দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে, সেটা শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা না অভিভাবক, কে নির্ধারণ করবেন

ফাইল ছবি

যেকোনো বিষয়ে কোনটি হওয়া উচিত, করা উচিত আর উচিত নয়, কোনটি সঠিক আর কোনটি সঠিক নয়, জানতে হলে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো পরীক্ষা–নিরীক্ষা (Experiment) করে দেখা, আর সেটা তাঁরাই করতে পারেন, যাঁরা এই কাজে সারা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন।

সন্তান অসুস্থ হলে কী রোগ হয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত চিকিৎসক নেন, অভিভাবকেরা নেন না। অথচ বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ। কোনো বিষয়ে ভুল ধরতে হলে সেই বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি। অভিভাবকদের যদি সেই জ্ঞান থাকে, তাহলে বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন কি? অভিভাবকেরা নতুন পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করুক।

রোহিঙ্গা শিবিরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণিকক্ষের সংকট আছে। মিয়ানমারের কারিকুলাম অনুসরণে সেখানে পড়ানো হয়
ছবি: ইউএনএইচসিআরের সৌজন্যে

ইংল্যান্ডে আমার ছেলে–মেয়েরা পড়াশোনা করছে। এখানে জিসিএসই (GCSE) পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। এখানে ক্লাসে নির্দিষ্ট কোনো পাঠ্যবই নেই, অথচ বিশ্বের তাবৎ মেধাবী ছাত্ররা এই দেশে পড়তে আসেন।

আমাদের জন্মের পর প্রথম লক্ষ থাকে, যেকোনো মূল্যে বেঁচে থাকা। বেঁচে থাকতে হলে অগণিত সমস্যার সমাধান করতে হয়। যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ আরও কত–কী রয়েছে; যার অনেকগুলো আমাদের মা-বাবা আমাদের জন্মের আগে থেকে সমাধান করে রাখেন। সুতরাং দেখা গেল, আমাদের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে আমরা অগণিত সমস্যা সঙ্গে করে নিয়ে আসি।

সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রয়োজন জ্ঞান। জ্ঞান মানে শিক্ষা, শিখতে হলে পড়তে হয়। তাই পড়তে হবে যা পড়াশোনা করে সমস্যার সমাধান করতে পারি। কিন্তু যদি পড়াশোনা করে কোনো সমস্যা সমাধান করার জ্ঞানার্জন করতে না পারি অথবা কোনো কিছু না শিখে শুধু মুখস্থ করি, তাহলে সেই পড়াশোনা শুধু শুধু সময় অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

যখন বই সহজলভ্য ছিল না। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মুঠোফোন ও গুগল মামা ছিল না, এআই (AI ChatGPT) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছিল না। সলিমুল্লাহ খানদের মতো মানুষেরা Critically thinking, Rationally thinking করতে পারে না, শুধু তোতাপাখির মতো মুখস্থ করতে পারে। তারা নিজেরা কোনো জ্ঞান উদ্ভাবন করতে পারে না। দেশের বেশির ভাগ বুদ্ধিজীবী এ শ্রেণির মানুষ।

প্রতিনিয়ত, প্রতিক্ষণ ও প্রতি মুহূর্তে আলোর গতিতে এগিয়ে যাওয়া, বদলে যাওয়া, পাল্টে যাওয়া আমাদের এই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে, তেড়ে আসছে তার চেয়ে আরও বেশি গতিতে জলবায়ু সমস্যা। করোনার চেয়েও আরও ভয়ংকর অজানা কোনো মহামারির সমস্যা। অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন। নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমস্যা এবং পরমাণু বোমার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সমস্যাসহ অসংখ্য সমস্যা, যা সমাধান করতে প্রয়োজন নতুন জ্ঞান, সমাধান, আইডিয়া ও উদ্ভাবন। সুতরাং ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে তারাই কর্তৃত্ব করতে পারবে, যারা এসব সমস্যার সমাধানে অবদান রাখতে পারবে।

পাঠকেরা বুঝতেই পারছেন, বর্তমানে জ্ঞানচর্চা ও পড়াশোনার ধরন একেবারেই ভিন্ন। আগে মানুষ খবর শোনার জন্য অপেক্ষা করত, আর এখন খবর আপনার জন্য অপেক্ষা করে, কখন আপনি শুনবেন। আগে মানুষ বই পড়ত, আর এখন বই আপনাকে পড়ে। আগে মানুষ বই খুঁজত, আর এখন বই আপনাকে খোঁজে।

মুঠোফোনে নির্দিষ্ট অ্যাপে গিয়ে বিশ্বের যেকোনো ভাষার যেকোনো বই, যেকোনো খবর, খবরের কাগজ শুধু মুখে বললেই আপনাকে পড়ে শোনাবে। কোনো কিছু লিখতে চাইলে মুখে বললে লিখে দেবে এবং সঙ্গে শ্রবণযোগ্য বা অডিও বানিয়ে ভিডিও বানিয়ে দেবে এবং নিরাপদে সেভ করে রাখবে।

সুতরাং অভিভাবকেরা ভাবুন, শিক্ষা কারিকুলাম কি আপনাদের মতামত নিয়ে প্রণয়ন করা ভালো, নাকি যাঁরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জ্ঞানী, তাঁদের মতামতে প্রণয়ন করা ভালো?