দুর্নীতি দমনে ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়তে হবে
আমরা সবাই বেশ বলছি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে। কীভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব এবং কখন কীভাবে সেটা শুরু করব, তা কি পুরো জাতির কাছে পরিষ্কার? আমি অতীতে লেখালেখির শুরুতে একটি বিষয়ের ওপর ছোঁয়া দিয়েছিলাম, তা হলো দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে প্রযুক্তির যুগে ক্যাশ টাকার পরিবর্তে কার্ডের মাধ্যমে শতভাগ কেনাবেচা চালু করা যেতে পারে। পুরো দেশ এখন দুর্নীতিযুক্ত। দুর্নীতি নিয়ে কথাও কিন্তু হচ্ছে প্রতিদিন, তবে দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। আমি শতভাগ নিশ্চিত, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ পেতে ক্যাশলেস বাংলাদেশের বিকল্প এ মুহূর্তে নেই। যাই হোক, এটা ছিল কিছু চিন্তাধারা এবং ভালোমন্দের ওপর চোখের পলকে একটু ঝলক। আমার সেদিনের সে ঝলক ছিল অনেকের কাছে স্বপ্নের দৃশ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট হতে হবে, প্রয়োজনে নতুন মিশন, ভিশন ও পলিসি দাঁড় করাতে হবে।
সুইডেন বলতে গেলে বিশ্বের প্রথম একটি দেশ, যে দেশটি প্রায় শতভাগ ক্যাশলেস এখন। কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে স্থিতিশীল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সেটাকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে। আজ আমি ক্যাশলেস বেচাকেনার ওপর পরিষ্কার একটি ছবি তুলে ধরব, যা শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব জীবনের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। সুইডেনের শতভাগ কেনাকাটায় প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং সুইডেন প্রযুক্তির দিক দিয়ে বিশ্বের ফ্রন্ট পেজে রয়েছে। ভিসা, মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস এবং সুইচ অ্যাপসের ব্যবহারে এক অগ্রগামী জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। টেলিফোন ও টেলিভিশনের ব্যবহারে কোনো একসময় কেব্ল ছাড়া কথা বলা বা ছবি দেখা সম্ভব ছিল না। আজ কেব্ল (ওয়্যারলেস) ছাড়াই আমরা টেলিফোন ও টেলিভিশন ব্যবহার করছি।
প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির কারণে সবকিছুর পরিবর্তন শুরু হয়েছে, শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় শুধু অংশগ্রহণ নয়, টিকে থাকার জন্য অনেকে উঠেপড়ে লেগেছেন। দেশে অরাজকতার মূল কারণ কী, তা যদি শনাক্ত করা না হয়, তাহলে কোনো দিনও সম্ভব হবে না দুর্নীতিমুক্ত পরিবার, সমাজ বা একটি দেশ গড়ে তোলা। যুগ যুগ ধরে ধর্ম, পুলিশ প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন—এসব সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর কোথাও কখনো অন্যায়কে অ্যালিমিনেট করতে পারেনি। বরং পরিবার, সমাজ ও দেশে দুর্নীতি, অবিচার ও অত্যাচারের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছে।
সততার অবনতি বা অবক্ষয় রোধে সৃষ্টি হয় সিস্টেমের। মানবজাতিকে শাসন, শোষণ বা ভাষণে নয়, সিস্টেমের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সিস্টেম বা পদ্ধতির পরিবর্তন করলে হাজার ইচ্ছা থাকলেও উপায় থাকবে না দুর্নীতি বা অন্যায় করার। কেনাবেচা, আদানপ্রদান বা বিনিময় যখন নথিভুক্ত উপায়ে হবে, তখন হিসাবে গরমিল হলে বা দুর্নীতির মধ্যে অর্থ পাচারের চেষ্টা করলে সহজ উপায়ে তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
সুইডেনে আমি প্রতিদিন কোথায়, কখন, কাকে, কীভাবে কত টাকা দিয়েছি বা কী কিনেছি—সবকিছু মনিটর করা হচ্ছে। ব্যক্তির দৈনন্দিন অর্থনৈতিক ট্রানজেকশন হিসাব থাকে। কাগজের টাকার মাধ্যমে কোনো রকম কেনাবেচা নেই এখানে, যা ঘটছে এর সবকিছুই ডকুমেন্টেড। বর্তমান যুগে সহজ উপায়ে নানা ধরনের যন্ত্রপাতির সাহায্যে কেনাকাটা বা মনিটরের ব্যবস্থা রয়েছে। আমার প্রশ্ন জাতির কাছে, আসলে কি আমরা পরিবর্তন চাই? আমরা কি সবাই মিলেমিশে সুন্দরভাবে বসবাস করতে চাই? নাকি যেমন আছি তেমন থাকতে চাই? যাঁরা সৎ পথে চলতে রাজি, তাঁরা বলবেন ইয়েস, আমরা পরিবর্তন চাই।
বাংলাদেশ যেহেতু স্যাটেলাইট আকাশে পাঠিয়েছে, তাই প্রত্যাশা থাকতেই পারে সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর। শুধু বাংলাদেশ নয়, আশপাশের দেশও কাগজের টাকা ধরে রাখতে চায়। কারণ একটাই, তা হলো দুর্নীতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকা। একই সঙ্গে লোকদেখানোর জন্য গঠন করা হয়েছে দুর্নীতি দমন বিভাগ, যা কাইন্ড অব গুড ফর নাথিং। উদ্দেশ্য যদি সত্যিই দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া হয়, তাহলে কাগজের টাকাযুক্ত পদ্ধতির ব্যবহার ছেড়ে ক্রেডিট কার্ডে কেনাবেচা করতে কষ্ট কোথায়?
দেশের বাজেটপ্রক্রিয়ায় বিশাল আকারে দুর্নীতি, যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে সিস্টেমের আবির্ভাব ঘটানো ছাড়া আছে কি অন্য কোনো সমাধান? আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পুরো পৃথিবী কাগজের টাকার লেনদেন বন্ধ করে দেবে। তখন কালো টাকা কীভাবে সাদা হবে, তা জানি না। তবে ধরা খেতে হবে, এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। সরকারের উচিত হবে দেশে কাগজের টাকা ধাপে ধাপে বন্ধ করা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো। বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যবস্থা হলে দরগায় মন দিতে হবে না, মিথ্যা ফকির সাজা লাগবে না, অন্তর থাকবে সুন্দর এবং সাধনা বিফলে যাবে না।
যেহেতু দেশে দুর্নীতির কথা সবাই বলেন, এর থেকে রেহাই পেতে হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে নয়, তা কাজে দেখাতে হবে। জানি, প্রিয় দেশবাসীর অনেকেই আমার এ ধারণাকে অপছন্দ করবেন। তবে এ অপছন্দই হবে নতুন প্রজন্মের জন্য বেঁচে থাকার এক স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি, জনমের সাধ মেটাতে এবং মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকতে সততার বিকল্প নেই।
মরতে সবার হবেই, শুধু কবে তা আজও অজানা। ঘৃণা নয় প্রীতি, দুর্নীতি নয় নীতি, অন্ধকার নয় আলো, তাই তো পৃথিবী তোমারে বাসি ভালো। ভুবন কাঁদবে আমি চলে গেলে, মধুর স্মৃতি হয়ে থাকবে আমার কর্মের ফল, যে কর্মের ফলে থাকবে না ঘৃণা, থাকবে শুধু সবার প্রাণঢালা ভালোবাসা—এটাই হোক সেই অজানা দিনগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে–গুছিয়ে রেখে যাওয়ার নতুন স্বপ্ন ও সাধনা।