লন্ডনে নৌকাবাইচ, ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা
‘কোন মেস্তরি নাও বানাইলো কেমন দেখা যায়,
ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নাও’
গত রোববার লন্ডনের ফেয়ারলোপ ওয়াটার কান্ট্রি পার্ক মুখরিত হয়েছিল শাহ আবদুল করিমের সারি গানের মনমাতানো সুরে। চ্যারিটি সংগঠন ‘ফিফটি অ্যাকটিভ ক্লাব ইউকে’-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ। মূলত ব্রিটিশ বাংলাদেশি প্রজন্মকে তাদের শিকড়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সেতুবন্ধ গড়ে তুলতেই এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে ব্রিটেনবাসী যখন নাকাল, ফেয়ারলোপ ওয়াটারের নয়নাভিরাম প্রকৃতি তখন বুলিয়ে দিয়েছিল প্রশান্তির পরশ। ফেয়ারলোপ লেকের নীল জলে ড্রাগনের মাথা শোভিত লম্বা নৌকাগুলোকে দেখে মনে হয়েছে পানিতে ড্রাগন ছুটে চলেছে। প্রতিটি রেসে একসঙ্গে তিনটি করে নৌকা অংশ নেয়। প্রতিটি দল তিনবার করে সুযোগ পেয়েছে।
সবশেষে তিন রেসের টাইমিংয়ের ভিত্তিতে বিজয়ীদের স্থান নির্ধারণ করা হয়। বাইচের এবারের চ্যাম্পিয়ন দল দক্ষিণ সুরমা। আর ব্রিটিশ বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট দল ‘চ্যারিটি গ্রুপে’ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
বাইচে অংশ নেওয়া শৌখিন মাল্লাদের যেমন উৎসাহ–উদ্দীপনা ছিল, তেমনি পছন্দের দলকে সাপোর্ট করতে আসা উৎফুল্ল দর্শক ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে কিশোরীরা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে নিজ নিজ দলকে উৎসাহ দিয়েছে। আর খেলোয়াড়েরা রেসের ফাঁকে দল বেঁধে দরাজ গলায় গেয়ে উঠেছেন ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম।’
সিলেটবাসীর সবচেয়ে বড় এ মিলনমেলায় উপস্থিত হন হাজারো বাংলাদেশি। বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী খেলার মাধ্যমে শিকড়ের সঙ্গে বিলেতে বেড়ে ওঠা পরবর্তী প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতেই এ উৎসবের আয়োজন।
যুক্তরাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সামারের ছুটি থাকায় নারী ও শিশুকিশোর-কিশোরীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রকৃতির মাঝে দিনটি কাটিয়ে দেন হাসি ও আনন্দে।
ব্রিটিশ বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের আমন্ত্রণে সকাল সকাল আমরা চলে গিয়েছিলাম ফেয়ারলোপে। চ্যারিটি সংগঠনটি নৌকাবাইচে অংশ নেয়। মূলত তাদের সাপোর্ট এবং খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতেই আমরা গিয়েছিলাম। সবাই মিলে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। কাবাব আর সালাদ সহযোগে বিরিয়ানি ছিল অমৃত।
এরপর শুরু হলো বাংলাদেশের আরেক প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী খেলা রশি টানাটানি। ঝালমুড়ি, চানাচুর মাখা খেতে খেতে জীবনে প্রথমবারের মতো এ খেলা উপভোগ করলাম। এটা ছিল মূলত পেশিশক্তির লড়াই। তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ এ জমজমাট প্রতিযোগিতা ছিল দারুণ উপভোগ্য।
ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। শিশু থেকে প্রবীণ—সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই রশি টানাটানি। সবশেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে শেষ হয় বাংলাদেশিদের এই মিলনমেলা।