লিডসে কাব্যশীলনের শাস্ত্রীয় সংগীতসন্ধ্যায় দর্শকের উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্যের লিডস শহরে সাহিত্যপত্র কাব্যশীলনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুষ্ঠান ‘ক্রন্দন ও কুয়াশার গান’ শেষে হলভর্তি দর্শক উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, যুক্তরাজ্য–দক্ষিণ এশীয় শিল্পের অন্যতম শীর্ষ সংস্থা সৌধ–এর পরিচালক টি এম আহমেদ কায়সার এ উদ্যোগকে ‘লিডসে সাউথ এশিয়ান ধ্রুপদ শিল্পের এক নতুন যাত্রা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত নন্দনতত্ত্বের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মাট প্রিটচার্ড কোয়েল ভট্টাচার্যের গানকে ‘আত্মার শুশ্রূষা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
গত সোমবার (৬ মে) বিকেল চারটায় লিডসের মুরটাউন মেথডিস্ট চার্চে এ বিশেষ অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয়। অনুষ্ঠান শেষে হলভর্তি বিমোহিত দর্শক দাঁড়িয়ে শিল্পীদের সম্মান জানান। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কবি ও শিক্ষাবিদ সিতারা খান বলেন, ‘ভীষণ আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরছি। এই অপূর্ব সংগীতসন্ধ্যাকে কোনো ভাষা দিয়ে চিত্রায়িত করতে চাই না।’
কাব্যশীলনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কবি সৈয়দ আনোয়ার রেজা ও চিকিৎসক শারমিন নিজামের পরিচালনায় এ আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করেন ওস্তাদ রশিদ খানের জ্যেষ্ঠ সংগীতশিষ্য ভারতবর্ষে বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী কোয়েল ভট্টাচার্য। তবলা সংগত ও অপূর্ব এক তবলালহরি দিয়ে দর্শককে রীতিমতো বিস্ময়াবিষ্ট করে রাখেন পণ্ডিত শুভঙ্কর ব্যানার্জির দুই সংগীতশিষ্য কুন্তল দাস ও অনিরুদ্ধ মুখার্জি। হারমোনিয়াম সংগত করেন যুক্তরাজ্যে ভারতীয় উপশাস্ত্রীয় সংগীতের অন্যতম প্রতিনিধি সুমনা বসু। অনুষ্ঠানের শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন তৌফিক জামান।
সংগীত শুরুর পূর্বে বাংলা ভাষার কালজয়ী কবি কায়কোবাদ, জীবনানন্দ দাশ, মোহিতলাল মজুমদার ছাড়াও ইংরেজি ভাষার কিছু প্রধান কবির কবিতা আবৃত্তি করেন নার্গিস ফেরদৌস, কবি ও গল্পকার সোমা ঘোষ, মিতুল ইফফাত, নাজমা ইয়াসমীন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের সহকারী অধ্যাপক ও লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টোরাল রিসার্চ স্কলার মুনাসীর কামাল। স্বাগত বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্য সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি সৈয়দ শাহনুর।
সংগীতশিল্পী কোয়েল ভট্টাচার্য রাগ দুর্গা দিয়ে শুরু করেন, পরে দুর্গায় সুরারোপিত কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান ‘নহে নহে প্রিয়’ ও রাগ ভিমপলশ্রীতে সুরারোপিত ‘গোধূলি লগনে বুকের মাঝে’র অপূর্ব পরিবেশনা দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন হলভর্তি দর্শককে। তারপর ইয়েমান ও মিশ্র কিরোয়ানি রাগের গজল, টি এম কায়সারের মাঞ্জ খামাজ ও দেশ রাগে লেখা ও সুর করা বাংলা গানের অনন্য পরিবেশনার পর শ্রীধর কথকের প্রায় বিলুপ্ত একখানা অসামান্য টপ্পা দিয়ে শেষ করেন এই ‘অশ্রু ও কুয়াশার গান’।
কাব্যশীলনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার রেজা বলেন, ‘প্রথম অনুষ্ঠানেই দর্শকের কাছ থেকে আমরা যে সাড়া পেয়েছি, তা অভূতপূর্ব। এ জন্যে আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাখতে চাই পুরো কাব্যশীলন টিমের প্রতি, যারা বাংলাদেশে বসেও আমাদের অকুণ্ঠ সহযোগিতা করে গেছেন। এ অনুষ্ঠানে দর্শক ও শিল্পীদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি, একে পাথেয় করে আমরা সামনে আরও বৃহত্তর কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করব।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে টি এম আহমেদ কায়সার বলেন, এই অনুষ্ঠান লিডসের সাংস্কৃতিক ম্যাপে এক ঐতিহাসিক সূচনা। দর্শকেরা এসব আয়োজনকে কমিউনিটির দূরতম অংশগুলোতে প্রচার করে সিরিয়াস শিল্পের এই ক্রান্তিলগ্নে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখতে পারেন। সৌধ সুনিশ্চিতভাবেই এহেন উদ্যোগকে যতভাবে সম্ভব, সহযোগিতা করে যাবে।
*দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস: [email protected]