মায়ের হাতে পালংশাক এখনো মিস করি

আমি কিছু দিবসকে সমর্থন করি না। তার মধ্যে মা দিবস একটি। সন্তানের জন্য যেমন মায়ের কাছ থেকে ভালোবাসা এক দিনে শেষ বা শুরু হয় না, ঠিক তেমনি মায়ের জন্যও সন্তানের ভালোবাসা। কোনো বিপদে সন্তানের জন্য দুনিয়ার আর কেউ না কাঁদলেও মায়ের কান্না চলতেই থাকে। মা কিন্তু শুধু ওই মা দিবসে এসেই কাঁদবে না।

আমার জানা নেই কে এ দিবসের আবিষ্কারক। ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করলে হয়তো পেয়ে যায়, কিন্তু ইচ্ছাও করেনি কখনো। দিবসটির জন্মের ইতিহাসও খুঁজতে যাইনি। হয়তো বিশ্বের কোনো একজন মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেছেন, আর আমরা মানবজাতি হুমড়ি খেয়ে পড়েছি। বাবা দিবসও আছে, জানি। মা দিবস আর বাবা দিবস কেন আলাদা হলো? এখানেই তো বিচ্ছেদ সৃষ্টি করা হয়েছে। কোনো একদিন হয়তো কোনো এক পণ্ডিত চাচা দিবস, চাচি দিবস, মামা দিবস বা খালা–খালু দিবস বানিয়ে নোবেল পুরস্কার জিতে নেবেন। তবে মা দিবসের আগে নানি দিবসটি হওয়া জরুরি ছিল।

মা দিবস নিয়ে লেখার ইচ্ছা আমার একটুও ছিল না। কিন্তু দিবসটি নিয়ে প্রথম আলোর আয়োজনে যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তাতে আমার দৃষ্টিতে অন্যান্য মিডিয়া থেকে বিশাল ও সেরা আয়োজন। সুতরাং এ আয়োজনের মধ্যে আমার একটু অংশীদারত্ব হওয়ার বাসনা জাগল মাত্র।

মাকে নিয়ে কী লিখব? লিখে কি কেউ শেষ করতে পারে? এই স্বল্প লেখার মধ্যে মাকে নিয়ে লেখা যায় না। আমি হয়তো কিছু লিখে পত্রিকায় ছাপিয়ে দিলাম। মা আমার লেখাটি নিশ্চয় পড়বে। যে বিষয়গুলো লেখা হলো, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যে বিষয়গুলো লেখা হলো না, আর মার মনে যদি সেই বিষয়গুলো উঁকিঝুঁকি মারতে থাকে, আমি বলতে পারব না সেই বিষয়গুলো নিয়ে মা কী ধারণায় থাকবে। মা আমাদের সবাইকে ক্ষমা করিও।

তবে এটা নিশ্চিত যে আমার মায়ের মতো সবার মা নিজ নিজ সন্তানকে জীবন দিয়ে সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিয়ে থাকে। তাই সব সন্তানই তার মায়ের কল আগলে থাকে। একজন সন্তান যত দারিদ্র্যের মধ্যে জন্ম নিক না কেন, তাকে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাসায়ও রেখে আসা হয়, তবে সে মায়ের কল ছাড়া সেখানে থাকবে না।

আমার মাকে নিয়ে শুধু একটা ঘটনা লিখতে চাই। বহু মনে আছে, বেছে নিলাম যা, তা লিখছি। একবার জাপান যাওয়ার জন্য চেষ্টা করলাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যে চলে যাব বলে মনে হচ্ছিল। তখন শীত শীত ভাব। আমার মা নিজে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে উঠানের এক পাশে পালংশাকের বীজ বুনেছে।

পালংশাক আমার অতি প্রিয়। মায়ের বুনা পালংশাক কেবল অঙ্কুরোদগম হয়েছে। আমারও জাপান যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। মা আমার জন্য সেই সবেমাত্র অঙ্কুরোদগম পালংশাক সব তুলে এনে ইলিশ মাছ দিয়ে চচ্চড়ি রান্না করে খেতে দিল। পালংশাকের গাছ এতটা ছোট ছিল যে সব শাক দিয়ে তরকারি হয়েছিল মাত্র এক চামচ। মা আমার মা। মায়ের হাতের রান্না, কত্তো মজা।

মাকে দেখি না ১৫ বছর। ফোনে কথা হলেই তার প্রথম কথা, ‘মনি, তুমি কবে আসবা?’ আমি এখনো তার কাছে মনি।

*লেখক: মাহফুজার রহমান, কেপটাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা

দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]