ট্যারিফ নিয়ে ট্যারা কথা
ট্যারিফের মূল কথাই হচ্ছে আমদানি করা পণ্যকে আরও বেশি ব্যয়বহুল করে দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করা। ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই কাজই করছেন তাঁর দেশের জনগণের জন্য। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি সর্বাধিক হওয়ায় তাতে সমতা আনায়নের জন্য তিনি ৬০ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম দফায় নাফটা এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্যারিফ ধার্য করা মার্কিন নির্মাতা ও ব্যবসায়ীদের জন্য একটি শক্তিশালী সুরক্ষা হয়েছে। ট্রাম্পের এই নীতির বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে ইতিমধ্যেই বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, যদিও আমেরিকায় এর ফলে যথেষ্ট পরিমাণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া শুরু হয়েছে এবং সরকার এর ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করছে। আবার এর একটি খারাপ দিক হচ্ছে গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হচ্ছে।
ট্রাম্পের এই নীতির ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য মোকাবিলায় অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক একটা ঝুঁকি তো রয়েছেই। এটি মাথায় রেখেই ট্রাম্প চীনকে বাদে অন্যান্য সব দেশের জন্য এই ট্যারিফ কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। তবে চীনের ওপর আরও বেশি অর্থাৎ ১২৫ শতাংশ হারে ট্যারিফ কর ধার্য করেছেন। কেননা, চীনের সঙ্গেই আমেরিকার বিশাল বাণিজ্য–ঘাটতি রয়েছে, তার সমতা আনার জন্যই এই পদক্ষেপ। আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ অবশ্য ট্রাম্পকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করে দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনুরোধে ট্রাম্প ট্রারিফ কার্যক্রমে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়ায় ওয়াল স্ট্রিটে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে তিন মাসের জন্য এ কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করেছেন ট্রাম্প।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
ফেডারেল ঘাটতি পূরণে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে সারা পৃথিবীর মানুষ সাফার করবে। বিশ্ববাণিজ্য তোলপাড় করা এই ট্যারিফ ভয়ংকর যুদ্ধের চাইতেও খারাপ। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে এখন সারা বিশ্ব। এই ট্যারিফ কর অবশ্য ট্রাম্পের নির্বাচনী একটি ওয়াদা ছিল। অর্থাৎ, নিজ দেশের নাগরিকদের সমৃদ্ধির জন্য তিনি বিদেশি রাষ্ট্রের ওপর শুল্ক কর আরোপ করবেন এবং তিনি তা–ই করে ছাড়লেন। ট্যারিফের ফলে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান আরও বেশি দুর্বল হয়ে যাবে। বাংলাদেশ এমনিতেই সর্বোচ্চ শুল্কের শিকার একটি দেশ। এর ফলে তার পণ্য সংগত কারণেই অন্যান্য দেশকে কম আকর্ষণ করবে।
পোশাক খাতে ভিয়েতনাম এবং শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এই সুবিধা নেবে। বাংলাদেশের উচিত, ট্যারিফ কমানোর জন্য জোর লবিং করা, আর তা না হলে বিনিযোগকারীরা বিকল্প দেশ খুঁজে নিতে বাধ্য হবে। বাণিজ্যযুদ্ধে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় উৎপাদনকারীরা। দাম বাড়লে ক্রেতা কমে। বাংলাদেশ চাইলে অর্থনীতির এই সূত্রও এই মুহূর্তে অ্যাপ্লাই করতে পারে।
শেষ কথাটি হচ্ছে বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায় ট্যারিফ ট্রাম্পের একটি স্পেসিফিক সতর্কবার্তা। তাই কেবল পোশাক খাতের ওপর নির্ভর না করে আমাদের মুক্তির জন্য আরও নতুন নতুন শক্তিশালী খাত তৈরি করতে হবে। ট্রাম্পের ট্যারিফের ফলে আমাদের পোশাকশিল্প ইতিমধ্যেই তার সক্ষমতা ঝুঁকির মধ্যে পরে গেছে, এদিকে ভারতও আমাদের ট্রান্সশিপমেন্ট ফ্যাসিলিটিও বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে নেপাল বা ভুটান থেকে গ্যাস, বিদ্যুৎ বা অন্য পণ্য আর ভারতের ওপর দিয়ে আমাদের দেশে আসতে পারবে না। সুতরাং ইনফরমেশন ও টেকনোলজিতে আমাদের আরও যুগোপযোগী হতে হবে।