কথার কারিগরের ভবিষ্যদ্বাণী

হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর ১৯৪৮—১৯ জুলাই ২০১২)
ছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়াম

কথার কারিগর হুমায়ূন আহমেদের ছোট গল্প বাংলা সাহিত্যেই শুধু নয়, বিশ্বসাহিত্যেও অনন্য। সংখ্যার বিচারে খুব বেশি গল্প লিখেননি, অন্তত ওনার অন্য কর্মগুলোর তুলনায় তো বটেই। কিন্তু প্রতিটি ছোট গল্পই আসাধারণ, অনেক গল্পই শিল্পগুণে বিশ্ব মানের। গল্পগুলোর বিষয় ও প্রেক্ষাপটে আছে বৈচিত্র্য, আছে জীবনের আলো-অন্ধকার, ব্যথা-বেদনা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মমতা-ভালোবাসা, আছে রাজনীতি, আছে মানবিকতার প্রতিফলনও।

স্বাধীনতা–উত্তর সময়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি অনেকটা সময় আমাদের রাষ্ট্রে, সমাজে চেপে বসেছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল নির্বাসিত, মুক্তিযাদ্ধারা ছিলেন চরমভাবে কোণঠাসা। সাহিত্যের তথাকথিত গম্ভীর-গভীর বোদ্ধারা যখন মুখ ও কলম বন্ধ করে বসে ছিলেন, তখন কথার কারিগর হুমায়ূন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কয়েকটি হৃদয়স্পর্শী উপন্যাস ও অনিন্দ্য সুন্দর ছোট গল্প লিখেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা যেমন চিত্রিত হয়েছে গল্পগুলোতে, তেমনি মুক্তিযাদ্ধাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও জয়ের তৃপ্তির ছবিও এঁকেছেন, এঁকেছেন স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধাদের অসহায়ত্বের ছবিও। গভীর-গম্ভীর সাহিত্য–পূজারি এবং রাজনীতিকেরা যখন নিশ্চুপ, নীরব ছিলেন, তখন এই কথার কারিগর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটিও সর্বপ্রথম জোরালো ভাষায় উচ্চারণ করেন। ‘জলিল সাহেবের পিটিশন’ গল্পটির মাধ্যমে শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিই উত্থাপন করেননি, ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এই পশুদের বিচার একদিন হবেই।

আমাদের নিশ্চই মনে আছে, জলিল সাহেবের নাতনির সেই সংলাপটি, সে বলেছিল, ‘দাদু বলেছিলেন, একদিন কেউ না কেউ এই ফাইটটি নিতে আসবে।’ তার দাদার অসমাপ্ত কাজটি শেষ হয়েছিল ২০১২–১৩ সালে। কথার কারিগরের ভবিষ্যদ্বাণী শতভাগ মিলে যায়। যুদ্ধপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর হয় এই বাংলার মাটিতে।

কিংবদন্তি এ কথা সাহিত্যিক আজ শারীরিকভাবে আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু এমন অনেক কর্মে তিনি আছেন অজুত–নিজুত পাঠকের হৃদয়ে, থাকবেন যত দিন থাকবে অনন্ত নক্ষত্রবীথি।

*লেখক: চৌধুরী শামসুদদীন, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, হিথ্রো বিমানবন্দর, লন্ডন, ইংল্যান্ড