রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘে ভোট এবং বর্তমান পৃথিবীর হালচাল

এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর এই যুদ্ধসম্পর্কিত বিষয় নিয়ে জাতিসংঘে কয়েকবার ভোটাভুটি হয়। বর্তমান পৃথিবীর গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যার জন্য এসব ভোটের ফলাফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বশেষ ১২ অক্টোবর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইউক্রেনের ৪টি এলাকা রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তির নিন্দা জানিয়ে ভোটাভুটি হয়। কিছুদিন আগে রাশিয়ার একতরফা ও লোকদেখানো রেফারেন্ডামের ফল হিসেবে ওই এলাকাগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যোগ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রাশিয়া চাচ্ছিল জাতিসংঘের এ ভোট যাতে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ দেশের আপত্তির মুখে এ আবদার টেকেনি। এমনকি ভারতও এর বিরোধিতা করেছিল।

রাশিয়ার গণভোটের নিন্দা জানিয়ে ১২ অক্টোবরের ভোটাভুটিতে মাত্র ৫টি দেশ রাশিয়ার পক্ষে ভোট দেয় (যাদের সবাই ২০১৪ সালেও রাশিয়ায় ক্রিমিয়া অন্তর্ভুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছিল জাতিসংঘে)। এ দেশগুলো হচ্ছে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, বেলারুশ ও নিকারাগুয়া। রাশিয়ার বিপক্ষে, অর্থাৎ জাতিসংঘের নিন্দা জানানোর পক্ষে ভোট দেয় ১৪৩টি দেশ। ভোট প্রদানে বিরত থাকে ৩৫টি দেশ, যার মধ্যে চীন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সুদান, ইরিত্রিয়া, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ আফ্রিকা আছে।

আমেরিকার সঙ্গে তেল ইস্যুতে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও তারা রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দেয়। খুব অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, মিয়ানমার কিন্তু রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে, যা আগে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের ভোটও পড়েছে রাশিয়ার বিপক্ষে।

এর সঙ্গে ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পরে এর বিরুদ্ধে জাতিসংঘে ভোটাভুটির একটা তুলনা করা যায়, যেখানে প্রস্তাবের পক্ষে ও রাশিয়ার বিপক্ষে ১০০টি দেশ ভোট দেয়। সে সময় রাশিয়ার পক্ষে ভোট পড়েছিল ১১টি, পূর্বোক্ত ৫ দেশের সঙ্গে যোগ হয়েছিল সুদান, কিউবা, ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া, জিম্বাবুয়ে ও আর্মেনিয়া। চীন, ভারত, বাংলাদেশসহ মোট ৫৮টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল।

৭ এপ্রিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে রাশিয়ার পদাধিকার স্থগিত করার প্রস্তাবের ওপর ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এ ভোটে রাশিয়া কিছুটা ভালো করে, কারণ অনেক দেশই রাশিয়ার বিপক্ষে থাকলেও তারা চায়নি রাশিয়ার পদ স্থগিত হয়ে যাক।

জাতিসংঘের প্রস্তাবের পক্ষে ও রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট পড়ে ৯৩টি। রাশিয়ার পক্ষে ভোট পড়ে ২৪টি, যাদের মধ্যে চীন, ইরান ও ভিয়েতনাম রয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ ৫৮টি দেশ।  

২৪ মার্চ জাতিসংঘে ইউক্রেনের সাধারণ জনগণকে রক্ষা ও সেখানে মানবিক সাহায্যের প্রবেশ দাবি করে এবং সেই সঙ্গে জনজীবন বিপন্ন করায় রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে আরেকটি ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাতিসংঘের প্রস্তাবের পক্ষে ১৪০টি ভোট পড়ে, যাদের মধ্যে বাংলাদেশও ছিল। বিপক্ষে, অর্থাৎ রাশিয়ার পক্ষে পড়ে ৫টি ভোট—বেলারুশ, রাশিয়া, ইরিত্রিয়া, উত্তর কোরিয়া ও সিরিয়া। ভোটদানে বিরত থাকে ৩৮টি দেশ, যাদের মধ্যে ছিল ভারত, চীন, ইরান, ভিয়েতনাম।

এ বছরের ২ মার্চ ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা ও সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে যে ভোটাভুটি হয়েছিল, তাতে দেখা যায় জাতিসংঘের প্রস্তাবের বিপক্ষে অর্থাৎ রাশিয়ার পক্ষে ভোট পড়েছে ৫টি—বেলারুশ, রাশিয়া, ইরিত্রিয়া, উত্তর কোরিয়া ও সিরিয়া। রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট পড়েছে ১৪১টি। ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশসহ ৩৫টি দেশ, যাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভারত ও চীন। ভোটে অনুপস্থিত ছিল ১২টি দেশ।  

সব কটি ভোটেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সব দেশ স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অনেক দেশ ভোটের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় রাশিয়ার বিপক্ষে বা নিরপেক্ষ ছিল। কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটসভুক্ত দেশগুলো এমনকি সিএসটিওর সদস্যদেশগুলোও শক্তভাবে রাশিয়ার পক্ষে দাঁড়ায়নি। ইউক্রেনে হামলার আগে চীন-রাশিয়ার সম্পর্কের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটলেও চীন ইউক্রেন ইস্যুতে যথাসম্ভব নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে,  রাশিয়াকে সামরিকভাবে সাহায্য করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখনো।  

তথ্যসূত্র
১. ১২ অক্টোবরের ভোট
UN condemns Russia’s move to annex parts of Ukraine
২. ২৭ মার্চ ২০১৪ তারিখের ভোট
United Nations General Assembly Resolution 68/262
UN General Assembly votes to suspend Russia from the Human Rights Council
৩. ৭ এপ্রিলের ভোট
UN suspends Russia from human rights body over Ukraine abuses
United Nations General Assembly Resolution ES‑11/3
৪. ২৪ মার্চের ভোট
Ukraine: General Assembly passes resolution demanding aid access, by large majority
৫. ২ মার্চের ভোট  
General Assembly resolution demands end to Russian offensive in Ukraine