একটি সুউচ্চ পাথরের বেদির ওপর দাঁড়িয়ে তিনি। মাথা একটু ঝুঁকে, বাঁ হাতে বই আর ডান হাতে ইশারা। ইশারায় যেন বলছেন, তোমরা শান্ত হও। ধৈর্য ধর। যেমন শিক্ষক তাঁর ছাত্রদের উপদেশ দেন। দেবদূতের মতো মূর্তিটির পরনে আলখাল্লা আর গলায় ঝুলন্ত বিশাল চাদর। সবই মর্মর পাথরের। মূর্তিটি দুই চোখ মেলে সালামাংকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে তাকিয়ে। মূর্তিটি কোনো রাজা বাদশাহ বা সম্রাটের নয়, একজন অধ্যাপকের।
এ অধ্যাপক লুইস ডি লিয়ন। তিনি প্রাচীন সালামাংকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়ের তুখোড় ছাত্র ও অধ্যাপক ছিলেন। লুইস ডি লিয়ন ১৫৪১ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে সালামাংকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। এর পাশাপাশি গ্রিক, হিব্রু ও ল্যাটিন ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন। ১৫৫২ সালে টলেডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থিওলজি বা ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। পরে সালামাংকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে ওই একই বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর একই বছরে থিওলজির অধ্যাপক হিসেবে সালামাংকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের শতাধিক দেশে ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়েছে। জ্ঞানের ফেরিওয়ালাদের নিয়ে লেখা প্রকাশিত হচ্ছে ‘দূর পরবাস’-এ।
১৫৬১ সালে অধ্যাপক লুইস তাঁর কাজিন ইসাবেল ওসোরিয়োর জন্য ল্যাটিন থেকে স্প্যানিশ ভাষায় বাইবেলের ‘সং আব সংস’ ভার্সটি অনুবাদ করেন। ইসাবেল ওসোরিও ছিলেন চার্চের নান। অনুবাদকর্মটি এতই সুখপাঠ্য হয় যে ছাত্রছাত্রী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিচিতজন গোপনে তা কপি করে পরস্পরের মধ্যে বিলি করে। কিন্তু সে সময় বাইবেলের কোনো অংশ স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করা ছিল অপরাধ। কারণ, ল্যাটিন ছিল স্বর্গীয় আর স্প্যানিশ ছিল রাস্তার ভাষা। কিন্তু অনুবাদকর্মটি গোপন থাকেনি। এ সময় দুজন অধ্যাপক ১৫৭১ সালে অধ্যাপক লুইসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। বিচারে অধ্যাপক লুইসকে চার বছরের জেল দেওয়া হয়।
কারাবরণের সময়ে সক্রেটিসকে হেমলক বিষ পান করতে হয়েছিল। সক্রেটিস জেল পালানোর সুযোগ পেয়েছিলেন কিন্তু পালাননি। তিনি জানতেন, তাঁর প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। অন্যায় করা হলো অধ্যাপক লুইসের প্রতিও। তাঁকে জেল দেওয়া হলো দীর্ঘ চার বছরের। অন্যায় বিচারের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এবং দীর্ঘ চার বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে। সালামাংকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এটি এক কলঙ্কময় অধ্যায়। দীর্ঘ চার বছর পর কলঙ্কময় অধ্যায় শেষে অধ্যাপক লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। ফিরে আসে ছাত্ররাও।