চিঠি আকাশের ঠিকানায়
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
রিনা,
‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।’ সত্যি আজ তোমাকে তোমার আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখছি। ৩৩ বছর পর কাঞ্চনের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছে। দুলালকেও পেয়েছি। নন্দ আজ কি হয়ে গেল মন্দ? মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, মুঠোফোন—কোনোটাতেই নন্দ ধরা দিচ্ছে না। নন্দ কি মৃগনাভি বয়ে বেড়ায়, হয়ে গেল সোনার হরিণ!
কাঞ্চনের কাছ থেকেই শুনলাম, তুমি ও বেবী আজ আকাশের ঠিকানায়! কেমন করে হঠাৎ চলে গেলে ওই ঠিকানায়? আমার স্কুল–কলেজের কয়েকজন বন্ধুও হঠাৎ ঠাঁই নিয়েছে তোমার ঠিকানায়। তোমার সাথে কি বেবীর দেখা হয়? ডক্টর আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্যার, ডক্টর আহমদ শরীফ স্যার, ডক্টর কাজী দীন মুহম্মদ স্যারও তো আকাশের ঠিকানায়। তোমার সাথে কি স্যারদের দেখা হয়? আহমদ শরীফ স্যার কি বিকেলে হাঁটতে গিয়ে আলোচনাপর্বে লেকচার দেন। ‘সেই চম্পা নদীর তীরে দেখা হবে আবার, যদি ফাগুন আসে গো ফিরে।’ ডক্টর আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্যার কি আসেন চম্পা নদীর তীর থেকে? আবু হেনা স্যার ক্লাসে এসে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের গান ও কবিতার লাইন বলতেন। কখনো নিজের কবিতা ও গানের কথা বলেননি। অপেক্ষায় ছিলাম হয়তো বলবেন, ‘তুমি যে আমার কবিতা!’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আমাদের ব্যাচের বন্ধুদের নিয়ে মেসেঞ্জারে একটি গ্রুপ হয়েছে ‘বন্ধু চিরদিন’ শিরোনামে। কাঞ্চন আমাকে পেজটিতে অ্যাড করেছে। আবু হেনা স্যারকে নিয়ে আমি একটি স্মৃতিচারণা লিখে আমার ফেসবুকে পোস্ট করেছি। আবু হেনা স্যারের ছেলে সুজিত মোস্তফা আমার মেসেঞ্জারে টেক্সট করে লিখেছেন,
‘শুভ সকাল। আপনার অসাধারণ স্মৃতিচারণাটির জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। একটা বড় স্মরণিকা বের করার উদ্যোগ নিয়েছি। আপনার সহযোগিতা আনন্দিত করবে। আমি তার বড় ছেলে।’
এরপর শ্রদ্ধেয় সুজিত মোস্তফার সঙ্গে ফোনে প্রায় ৩০ মিনিট কথা হয়েছে। তিনি বললেন, ‘আপনার স্মৃতিচারণায় লিখেছেন বাবা “অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী”। এ কথাটি আজও কেউ বলেনি। আমি কেন তাঁর মতো স্মৃতিশক্তি পাইনি। আমি তো মানুষের নাম মনে রাখতে পারি না।’ বলেছি, স্যারের এ ক্ষমতাটি নিশ্চয়ই জেনেটিক। তিনি উপলব্ধি করার পর এই শক্তি ধরে রেখে উপভোগ করেছেন এবং জীবনের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন। এই শক্তি উত্তরাধিকার সূত্রে আপনার সব ভাই-বোন ও তাঁদের সন্তানদের মধ্যে আছে।
তুমি আকাশের ঠিকানায় একটি ফেসবুক প্রোফাইল করতে পারো। তাহলে বেবীসহ স্যারদের অ্যাড করে নেবে। আমাকে না হয় অগ্রিম ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ো। তাহলে আমি আসার সাথে সাথেই তোমার পেজে অ্যাড হতে পারব। আবার হারিয়ে যাওয়ার থাকবে না। দেখো আবু হেনা স্যারের কাছ থেকে গান লেখা শেখা যায় কি না। এ বিষয়ে আমার একটু সুপ্ত ইচ্ছা আছে। স্যারকে পেলে বলব এবার। আমিও লিখব, এবার আসিবো ফিরে অটামের রঙিন ঝরাপাতার দেশ থেকে।
তোমার সঙ্গে দেখা হলে তোমার অনেক পোর্ট্রেট ছবি তুলব। আমার ছেলে আমার একটি পোর্ট্রেট ছবি তুলেছে। আমার প্রোফাইলে আমার ছেলের ছবি ছিল, ফেসবুক প্রোফাইলের জন্ম লগ্ন থেকেই। ছেলের তোলা ছবিটি প্রোফাইলে দিয়েছি। মঈন ও আমার ভায়রাভাই বলেছে, প্রোফাইলে আমার ছবি দেওয়া উচিত। দুজনের অনুরোধে প্রোফাইল পিকচারে পরিবর্তন করেছি। পরিবর্তন হয়েছে এই পৃথিবীতেও করোনাকালে না ফেরার দেশে চলে গেছে অনেকেই।
ছবি তোলায় অনীহা থাকলেও ছেলে বেশ শিস বাজায় তাঁর আপন মনে। ওকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছি। শুভেচ্ছাস্বরূপ কবিতাটি তোমাকে পাঠালাম।
শিস
তোমাকে কবে শেষ চিঠি লিখেছি
মনে নেই
তোমার কি মনে আছে
তুমি কি লিখেছ কখনো আমাকে
ডিভাইসে বাংলা অক্ষর টাইপ করায়
লেখা আর হয়ে ওঠে না এখন আমার
কাগজে নিজের লেখা চিনতে নিজেরই
কষ্ট হয় ভীষণ
প্রায় দেড় যুগ আগে শূন্যে ছুড়ে দেওয়া
সেই শিশুটি এখন
আমার কিশোর বালক শিস বাজায় আনমনে
হরেক রকমের শিস
কখনো সখনো
পড়ার টেবিলে, দীর্ঘ শাওয়ারে
এমনকি কিচেনে বাসন ধোয়ার সময়।
ইচ্ছা হয় জিজ্ঞেস করি
তুমি কি ঘুমের ঘোরে শিস দাও
কিংবা স্বপ্নে কোনো পরি দেখে
তোমাকে কি পাঠাব নীল ইনভেলাপে
আমার ছেলের বাজানো
নানান ররকমের শিস।
তুমি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায়।