গ্রীষ্মের উষ্ণতায় যুক্তরাজ্যের লেক ডিস্ট্রিক্টের জলে সন্তরণ

কাবাডি খেলার পুরস্কার বিতরণী চলছেছবি: লেখকের সৌজন্য

যুক্তরাজ্যে এখন গ্রীষ্মের ভরা মৌসুম। একটু উষ্ণতার খুঁজে অনেকেই বের হচ্ছেন ঝলমলে রোদের আলোয় শরীরকে চাঙা করতে। শীতপ্রধান দেশে রোদের আলো বাংলাদেশের ন্যায় প্রাত্যহিক বিষয় নয়।

সমুদ্রবেষ্টিত যুক্তরাজ্যের সি বিচ কিংবা বিভিন্ন শহরের নান্দনিক পার্ক এখন জমজমাট। স্বল্পবসনা রমণী কিংবা পুরুষ উপুড় হয়ে শুয়ে রৌদ্রস্নানে মগ্ন এমন দৃশ্য গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ায় খুবই পরিচিত।

কিছুটা গরম পড়লেই এখানে শুরু হয় পিকনিক কিংবা ঘুরে বেড়ানোর মহা আয়োজন। বিলেতে বসবাসরত ভিন্ন সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য বহনকারী নানা কমিউনিটির মধ্যে বাঙালি সম্প্রদায়ও তেমন পিছিয়ে নেই। তাই এই সময়ে আবালবৃদ্ধবনিতাও বেড়িয়ে পড়ছেন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে।

স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরা শহরে বসবাসরত বাঙালি কমিউনিটির একাংশও গ্রীস্মের আগমনে ঘুরে এলেন ইংল্যান্ডের লেক ডিস্ট্রিক্ট থেকে। দিনব্যাপী নানা আয়োজনে ভ্রমণপিপাসু প্রায় শ খানেক ছেলে-বুড়োর আনন্দমুখর সময় পার হলো নিমেষেই!

যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা হচ্ছে লেক ডিস্ট্রিক্ট। গ্রীষ্মের অবকাশ উদ্‌যাপনে যুক্তরাজ্যের মধ্যবিত্ত শ্রেণির একাংশের সেরা পছন্দের জায়গা হল লেক ডিস্ট্রিক্ট আর ব্ল্যাকপোল। এ সময়ে এখানকার হোটেল-মোটেলে তিলধারণের জায়গা থাকে না। তদুপরি বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই আছে।

এডিনবরা শহর থেকে সকাল ১০টায় শুরু হয় দিনব্যাপী ভ্রমণের এই আয়োজন। দিনটি ছিল জুন মাসের শেষ সোমবারে। জমজমাট এই ভ্রমণযাত্রায় বাসায় তৈরি নাশতা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম পর্ব। বার্গার, স্যান্ডউইচ আর সিদ্ধ ডিমের সঙ্গে ছিল নারকেলের পানি।

মিউজিকের তালে তালে নাচ, গান আর হইহুল্লোড়ে এগিয়ে চলে ভ্রমণযাত্রা। অনেকে আগে থেকেই কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে আসেন এ আয়োজনে যোগ দিতে। তাই আনন্দ উদ্‌যাপনের মাত্রাও ছিল বেশি।

যাত্রীদের একাংশ
ছবি: লেখকের সৌজন্য

তিন ঘণ্টা ড্রাইভে লেক ডিস্ট্রিক্টে পৌঁছার পর শুরু হয় দিনের যাবতীয় আয়োজন। সুসজ্জিত পার্কের খোলা মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট আর কাবাডি খেলার মধ্য দিয়ে ভ্রমণযাত্রীরা ফিরে যান শৈশবে। এর মধ্যে কাবাডি খেলায় চার দল নিয়ে আয়োজন হয় দুই রাউন্ডের একটি প্রতিযোগিতা। যেখানে সেরা দুই দলের জন্য ছিল পুরস্কারের ব্যবস্থা।

স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁ আগেই বুকিং দেওয়া ছিল দুপুরের খাবারের। নির্দিষ্ট সময়েই এসে পৌঁছায় খাবার। মেনুতে ছিল ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি বিরিয়ানি, সালাদ আর বেভারেজ।

বিকেলে ছিল প্রমোদতরি ভ্রমণের আয়োজন। ৪৫ মিনিটের জন্য ঘুরে বেড়ানোর আয়োজন নিয়ে লেক ডিস্ট্রিক্টে আছে অনেকগুলো প্রমোদতরি। লেকের দুই তীরের নৈসর্গিক শোভা বিকেলের মিষ্টি রোদে এক আনন্দময় অনুভূতির সৃষ্টি করে। পর্যটকদের অনেকেই এখানকার স্বচ্ছ টলমলে জলে সাঁতার কেটে মজা পান।

ফেরার পথে ঘুরে দেখা হয় লেক ডিস্ট্রিক্টের মনোরম সৌন্দর্যবেষ্টিত স্থানগুলো। রাতের খাবারের ব্যবস্থা ছিল স্কটল্যান্ড সীমান্ত অবস্থিত ইংল্যান্ডের কাম্ব্রিয়া প্রদেশের পেনরিত নামক স্থানে। এখানে ইন্ডিয়ান প্লাজা রেস্তোরাঁর খাবারের মেনুতে ছিল সাদা ভাত, রুই মাছ এবং ভেড়ার ভুনা এবং ডাল। খাবার শেষে খুবই মজাদার ধূমায়িত এলাচি চা পরিবেশিত হয় আয়েশি ভঙ্গিমায়!

ক্রুজশিপে লেখক
ছবি: লেখকের সৌজন্য

প্রবাসের কর্মব্যস্ত জীবনে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠার সুযোগ কম। তাই বছরে একবার দুইবার এ রকম আয়োজনে দিন পার করে উৎফুল্লচিত্তে আবার কাজে ফেরার উদ্যম পাওয়া যায়। গ্রীষ্মের এই পিকনিক যাত্রার আয়োজনকারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান সমাগতরা। আয়োজনে ছিলেন এডিনবরায় বসবাসরত মিয়া মোস্তফা, জাহাঙ্গীর কবির, আতাউর রহমান, শামীম হোসেন প্রমুখ।

দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]