শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মরণাঞ্জলি—‘জীবনে আমার যত আনন্দ’

শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর সম্মানে লন্ডনের দ্য ড্রাইভ মেথডিস্ট চার্চ মিলনায়তনে ‘জীবনে আমার যত আনন্দ’ শিরোনামের এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ছবি: লেখক

‘তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে’, ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেম গান’ কিংবা ‘তুমি যে গিয়াছ বকুল–বিছানো পথে’ গানগুলো প্রিয় ছিল শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর। গত ২২ জুন সন্ধ্যায় লন্ডনের দ্য ড্রাইভ মেথডিস্ট চার্চ মিলনায়তনে এ গানগুলোই গাওয়া হলো। পাঠ করা হলো তাঁর লেখা গদ্য ও কবিতা। আমাদের শিল্পকলার অন্যতম পথিকৃৎ এই শিল্পীকে নিবেদিত ‘জীবনে আমার যত আনন্দ’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় আনন্দধারা আর্টস ইউকের উদ্যোগে ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায়।

লন্ডনের শিল্পানুরাগী দর্শক-শ্রোতারা মুগ্ধ আবেশে উপভোগ করেন ভিন্ন স্বাদের এ আয়োজন। আনন্দধারা আর্টসের পরিচালক, বিশিষ্ট শিল্পী ও সংগঠক ইমতিয়াজ আহমেদের স্বাগত ভাষণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সূচনায় প্রদর্শিত হয় শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রের অংশবিশেষ। এরপর সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন শিল্পীর ছেলে অধ্যাপক মইনুল জাবের, কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান এবং দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম।

বক্তারা শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর বহুমাত্রিক শিল্পকৃতির নানা দিক তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের লোকায়ত শিল্পকে নিজস্ব চিত্রশৈলীতে আত্মস্থ করে কাইয়ুম চৌধুরী বাংলাদেশের রূপ তুলে ধরেছেন বিশ্বজনীন করে। কেবল চারু ও কারু শিল্পেই নয়, তিনি আলো ছড়িয়েছেন বিচিত্র মাধ্যমে। গ্রন্থের প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জায় হয়ে উঠেছেন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। চিত্রশিল্পের পাশাপাশি ছড়া-কবিতা এবং গদ্য রচনাতেও রেখেছেন মুনশিয়ানার স্বাক্ষর। কাইয়ুম চৌধুরী তাই আমাদের সব মননশীল প্রয়াসের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সুরুচি নির্মাণের নিপুণ কারিগর, প্রেরণার এক বাতিঘর। তাঁর শিল্পকে উপলব্ধি করার উপযোগী মানস তৈরি করতে হবে আমাদের। নতুন প্রজন্মের কাছে, বিশেষত যারা বেড়ে উঠছে প্রবাসে, পৌঁছে দিতে হবে এই অনবদ্য সৃষ্টিসম্ভারকে।’

সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তব্য দিচ্ছেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম
ছবি: লেখক

সংক্ষিপ্ত বক্তৃতানুষ্ঠানের পর পরিবেশিত হয় শিল্পীকে নিবেদিত আলেখ্যানুষ্ঠান ‘জীবনে আমার যত আনন্দ’। মৃত্তিকা সহিতার ভাবনা ও গ্রন্থনা পর্বে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর লেখা গদ্য-কবিতা পাঠের পাশাপাশি উপস্থাপিত হয় বাংলা গানের বিপুল ভান্ডার থেকে নির্বাচিত শিল্পীর প্রিয় কিছু গান। এতে শিল্পীরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ডি এল রায়, শচীন দেববর্মন, জসীমউদ্‌দীন প্রমুখের গান পরিবেশন করে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মোহিত করেন।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিচালনা করেন ইমতিয়াজ আহমেদ, আবৃত্তি ও পাঠে অংশ নেন উদয় শংকর দাশ ও সমর সাহা। একক সংগীত পরিবেশন করেন ইমতিয়াজ আহমেদ, মৃত্তিকা সহিতা ও অমিত দে। আনন্দধারা আর্টসের পক্ষে সমবেত সংগীতে যাঁরা অংশ নেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন কৃষ্ণ সাহা, জাহানারা পাশা, আবদুল হাফিজ, জিয়াউর রহমান সাকলায়েন, তারিফ আহমেদ, এ্যানি পারভীন, আর্থিকা চৌধুরী, শম্পা ভট্টাচার্য, তপতী সাহা, নন্দিতা সাহা প্রমুখ। যন্ত্রসংগতে ছিলেন অমিত দে, পিয়াস বড়ুয়া ও তানজিল তাহমিদ।

আলোচনায় বক্তব্য দিচ্ছেন কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান
ছবি: লেখক

অনুষ্ঠান শেষে উচ্ছ্বসিত দর্শকদের মন্তব্য, একজন চারু ও কারুকলা শিল্পীকে নিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী ও উপভোগ্য এই অনুষ্ঠান প্রমাণ করল বাংলাদেশের সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনের কৃতী ব্যক্তিদের নিয়ে এই ধরনের আয়োজন খুবই প্রয়োজন।