মালয়েশিয়ার মালাক্কা দ্বীপ ভ্রমণ

আমার ভ্রমণ পরিক্রমায় অনেকগুলো দেশ থাকলেও মালয়েশিয়ার মালাক্কা দ্বীপ ভ্রমণ করে অনেক আনন্দ পেয়েছি। তাই একটু সুযোগ পেলেই মালয়েশিয়ায় যাই। মালয়েশিয়া একটি মুসলিম দেশ, খাবারদাবার বেশ সুস্বাদু, বিশেষ করে মি গুরিং লেলে পিচ্চ্ছেল এই ধরনের খাবার খুবই ভালো লাগে। মালয়েশিয়া এক ঋতুর দেশ, এখানে প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়। সিঙ্গাপুরের মতো আবহাওয়া অনেকটা সহনশীল। দিনে একটু গরম অনুভূত হলেও রাতে ঠান্ডা। আপনারা ইচ্ছা করলে মালাক্কা যেতে পারেন, আশা করি ভালো লাগবে।

আজ থেকে ৫০ বছর আগেও মালয়েশিয়া এত সমৃদ্ধিশালী দেশ ছিল না, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঠিক দেশ পরিচালনার কারণে আজ মালয়েশিয়া একটি উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। দ্রুতগতিতে দেশ এগিয়ে চলছে। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের সন্নিকটে সিলাঙ্গরে গড়ে উঠেছে প্রচুর শিল্পকারখানা, যেখানকার বেশির ভাগ শ্রমিক বাংলাদেশের ও ইন্দোনেশিয়ার।

মালয়েশিয়ার রাস্তাগুলো সুপ্রশস্ত। রাস্তার দুদিকে এবং মাঝখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি ও ফুলের বাগান শোভা পায়। তবে দুঃখজনক হলো সত্যি মালয়েশিয়ান পুলিশেরা ঘুষ–দুর্নীতির সাথে জড়িত। এরা প্রয়োজনে বাকিতে ঘুষ লেনদেন করে, যদি আপনার নিকট না থাকে, তাহলে মোবাইল নম্বর রেখে দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এবং টাকা আদায় করে। মালয়েশিয়ার স্ট্রিটফুড খুবই জনপ্রিয় আর এসব বেশির ভাগ পরিচালনা করেন মালয় মহিলারা। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি বিভিন্ন খাবারের পসরা নিয়ে এঁরা বসে থাকেন।

দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি মালয়েশিয়ার চারদিকে পামবাগান আর রাবারবাগান, ফুল–ফলের গাছে সুশোভিত। সিলাঙ্গর শহরের একটি শিল্পাঞ্চল এলাকার নাম চুনগাইবুলু, সেখানে জনসাধারণের বসবাস খুবই কম। একটি এলাকার নাম কাম্পূংবারু, সেখানে আমি গিয়ে দেখতে পেলাম রাস্তার পাশে শত শত পেঁপেগাছ, গাছের পেঁপে পেকে হলুদ হয়ে আছে। পাখিরা খাচ্ছে পেয়ারা, গাছে পেয়ারা ধরে পেকে আছে। সারা বছরই আম ধরে সেখানে, একদিকে দেখা যায় আমের বৌল অন্যদিকে আম পেকে আছে, বিচিত্র এক ঋতুর দেশ এই মালয়েশিয়া।

মালয়েশিয়ার রাস্তাগুলো সুপ্রশস্ত, রাস্তার দুদিকে এবং মাঝখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি ও ফুলের বাগান শোভা পায়। তবে দুঃখজনক হলো সত্যি মালয়েশিয়ান পুলিশেরা ঘুষ–দুর্নীতির সাথে জড়িত। এরা প্রয়োজনে বাকিতে ঘুষ লেনদেন করে, যদি আপনার নিকট না থাকে তাহলে মোবাইল নম্বর রেখে দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এবং টাকা আদায় করে।

মালাক্কাকে মালয়েশিয়ার ইতিহাসের শহর বলা যায়। আসল নাম মেলাকা হলেও সবাই মাল্লাকা নামেই চেনে। মালাক্কাকে অনেকে মালয়েশিয়ার আন-অফিশিয়াল রাজধানীও বলে থাকেন। কুয়ালালামপুর থেকে বাসে গেলে ২ ঘণ্টার পথ। এখানে যে নদী আছে, তা মালাক্কার প্রধান নদী। নদীর পাড় বাঁধানো, প্রশস্ত ওয়াকওয়ে, গাছপালা এত বেশি যে আপনার মনে হবে বাগানের মধ্য দিয়েই হাঁটছেন। রিভার ক্রুজ টিকিট কাউন্টার থেকে ১৫ রিঙ্গিতের বিনিময়ে টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে যান ওয়াটার বাসে ওঠার জন্য। একটি ওয়াটার বাসে ৩০ জনের বেশি আসন থাকে না। তবে খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না। সঙ্গে সঙ্গে পরের বাসটি এসে হাজির হবে। মালাক্কা নদীটি মালাক্কা প্রণালি থেকে উত্পন্ন হয়ে চপলা-চঞ্চলা মেয়ের মতো পুরো মালাক্কা (Malacca) শহর ঘুরে বেড়িয়েছে। আর মালাক্কা শহরের অধিকর্তা তার যত্ন নিতে এতটুকু কার্পণ্য করেননি। নদীর দুই পাড় বাঁধাই আর সবুজায়ন চোখে পড়ার মতো। এ নদী দিয়ে ওয়াটার বাসে করে পুরো শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ঝঙ্কার স্ট্রিট ও হিরেন স্ট্রিটকে আলাদা করেছে মালাক্কা নদীটি।

এখানে আছে ১১০ মিটার উঁচু মালাক্কা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ টাওয়ারের বৈশিষ্ট্য হলো এটি ঘূর্ণমান। পুরো মালাক্কাকে একবার দেখে নিতে পারেন মাত্র ৭ মিনিটে। ওখান থেকে চলে যেতে পারেন নদীর পাড়ে, যেখানে রয়েছে একটি বড় কাঠের জাহাজ, যেটি মালাক্কার ঐতিহ্যকে ধারণ করে। এককথায় বলতে গেলে মালাক্কা মালয়েশিয়ার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে লালন করে চলছে প্রতিনিয়ত। এখানকার খাবারদাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, চলনে-বলনে সবকিছুতেই রয়েছে পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য। মালাক্কার আরেকটি বড় গুণ হচ্ছে পায়ে হেঁটে চলা দূরত্বের মধ্যে ১০-১৫টি দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় স্পট পেয়ে যাবেন। এর মধ্যে মালাক্কা সুলতানের বাড়ি, হেরিটেজ মিউজিয়াম, সেন্ট পল চার্চ, মালাক্কা ফেমোসা, মালাক্কা ডাচ স্কয়ার, মালাক্কা স্কাই টাওয়ার, স্থাপত্য মিউজিয়াম, মসজিদ ট্রানকুরাহ, মেকাও গ্যালারি, মালাক্কা ওয়ান্ডার ল্যান্ড থিম পার্ক, স্বাধীনতা চত্বর, বার্ড পার্ক আর মালাক্কা রিভার ক্রুজ প্রায় একসঙ্গেই বলা যায়।

স্থাপত্য মিউজিয়ামে জাহাজ, রেলগাড়ি, উড়োজাহাজসহ বিভিন্ন স্থাপত্য নকশার দেখা মেলে।

পর্যটকদের জন্য মালাক্কার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ‘আফা মুসা পার্ক’। বিনোদনের সব আয়োজনসহ পার্কটিতে আছে চিড়িয়াখানা। এই চিড়িয়াখানাতে হিংস্র প্রাণী বাঘের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করা যায়। বাঘ ছোঁয়া যায়, মনে হবে বাঘ যেন মানুষের বন্ধু। এই পার্কে থাকা বাঘগুলোকে ছোটবেলা থেকে এমনভাবে লালন-পালন করা হয়েছে, যেন তারা মানুষের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করে।

এখানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে ‘বেচা’। বেচা হলো রিকশা বা অটো আকৃতির যান, যা কর্কশিটের তৈরি অনেক রকমের পুতুল বা পাখি দিয়ে সাজানো থাকে। আর সবার ওপরে থাকে প্রজাপতি আকৃতির একটি ছাতা। শতভাগ বিনোদন দিতে যানগুলোয় বাজতে থাকে হিন্দি, ইংরেজি ও মালয় ভাষার রোমান্টিক সব গান। ফলে প্রেমিক যুগল থেকে শুরু করে দর্শনার্থীর কাছে বেচা বেশ জনপ্রিয়।

কোথায় খাবেন—
খেতে চাইলে চলে যেতে পারেন ঝঙ্কার স্ট্রিটে। চারদিকে সুনসান নীরবতা, খুবই পরিপাটি। নাশতার জন্য বসে পড়ুন একটি স্ট্রিট স্টলে। ভাত, মুরগির মাংস, শাকসবজি, চিংড়ি আর শুঁটকি সবই পেয়ে যাবেন এখানে। এখানকার ফুডকোর্টজুড়ে সামুদ্রিক মাছের তৈরি বিভিন্ন খাবারের আধিপত্য।

কীভাবে যাবেন—

কুয়ালালামপুরের তাসিক বন্দর সালাতান (টিবিএস) বাসস্টেশন থেকে বাসে সরাসরি মালাক্কা। প্রতি ঘণ্টায় বাস আছে। ভাড়া ১০-১৫ রিঙ্গিত।

কোথায় থাকবেন—

মালাক্কা শহরে অনেক হোটেল ও গেস্টহাউস রয়েছে। প্রতি রাতের জন্য ৫০ থেকে ৩০০ রিঙ্গিত গুনতে হবে। তবে সাশ্রয়ীভাবে থাকতে চাইলে ঝঙ্কার স্ট্রিটে গেস্টহাউসে থাকতে পারেন। প্রতি রাতের খরচ ৫০-১০০ রিঙ্গিত।