মহিউদ্দিন আহমদের ‘প্রতিনায়ক’ যেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সুরতহাল রিপোর্ট

আমার কাছে ইতিহাস পাঠের সবচেয়ে বড় দায় হচ্ছে, আপনি বর্তমানে দাঁড়িয়ে কখনো বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। আর সময়ই সবচেয়ে বড় নিয়ামক। সময়ই কাউকে নায়ক বানায়, আবার পরবর্তী সময়ে সে–ই হয়ে যায় খলনায়ক। এমন খোলা মন নিয়েই পড়তে বসলাম মহিউদ্দিন আহমদের দুটো গবেষণাধর্মী বই— ‘প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান’এবং ‘লাল সন্ত্রাস’। বই দুটির নামের মধ্যেই বিষয়বস্তুর কিছুটা আভাস আছে। আজকে অবশ্য শুধু প্রথম বইটার মধ্যে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব।

‘ইতিহাসের সত্যি কথা’ শিরোনামে বইয়ের ভূমিকায় লেখক লিখেছেন, ‘আমাদের জীবনের দুটি দিক আছে। একটি আলোয় ভরা, অন্যটি অন্ধাকরে ঘেরা। আমরা যখন জীবনের গল্প বলি, অন্ধকার দিকটি এড়িয়ে যাই। আলোময় দিকটা নানান মসলা মেখে পরিবেশন করি। ফলে গল্প হয়ে যায় একপেশে। একপেশে গল্প শুনতে শুনতে একসময় এটি হয়ে যায় ইতিহাস, যদি না তার বিপরীতে অন্য কেউ অন্য গল্প দাঁড় করান।’

এ ছাড়া রাষ্ট্র বিষয়ে লেখক লিখেছেন, ‘আমরা পছন্দ করি বা না করি, আমরা একটা রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে বাস করি। রাষ্ট্রের নিজস্ব একটা ধর্ম আছে। এর চরিত্র আপাত-নৈর্ব্যক্তিক হলেও এটি যাঁরা চালান, তাঁদের ইচ্ছা ও দর্শন নৈর্ব্যক্তিক চরিত্র ঢেকে দেয়। ফলে রাষ্ট্র হয়ে ওঠে শ্রেণী, গোষ্ঠী বা পরিবারের সম্পত্তি। এ অতি পুরোনো কথা। এ অবস্থায় রাষ্ট্র তার মালিকানা হারায়। অথবা বলা যায়, রাষ্ট্রের সর্বজনীন মালিকানা কখনোই ছিল না। এটাকে সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলার চেষ্টা ছিল এবং আছে।’

ইতিহাস বিষয়ে আরও লিখেছেন, ‘আমরা যখন পুরাণের যুগ থেকে ইতিহাসের যুগে প্রবেশ করলাম, তখন থেকেই রাষ্ট্র আমাদের সামনে নানারূপে দেখা দিয়েছে। রূপান্তর ঘটেছে রাজনীতিশাস্ত্রে। রাষ্ট্রীয় দর্শন জটিলতর হচ্ছে, রাষ্ট্র হচ্ছে ক্রমাগত শক্তিশালী। রাষ্ট্র একপর্যায়ে ইতিহাসের ওপর দখলদারি চাপিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র ঠিক করে দিচ্ছে কোনটি ইতিহাস আর কোনটি কেচ্ছা। ফলে যখন রাষ্ট্রের দখল এক গোষ্ঠীর হাত থেকে অন্য গোষ্ঠীর হাতে চলে যায়, তখন ইতিহাসও যায় পাল্টে। এ এক মজার খেলা। কাল শুনেছি অমুক হলো নায়ক আর তমুক হলো খলনায়ক, আজ শুনছি খলনায়ক হয়ে গেছে নায়ক আর নায়ক হয়ে গেছে খলনায়ক। ইতিহাস এখানে হয়ে গেছে ইচ্ছাপূরণের গল্প।’

ইতিহাসের স্বরূপ সন্ধান করতে গিয়ে লেখক আরও লিখেছেন, ‘একটা কথা প্রায়ই শুনি—বিচারের ভার ইতিহাসের ওপর ছেড়ে দিলাম। মুশকিল হলো, ইতিহাস জিনিসটা কী? কে বা কারা কবে এটা লিখে গেছেন? ইতিহাস তো আসমানি কিতাব নয় যে এটা বদলানো যাবে না? যত দিন যাবে, আমরা ততই নতুন নতুন তথ্যের খোঁজ পাব, নানান মাত্রার বিশ্লেষণ চোখে পড়বে। ফলে আমাদের জানার পরিধি বাড়বে, জ্ঞানের আরও বিস্তৃত হবে।’

ইতিহাস পাঠের বিষয়ে পাঠকের দায় সম্বন্ধেও আলোকপাত করা হয়েছে। লেখকের ভাষায়, ‘পাঠককে নিয়েও সমস্যা আছে। অতীত নিয়ে অনেকের মধ্যে একটা ছবি তৈরি হয়ে আছে। তিনি হয়তো একধরনের তথ্য পেয়ে এবং জেনে অভ্যস্ত, যার ভিত্তিতে একধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি হয়। তিনি যদি নতুন কোনো তথ্য বা বিশ্লেষণ পান, যেটি তাঁর পূর্বধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তিনি সেটি সহজে গ্রহণ করতে চান না। অনেক পাঠক আবেগাশ্রয়ী এবং পূর্বধারণার ঘেরাটোপে বন্দি। ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’

এত বড় ভূমিকা লেখার কারণটা সহজেই বোধগম্য হবে, যখন আপনি বইটা পড়তে শুরু করবেন। কারণ, এই বইয়ে একই ঘটনার প্রায় সব কটি দিক উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন লেখক। একই তথ্য সেই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যাচাই করার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে দিয়ে আসল সত্যটা বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। সেটা যে সব ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লেখক সফল হয়েছেন। হয়তোবা ভবিষ্যতে এগুলোর আরও পরিমার্জন সম্ভব হবে।

মোট তিনটি পর্বে এই বইয়ের বিষয়বস্তু ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে লেখক ‘নিউক্লিয়াস’র উৎস এবং স্বরূপ সন্ধানের চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি সমসাময়িক সব কটি ঘটনা লিপিবদ্ধ করারও চেষ্টা করেছেন। আসলে স্বাধীন এবং সার্বভৌম একটা দেশ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ছিল দেশের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মনে। কিন্তু একটা দেশের জনগোষ্ঠীর অংশ হয়ে আরেকটা স্বাধীন দেশের কল্পনা যেহেতু রাষ্ট্রদ্রোহ, তাই চেষ্টাগুলো হয়েছে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই একটার সঙ্গে অন্যটার সংযোগ ঘটেনি।

সিরাজুল আলম খানের নিউক্লিয়াসের পাশাপাশি আবদুল আজিজ বাগমারের স্বাধীন বাংলাদেশের কথাও উঠে এসেছে এই বইয়ে। সত্যি কথা বলতে, আমি এই প্রথম আবদুল আজিজ বাগমারের নাম শুনলাম। যিনি ছিলেন ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের একসময়ের সভাপতি। তাঁরা জন্ম দিয়েছিলেন ‘অস্থায়ী পূর্ববঙ্গ সরকার’ সংক্ষেপে ‘অপূর্ব সংসদ’ আরও সংক্ষেপ করে লেখা হতো ‘অপু’। তাঁরা একটি সরকার কাঠামোও ঠিক করেছিলেন, যেমন

রাষ্ট্রপতি: বেগম সুফিয়া কামাল
প্রধানমন্ত্রী: আবদুল আজিজ বাগমার
উপদেষ্টা: অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই
অধ্যাপক শওকত ওসমান
অধ্যাপক আহমদ শরীফ
অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী

অপূর্ব সংসদ সম্পর্কে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার ব্যাপারে এটি ছিল একটি উদ্যোগ। প্রক্রিয়াটি গোপনে হলেও অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন এবং জানতেন। অপু-৩ ইশতেহারে নতুন দেশের নাম ‘বাংলাদেশ’ এবং জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি নির্বাচন করার বিষয়টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ছয় বছরের ব্যবধানে এটি বাস্তবে পরিণত হয়েছিল। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবির মাধ্যমে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের পথ ধরে স্বাধীনতার একটি আগাম পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। বাগমার এর সঙ্গে নিজেকে বিলীন করে দেন।

ষাটের দশকের শুরুতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার গোপন প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। তথ্যটাও প্রথম আমি এই বইতে পেয়েছি এবং বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে লেখক এটার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এই বই পড়লে আরও একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেটা হলো, দলমত–নির্বিশেষে তখনকার প্রায় সব সংগঠনই দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে এককাট্টা ছিলেন। যেমন ১৯৬১ সালের শেষের দিকে আওয়ামী লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টির কয়েক নেতার মধ্যে গোপন বৈঠক হয়েছিল। প্রথম বৈঠকে তাঁরা জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে একমত হন।

ছাত্ররা দেশের স্বাধিকারের প্রশ্নে সব প্রকার ত্যাগের জন্য তৈরি ছিলেন। এমনকি নিজেদের মতভেদ ভুলে সবাই স্বাধীনতার জন্য কাজ করতেন দৃঢ়ভাবে। তখনকার দিনে সংগঠন করা সহজ ছিল না। সংগঠকদের আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিল না। সিরাজুল আলম খানের কাছ থেকে লেখক এসব শুনেছেন। আবদুর রাজ্জাক স্কুলে ছাত্র পড়াতেন। কাজী আরেফ আহমদ পোগোজ স্কুলে বিজ্ঞান শিক্ষকের চাকরি নিয়েছিলেন। সিরাজুল আলম খান আঁটি স্কুলের একটা কামরা ব্যবহার করে ওখানে মেট্রিক পরীক্ষার্থীদের কোচিং করাতেন। এসব করে যা পেতেন, তা দিয়ে চলত খাওয়া, চলাফেরা ও সংগঠনের কাজ। শেখ ফজলুল হক মনি এবং সিরাজুল হকের মধ্যে মতের অনেক অমিল থাকলেও ডেস্টিনেশন যাওয়ার পথে তাঁরা একমত ছিলেন।

বইয়ের দ্বিতীয় পর্বের নাম ‘মুজিববাহিনী’। এই পর্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটা বিরাট অংশ উঠে এসেছে। কীভাবে তাঁরা কলকাতায় সংগঠিত হলেন। কারা তাঁদের ট্রেনিং দিল। কীভাবে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন, তার বিস্তারিত বিবরণ আছে এই পর্বে। কীভাবে বিএলএফ (বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট) গঠিত হলো। সেটা কীভাবে পরিবর্তিত হয়ে মুজিববাহিনী নাম নিল। বিভিন্ন জনের বর্ণনাতে উঠে এসেছে সেই তথ্য। প্রবাসী সরকারের সঙ্গে মুজিববাহিনীর সদস্যদের মতের অমিল—কোনোকিছুই বাদ যায়নি। একাত্তরের মার্চে যখন সারা দেশ জ্বলে উঠেছে, তখন বিএলএফের দুই শীর্ষ নেতা এক কাতারে। তাঁদের দ্বন্দ্ব-কোন্দল তখন উধাও হয়ে গিয়েছিল।

তৃতীয় পর্বের নাম জাসদ। এই পর্বে বিস্তারিতভাবে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ–পরবর্তী বাংলাদেশের ছবি। নতুন দেশের সমস্যা, তারুণ্যের ভাবনা, তাঁদের স্বপ্ন এবং স্বপ্নভঙ্গের বেদনা—সব বর্ণনা আছে এই বইতে। উপরন্তু স্বপ্নভঙ্গের পর তরুণদের পরিণতিও উঠে এসেছে এই পর্বের পাতায় পাতায়। উঠে এসেছে সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর বিবরণ। বিস্তারিত উঠে এসেছে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভাঙনের পেছনের কারণ এবং পরবর্তী পরিস্থিতি।

বইয়ের প্রায় অর্ধেক অংশজুড়ে রয়েছে এসবের বিবরণ। মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সিরাজুল আলম খান ছিলেন নায়কের ভূমিকায়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী তাঁর ভূমিকা যেন প্রতিনায়কের। হয়তোবা এ কারণেই লেখক বইটার এমন নামকরণ করেছেন। আমার কাছে প্রতিনায়ক মানে আসলে ভিলেন না আবার সাইড নায়কও না, কিন্তু এমন একজন নায়ক, যার সব উদ্দেশ্যই শেষ পর্যন্ত বিফল হয়। এমন না যে তিনি কোনো ব্যক্তি স্বার্থের আশায় এগুলো করেছেন। আসলে চরিত্রটা বোঝা খুবই দুষ্কর। বইয়ের ভাষায় রহস্যময়।

এই পর্বের ঘটনাগুলো যেকোনো চলচ্চিত্রের রহস্য রোমাঞ্চকেও হার মানায়। এখানে আছে বিচ্ছেদ, ট্রাজেডি আবার মিলন। আর ঘটনাগুলো এত দ্রুত ঘটে যাচ্ছে যে মনে হয় যেন চোখের সামনে কোনো একটা চলচ্চিত্র চলছে। একসময় সিরাজুল আলম খান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডান হাত। তাঁদের মধ্যকার সম্পর্কের রসায়ন তৃতীয় ব্যক্তির পক্ষে সবটা বোঝা কঠিন। এমনকি তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধু নিয়মিত তাঁর খবর রাখতেন। এ ছাড়া মতের অমিল থাকা সত্ত্বেও শেখ মনির সঙ্গে ছিল একটা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধু ও মনির সঙ্গে ভাঙন মিলিয়ে দেওয়ার বেশ কিছু উদ্যোগের কথা জানা যায়, যদিও শেষ পর্যন্ত সেগুলোর কোনোটাই চূড়ান্ত পরিণতি পায়নি।

বইয়ের উপসংহার ‘হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা’ অংশে লেখক লিখেছেন, ‘এই কাহিনির তিনটি পর্ব, যা আমাদের নিকট অতীতের বাঁকবদলের আখ্যান। ১৯৬০-এর দশক ছিল আমাদের উত্থান পর্ব, যখন বাঙালি একটি ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র তৈরির স্বপ্ন দেখেছে। এই দশকে এই দেশের মানুষের মনোজগতে ঘটেছে বড় রকমের পরিবর্তন। এর চূড়ান্ত ফয়সালা দেখা যায় উনসত্তরের গণ-আন্দোলন এবং সত্তরের নির্বাচনে। এরপর আর পেছনে ফিরে যাওয়ার উপায় ছিল না।...যুদ্ধ ছিল অনিবার্য।... যুদ্ধ শেষ হয়েও শেষ হলো না।...দেশ কীভাবে চলবে, তা নিয়ে মতভিন্নতা তৈরি হলো। এ নিয়ে বেধে গেল লড়াই।’

বাংলাদেশের উত্থান হলো একটি জনগোষ্ঠীর জেগে ওঠার মহাকাব্য। এর পরতে পরতে আছে যুগ যুগ ধরে মানুষের যুথবদ্ধ প্রয়াস। এখানে অনেক কারিগর, অনেক বীর। সিরাজুল আলম খান তেমনই একজন, একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, যিনি শ্রম-ঘাম-মেধা দিয়ে বাংলাদেশের উত্থান পর্বে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল গুরু আর শিষ্যের। তিনি নিজেই বলেছেন, শেখ মুজিবের ছয় দফা তাঁর বুকের মধ্যে আগুন জ্বেলে দিয়েছিল। উনসত্তরে মুজিব যখন জেল থেকে ছাড়া পান, দেখলেন তাঁর জন্য জমি তৈরি হয়ে আছে, যাঁর ওপর ভরসা করে বীজ বোনা যায়। জমি তৈরির কাজটি করেছেন সিরাজুল আলম খান। শেখ মুজিবকে নেতা মেনেই তিনি এটি করেছিলেন।

একজন ব্যক্তিরই চরিত্রে থাকে শুক্লপক্ষ-কৃষ্ণপক্ষ। অথচ আমরা কত অনায়াসে বলে দিই, তিনি দেবতা, নয়তো দানব। রামায়ণের উদাহরণ দিয়ে লেখক লিখেছেন—‘রাক্ষসরাজ রাবণ একজন খলনায়ক। অথচ কী অপরূপ ছন্দে পরম মমতায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত সৃষ্টি করলেন “মেঘনাদবধ” কাব্য, যেখানে রাবণ আর মেঘনাদ হলেন বীর, রাম-লক্ষ্মণ হলেন হানাদার তস্কর।’ বইয়ের শেষ কটা লাইন আপনাকে জীবন সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করবে, ‘মানুষ যেখান থেকে আসে, সেখানেই ফিরে যায়। কেউ কেউ জায়গা করে নেন ইতিহাসের পাতায়। কেউ নায়ক হন, কেউ হন প্রতিনায়ক। তাঁরা ইতিহাস তৈরি করেন।’