের চিনবেন কেমন করে? বসন্তের দখিনা হাওয়ায় কুহু ডাক ভেসে এলে বুঝতে পারবেন সে কোকিল। কিন্তু কোকিল স্বভাবের মানুষ তো আর আওয়াজ দেবে না। তাকে চিনতে হলে বুদ্ধি খরচ করতে হয়। আর বুদ্ধি না থাকলে দণ্ডি দিয়ে চিনবেন। পকেট থেকে তাগড়া টাকা খসাবেন।
এ লেখা শুরু করার আগে পাখির বাসার ওপর গুগল সার্চ দিলাম। এক সাইটে গিয়ে দেখতে পেলাম বিভিন্ন আকারের পাখির বাসার ইমেজ। স্ক্রিন স্ক্রল করে দেখলাম কত জাতের, কত রকমের, কত আকারের, কত রঙের, কত ঢঙের পাখির নীড়। গুনতে লাগলাম, শ খানেক গোনার পর আন্দাজ করলাম, ওই একই সাইটে অন্তত হাজারখানেক পাখির বাসা তো হবেই। বেশির ভাগ সত্যি সত্যিই ‘এম্পটি নেস্ট’। বাকিগুলোর কোনোটায় আছে পাখির ডিম, কোনোটায় পাখির ছানা। ছোট-বড় কত জাতের ডিম। কত রঙের মনমাতানো। চোখজুড়ানো। সাদা, বাদামি, নীল, সবুজ, গোলাপি, কোনোটা বহু রঙের, কোনোটা দাগযুক্ত। আরও কতগুলো রং আমার নজর কাড়ল, যার নামও আমি জানি না। অল্প কয়েকটি নীড়ে দেখলাম, পাখির বাচ্চারা হাঁ করে বসে আছে। পাখির ছানার ‘হাঁ’ দেখে মনে হলো, তার পেট থেকে ‘হাঁ'-টা আরও বড়। এমন প্রাণী বোধ হয় দ্বিতীয়টি আর নেই। সময় থাকলে আপনারা ছবিগুলো দেখতে পারেন। বিচিত্র পাখির বাসায় একবার দৃষ্টি ফেললে, ফেরাতে পারবেন না। যতই দেখবেন, ততই দেখতে ইচ্ছে করবে।
আপনারা যদি আমাকে বলেন, জাতি হিসেবে সবচেয়ে বেশি পাখিপ্রেমিক কারা? আমি বলব, ‘চীনারা’। কবি জীবনানন্দ দাস, বনলতা সেনের চোখকে পাখির নীড়ের সাথে তুলনা করেছেন। আর চীনারা বেইজিং-এ তাদের ন্যাশন্যাল স্টেডিয়াম বানিয়েছে পাখির বাসার মতো আকৃতি দিয়ে। এর কাজ শুরু হয়েছে ২০০৩ সালে এবং শেষ হয়েছে ২০০৮-এ। এতে খরচ হয়েছে ৪২৮ মিলিয়ন ডলার। কাজ করেছেন ১৭ হাজার নির্মাণশ্রমিক। কাজ করতে গিয়ে ১০ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। ডিজাইন করেছেন সুইস আর্কিটেকচারাল ফার্ম - ‘হারজগ অ্যান্ড ডিমিউরন’। নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে প্রধান হলো ১ লাখ ১০ হাজার টন চীনা তৈরি স্টিল। ঘাস ঢাকা মাঠের আয়তন ৭ হাজার ৮১১ বর্গমিটার। এর উচ্চতা ২২৭ ফিট। ধারণক্ষমতা ৯১ হাজার।
লেখাটি সুন্দরভাবে শেষ করে আনার মতো মালমসলা আজ আমার ভান্ডারে আর নেই, তাই অগত্যা ছোটগল্পের মতো হঠাৎ শেষ করে দিলাম। সবশেষে যে কথা দিয়ে শেষ করতে চাই তা হলো এ যে গল্প নয়। সত্যি।
*লেখক: আবু এন এম ওয়াহিদ, অধ্যাপক, টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা ম্যানেজিং এডিটর: জার্নাল অব ডেভলপিং এরিয়াজ