আমার আনন্দ

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

যৌবনের রোদেলা দুপুরে
আমার আনন্দ ছিল গ্রীষ্মের কাঁচা আমের মতো—
তরতাজা, টক-ঝাল-নুনমাখা, কামনার কাঁপুনি জড়ানো,
ভালো খাবার, রঙিন জামা,
বন্ধুরা যেন ছিল একেকটা বেহালার সুর।
আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম—
বাহ, কী মজা—এই তো জীবন!
রাস্তার মোড়ে চায়ের কাপেই স্বর্গ নেমে আসত,
বাতাসে ছিল উন্মত্ত হাওয়ার নাচন।
কিন্তু আজ...
বয়সের পাতাঝরা সন্ধ্যায়
আমি খুঁজি ভিন্ন ধরনের আনন্দ—
যেখানে নিজের চাওয়া নয়,
অন্যের মুখে একটু হাসি যেন পূর্ণিমার আলো।
আমার কন্যাদের চোখের ধমকে যে ভালোবাসা লুকানো,
তাতে হৃদয়ে বাজে সন্তুষ্টির বাঁশি,
তাদের শাসনে আমি খুঁজি আশ্রয়,
তাদের উষ্ণ অভিমানে ফিরে পাই হারানো প্রাণ।
আজ আর হই না বহিঃপ্রকাশের কাঙাল—
একটি কবিতার জন্মেই মেলে অনন্ত আনন্দ।
যদিও কেউ পড়ে না,
তবু অক্ষরে অক্ষরে গড়ে তুলি আত্মার পরিশুদ্ধ প্রতিচ্ছবি।
রাতে, নিঃশব্দে—
আমি হাঁটি আল্লাহর দুয়ারে দুয়ারে,
ভেজা চোখে বলি: ক্ষমা করো প্রভু—তুমি দয়াময়!
আর ঠিক তখনই,
এক অদৃশ্য করুণা যেন ভরে তোলে আমার অন্তর্গত আকাশ।
এই যে অশ্রুঝরা আনন্দঘন প্রশান্তি—
এ এক অমোঘ রহস্য,
জীবনের সবচেয়ে বিশুদ্ধ নদী,
যা বহে নীরবে, গভীরে, স্বর্গীয় স্বস্তিতে।
আনন্দ এখন আর হই-হট্টগোলে নয়—
দুপুরে গাছের ছায়ায় নির্জনতায়,
উত্তাল বাতাসের ঢেউয়ে,
এক ফোঁটা শ্রাবণের জলে।
আনন্দ আজ ধ্যানের মতো—
নিসর্গ-নীরব, নিত্যনতুন এক আকাঙ্ক্ষার নাম।

‘দূর পরবাস–এ’ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]