জার্মানির হামবুর্গে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বর্ণমালার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

বন্দর নগরী হামবুর্গে এখনো ফাল্গুনের ছোঁয়া লাগেনি। জরাগ্রস্ত শীতের দেশে শিমুল-পলাশ-কৃষ্ণচূড়ারা ফোটে না। পায়ের নিচের যে মাটি, চারিদিকের পরিবেশ-প্রতিবেশ সবকিছু ভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে মোড়ানো। তবুও এখানে বাংলা আছে, দারুণভাবে বেঁচে আছে বাংলাদেশ। প্রবাসে বসবাসরত প্রত্যেক বাঙালির হৃদয়ে বাস করে বাংলা ভাষা ও একটি বাংলাদেশ। সেই আবেগ ও ভালোবাসার ফসল বর্ণমালা—প্রবাসে বাংলা শেখার স্কুল।

গত শনিবার (৪ মার্চ) নগরীর ফার্মজেনায় ব্লাউয়ার সালুন মিলনায়তনে উৎসবমুখর পরিবেশে বর্ণমালার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপিত হয়। ২০২২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সমিতি, হামবুর্গের উদ্যোগে বর্ণমালার যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে জার্মানিসহ পাঁচটি দেশের শিক্ষার্থীরা বর্ণমালায় বাংলা শিখছে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে বর্ণিল আয়োজনে সাজানো হয়েছিল বর্ণমালার অনুষ্ঠানসূচি।

বর্ণমালার শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার সমাপনী পরীক্ষার মধ্য দিয়ে দিবসটি শুরু হয়। এরপর বাংলাদেশকে উপজীব্য করে কচিকাঁচাদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এদিকে বাংলা পার্বণের উদ্যোগে বইমেলার আয়োজন করা হয়, ছিল বাংলা দেয়াল পত্রিকা। এরই মধ্যে বাংলাদেশি মায়েদের হাতে তৈরি নানা স্বাদের পিঠাপুলির মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে গোটা মিলনায়তন। সমবেত উপস্থিতি কিছুটা সময়ের জন্য যেন প্রিয় বাংলাদেশেই হারিয়ে গিয়েছিল।

বর্ণমালার সমন্বয়ক রবিউল এইচ চৌধুরী ও সৈয়দ মারজান উল হাসানের সঞ্চালনা ও পরিচালনায় পুরস্কার বিতরণী ও আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা আতিকুর রহমান, জামিল আহমেদ, আবদুল মাবুদ, ওমর ফারুক, কামাল উদ্দীন, মৃদুল রয়, হাসিনা মাহবুব প্রমুখ।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, বর্ণমালা প্রবাসে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি প্রজন্ম বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্নপ্রায়। বাংলাদেশ সমিতি বর্ণমালা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই প্রজন্মকে তাদের শিকড়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ, এই বাংলা ভাষাই আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রধান উৎস ধারা।

তাঁরা বলেন, বাংলা ভাষা ও শহীদদের সম্মানে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদ্‌যাপন করে। এ বিরল গৌরব শুধু বাঙালিদের। একটি জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির পেছনে তাদের ভাষার বিস্তার বড় একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তাই শহীদ সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতদের রক্তঋণ পরিশোধ করতে, বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সম্মানের আসনে সমাসীন করতে বাংলা ভাষাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে হবে।

বর্ণমালাকে একটি স্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্য নিজস্ব ঠিকানা প্রয়োজন। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জার্মানিতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়। মধ্যাহ্ন ভোজনের পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত আর একুশের জনপ্রিয় গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ দিয়ে এ পর্বটি শুরু হয়। বর্ণমালার ছোট্ট সোনামণিদের যেমন খুশি তেমন সাজো, একক ও দ্বৈত অভিনয়, স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি দিয়ে সাজানো ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। এ সময় কেক কেটে বর্ণমালার প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখা হয়।

লেখক: জাহিদ আল আমীন, সহসভাপতি, বাংলাদেশ সমিতি, হামবুর্গ, জার্মানি।