ভূত নিবাস
অ্যাকাউন্টিং পেশার পাশাপাশি সাইড বিজনেস হিসেবে আমি রিয়েল এস্টেট এজেন্টের লাইসেন্স নিয়ে রেখেছি। লোকে বাড়িঘর বা জমি কিনতে বা বিক্রি করতে চাইলে আমি ওদের সাহায্য করি, এর মাধ্যমে কিছু টাকা আমার ব্যাংকেও আসে।
এখন যে গল্পটা বলব, তা আমার এক ক্লায়েন্টের ঘটনা। সত্য–মিথ্যার দায়ভার ওর, বিশ্বাস করা না–করার ব্যাপারটা আপনাদের। আমার দায়িত্ব কেবল গল্পটা ঠিকঠাকভাবে বলা।
আমার ক্লায়েন্ট স্বামী–স্ত্রী দুজনই দেখতে সুদর্শন। জাতে ব্রাজিলিয়ান, বয়সে দুজনই তরুণ–তরুণী। মাথায় সোনালি চুল, নীল চোখ, চামড়া যতটুকু ফরসা হলে ফ্যাকাশে দেখায় না, ততটুকুই ফরসা। ছেলেটার ব্যায়ামপুষ্ট বলিষ্ঠ শরীর আর মেয়েটা অসামান্য সুন্দরী। ব্রাজিলের নামে একটি কথার প্রচলন আছে, এটি হচ্ছে সেই দেশ, যার ছেলেরা ফুটবল নিয়ে খেলে তো মেয়েরা খেলে ফ্যাশন নিয়ে। আজ পর্যন্ত কোনো অসুন্দরী ব্রাজিলিয়ান তরুণী দেখার অভিজ্ঞতা আমার জীবনে ঘটেনি।
ওদের আসল নাম প্রকাশ করতে চাইছি না, পরে দেখা যাবে লোকজন ফেসবুকে ওদের নাম সার্চ করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিয়েছে। ইদানীং বাংলার তরুণদের মনে নতুন স্বপ্ন বসত গেড়েছে, ওরা ইন্টারনেটে প্রেম করে বিদেশি তরুণীর সঙ্গে বিয়ে করতে চায়। দুদিন পরপর পত্রিকায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর আসে যে প্রেমের টানে বিদেশের জীবন ছেড়ে কোনো শ্বেতাঙ্গিনী বাংলার কোনো পল্লিগ্রামে ছুটে গেছে। তারপরে স্বামী–স্ত্রী মিলে একটা ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল খুলে প্রতিদিনের জীবনের ঘটনা ভিডিও করে আপলোড করে এবং লক্ষ লক্ষ ভিউ পায়। এসব দেখেই হাজারো তরুণের ধারণা হয় বিদেশি সুন্দরীরা প্রকৃত প্রেমের জন্য হাহাকার করে মরে এবং শুধু বাঙালি তরুণেরাই ওদের সেই ভালোবাসা দিতে পারে। ওদের প্রোফাইল ভরে ওঠে হাজারো তরুণের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টে। সবার প্রেমই সত্য প্রেম, সবার ভালোবাসাই খাঁটি।
তাই ধরা যাক পুরুষটার নাম রোনালদো এবং ওর স্ত্রীর নাম সুজানা। আমাদের ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ফুটবলার রোনালদো এবং ওর সাবেক প্রেমিকা সুজানার নাম ব্যবহার করছি।
রোনালদো ও সুজানাকে নিয়ে একটি বাড়ি দেখতে এসেছি। ওরা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে টেক্সাসে এসেছে, আপাতত ভাড়া বাসায় থাকে এবং যত জলদি সম্ভব নিজের বাড়িতে উঠতে চায়। আমি ওদের পছন্দমতো বাড়ির তালিকা ই–মেইলে পাঠিয়ে দেই। ওরা ওদের সময়–সুযোগমতো ঘরে বসেই ইন্টারনেটে বাড়িগুলো দেখে, তারপরে যেগুলো পছন্দ হয়, সেগুলোর জন্য ট্যুর শিডিউল করে আমরা দেখতে আসি।
ই–মেইলে এই বাড়িটা ওদের দুজনেরই পছন্দ হয়েছে। তাই চাক্ষুষ দেখাও দেখতে চায়।
আমি সময়মতো চলে এসেছি, সুজানাও কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে যুক্ত হলো, রোনালদো ফোনে জানাল সে রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে আটকে গেছে। রাস্তায় অ্যাকসিডেন্ট হলে এ দেশেও ট্রাফিক গিট্টু লাগে, রোনালদো বোধ হয় তেমনই কোনো জ্যামে ফেঁসেছে।
বাড়ির বর্তমান বাসিন্দা আমাদের বাড়ি দেখার সুযোগ করে দিয়ে বেরিয়ে গেছেন। আমি সুজানাকে বাড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছি।
‘বাড়িটা তোমার কেমন লাগছে?’
সুজানা উত্তর দিল, ‘আমার তো টেক্সাসের সব বাড়িই ভালো লাগে। বড় বড়, খোলামেলা। তুমি বলো, আমাদের জন্য কি এই বাড়িটা কেনা ঠিক হবে?’
‘বাজারদর থেকে কমসে কম দশ-পনেরো হাজার ডলার কমে লিস্টেড করা হয়েছে। তেমন কোনো ড্যামেজও চোখে পড়ছে না। ইন্সপেকশন রিপোর্ট ভালো আসবে বলেই মনে হচ্ছে। এই দামে এ এলাকায় এমন বাড়ি পাওয়া রীতিমতো ভাগ্যের ব্যাপার। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, এখানে মাল্টিপল অফার আসবে, আমাদের একটু বাড়িয়ে অফার দিতে হতে পারে।’
সুজানা একটু কৌতূহলী স্বরে বলল, ‘এত কম দাম তোলার কারণ কী?’
আমি রিয়েলটরের ভাষায় ওকে বোঝালাম কেন মাঝে মাঝে বিক্রেতারা কম দামে বাজারে বাড়ি তোলে। সে শুনল তবে কতটুকু বুঝল কে জানে, সরল গলায় বলল, ‘এমন নয়তো যে এই বাড়িতে ভূতের উপদ্রব আছে?’
রসিকতা করেছে ভেবে আমি হেসে বললাম, ‘এই দামে এই বাড়ি পেলে আমি ভূতের সঙ্গেও থাকতে রাজি। হা হা হা!’
কিন্তু সুজানার চেহারা দেখে বুঝলাম সে রসিকতা করেনি। সঙ্গে সঙ্গে গলার স্বর পাল্টে বললাম, ‘তুমি কি ভূতে বিশ্বাস করো?’
সুজানা সরল গলায় উত্তর দিল ‘অবশ্যই করি। কেন, তুমি করো না?’
ক্লায়েন্টকে কী উত্তর দেব বুঝলাম না। অনেকেই ভূত বিশ্বাসকে ধর্মবিশ্বাসের মতো মনে করে। ওদের মুখের ওপর যদি বলে দিই ‘না, ভূতে বিশ্বাস নেই’ তখন আবার মন খারাপ করে ফেলে।
সুজানা বুদ্ধিমতী রমণী। সে আমার চেহারা দেখেই বুঝল, বলল, ‘আমিও তোমার মতোই ছিলাম, কিন্তু আমাদের একটা ভুতুড়ে বাড়ির অভিজ্ঞতা সব বিশ্বাস উল্টেপাল্টে দিয়েছে।’
আমি লেখক মানুষ। তার চেয়েও বেশি আমি একজন পাঠক ও শ্রোতা। মানুষের জীবনের গল্প শোনা আমার মস্তিষ্কে ড্রাগের মতো কাজ করে। একজন পাক্কা হেরোইনচির সামনে এক কেজি হেরোইন রেখে দিলে ওর দেহমনে যা ঘটে, একটা ভালো গল্পের খোঁজ পেলে আমার মাথায়ও একই রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। আমি অতি উৎসাহের সঙ্গে বললাম, ‘বলো কী! হন্টেড বাড়ির ঘটনা! তোমার নিজের অভিজ্ঞতা?’
সুজানা হ্যাঁ–সূচক মাথা নাড়ল। ওতে গর্বটর্ব কিছু নেই, কেমন একটা অস্বস্তি মিশে আছে। অপ্রিয় কোনো অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গেলে আমাদের যেমন চেহারা হয়, ওর চেহারাও এখন তেমনই দেখাচ্ছে।
কিন্তু আমার মাথায় গল্প শোনার নেশা চেপে গেছে, মস্তিষ্কের পোকা কুটকুট করছে, গল্প না শোনা পর্যন্ত সে বিরতি নেবে না। এত সহজে ছাড়ি কীভাবে?
‘তোমার কোনো আপত্তি না থাকলে তুমি গল্পটা শেয়ার করবে?’
সুজানা কিছুক্ষণ ভাবল, তারপরে বলল, ‘আমার গল্প শুনে কী করবে? বাদ দাও। ওটা আমরা ভুলে যেতে চাই।’
বাঙালি কোনো বন্ধু হলে চেপে ধরতাম। ‘না, তোকে শোনাতেই হবে!’
বিদেশিদের সঙ্গে এমনটা করা যায় না। ওদের ‘না’ মানে না। বেশি ঝোলাঝুলি করলে ‘এক্সকিউজ মি!’ বলে জীবন থেকেই ব্লক করে দিতে পারে।
আমি কথা বাড়ালাম না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রোনালদো চলে এল। বাড়িটা দুজনেরই খুব পছন্দ হলো। বললাম, দাম একটু বাড়িয়ে অফার করতে। আমার অভিজ্ঞতা এবং ক্যালকুলেশনের কারণে মনে হচ্ছিল বাড়িটা সাড়ে পাঁচ লাখ ডলারের অফার পাবে, আমরা যদি পাঁচ লাখ একান্ন হাজার অফার করি, তাহলে জিতে যেতে পারি।
রোনালদো দোনোমনা করল। ও কিছুতেই পাঁচ লাখ চল্লিশের ওপর যেতে আগ্রহী নয়।
পরে জেনেছি বাড়িটা সাড়ে পাঁচ লাখেই বিক্রি হয়েছে। রোনালদোকে সেই কথা জানাতে ভুললাম না।
যা–ই হোক, রোনালদো-সুজানা দম্পতি শেষ পর্যন্ত একটি বাড়ি কিনতে পেরেছিল। সেই শহরেই।
ক্লোজিং শেষে ওদের বাড়িতে যখন গেলাম, সুজানা তখন অফিসের কাজে বাইরে। আমি এবং রোনালদো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখছি, বুঝিয়ে দিচ্ছি কী কী করলে বাড়ির ঠিকঠাক যত্ন নেওয়া হবে।
আমার মাথায় গল্প শোনার নেশা তখনো কাটেনি। বাড়িতে সুজানাও নেই। সুযোগ বুঝে রোনালদোকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বন্ধু, সুজানা সেদিন বলছিল, তোমাদের নাকি ভৌতিক বাড়িতে থাকার অভিজ্ঞতা আছে?’
রোনালদো দৃষ্টি পাল্টে বলল, ‘আর বোলো না বন্ধু, সে এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা! জীবনেও এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে আগ্রহী নই!’
ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলাম, ‘কী ঘটেছিল?’
‘অনেক লম্বা কাহিনি!’
‘আমার কোনোই সমস্যা নেই। হাতে যথেষ্ট সময় আছে।’
কিছুক্ষণ ভেবে সে বলল, ‘চলো বিয়ার খেতে খেতে গল্প করা যাক।’
আমি জানালাম যে ধর্মীয় কারণে আমি মদ বিয়ার সিগারেট কিছুই খাই না। সে বলল, ‘সোডা চলবে?’
‘কী আছে?’
‘ডক্টর পেপার।’
আমেরিকার তুমুল জনপ্রিয় কোমল পানীয় ডক্টর পেপারের স্বাদ আমার কাছে ওষুধের সিরাপের মতো মনে হয়। ওই জিনিস আমার গলা দিয়ে নামে না। ভেবে পাই না এই স্বাদ নিয়েও কীভাবে এই ড্রিংক এতটা জনপ্রিয়তা পায়!
‘না থাক! আমি ঠিক আছি। এক বোতল পানি হলেই চলবে।’
আমরা দুজন রোনালদো-সুজানার সদ্য কেনা বাড়ির ফ্যামিলি রুমে (ড্রয়িংরুম) বসে গল্প করতে লাগলাম।
‘ঘটনা আমাদের বিয়ের পরপরই। বিয়ের ঝামেলা মিটিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে একটা শহরে (নাম বলেছিল, কিন্তু সংগত কারণেই বলব না) তখন আমরা মাত্র মুভ করেছি। ভাড়া বাড়ি। তেমন পুরানো না, এবং সুন্দর। বাড়ি থেকে বের হলেই দূরের পাহাড় দেখা যায়। পাহাড়ের চূড়ায় বছরের প্রতিটি দিনই বরফ জমে থাকে। এ ছাড়া রাস্তার দুধারে প্রচুর পাম ট্রি শহরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। এলএর (লস অ্যাঞ্জেলেস) মতো ঘিঞ্জি, নোংরা নয়, বেশ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন একটি শহর। কোনো হোমলেস নেই, শহরবাসী সবাই খেটে খাওয়া মধ্যবিত্ত। নতুন নতুন নেইবারহুড তৈরি হচ্ছে, নতুন মল, শপিং কমপ্লেক্সও আসছে। সংসারজীবন শুরুর জন্য এটি একদম আদর্শ শহর।
সুজানা এবং আমি অতি উৎসাহের সঙ্গে বাড়ি মুভিং করলাম। মুভাররা ভারী ভারী ফার্নিচার মুভিং ও সেটআপে সাহায্য করল। ঘটনার শুরু আসলে ঠিক তখন থেকেই।
মুভাররা তখনো ট্রাক থেকে ভারী ফার্নিচার নামিয়ে নামিয়ে বাড়ির ভেতরে সব ঠিকঠাকভাবে সেট করছে। আমি ওদের সাহায্য করছি। সুজানা ওদের দেখিয়ে দিচ্ছে কোথায় কী বসবে। এমন সময়ে আমি লক্ষ করলাম, রান্নাঘরে সিংকের পাশে একজন বৃদ্ধ কুঁজো হয়ে দাঁড়ানো। ব্যস্ত ছিলাম। প্রথমে ধরে নিলাম হয়তো মুভারদের কেউ একজন হবে। তারপরেই মাথায় এল, এত বয়স্ক লোক মুভারদের একজন কীভাবে হবে? এরা তো সবাই জোয়ান তাগড়া ম্যাক্সিকান! হোমলেস কেউ নয়তো?
সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলাম কিচেনে, কাউকে দেখতে পেলাম না। তারপরে লোকটার খোঁজে পুরো ঘর ঘাঁটাঘাঁটি করলাম, নেই। যেন মন্ত্রবলে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। মনের ভুল ভেবে পাত্তা দিলাম না। অনেক কাজ বাকি!
সারা দিন অনেক খাটুনি গেল। বড় বড় ফার্নিচারগুলো জায়গামতো বসানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বক্সের কোনো কিছুই বের করা হয়নি। এত ক্লান্ত লাগছিল যে কিছু বের করার চিন্তাও মাথায় আসছিল না। রাতে বাইরের ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট থেকে বার্গার ফ্রাইস খেয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়লাম। কখন ঘুমিয়ে গেছি, সেটাও টের পাইনি। রাতে ঘুম ভাঙল প্রচণ্ড দুর্গন্ধে।
গন্ধটা যে কতটা কটু, কত তীব্র, সেটা বোঝাতে পারব না। পৃথিবীর জঘন্যতম দুর্গন্ধও এর তুলনায় কিছুই না। রীতিমতো পেট উল্টে বমি চলে আসছে। সঙ্গে পুরো ঘরটাই গরম হয়ে আছে। দম বন্ধ হয়ে আসা গুমোট গরম। আমরা দুজনই দরদর করে ঘামছি।
এসি কাজ করছে না। বাতি জ্বালাতে সুইচ টিপে দেখি আসলে ইলেকট্রিসিটিই নেই। সুজানারও ঘুম ভেঙেছে। সে প্রায় বমি করতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে বলল, ‘গন্ধ কিসের?’
‘বুঝতে পারছি না। হয়তো বাথরুমের পাইপ ফেটে গেছে।’
‘বাতি জ্বালাও!’
‘পাওয়ার (ইলেকট্রিসিটি) নেই।’
‘বলো কী? বাইরের অন্যান্য বাড়িঘরে তো ঠিকই আছে।’
জানালা গলে আশপাশের বাড়িঘরের আলো দেখা যাচ্ছে। ওদের আলো আছে। হয়তো আমাদের সার্কিট ব্রেক করেছে।
সেল ফোনের ফ্ল্যাশলাইটের আলো জ্বালালাম। সুজানা বিছানার চাদরে নাক চাপা দিয়ে শুয়ে রইল। আমি অন্ধকারে ফ্ল্যাশলাইট হাতে সার্কিট ব্রেকারের খোঁজে গ্যারাজের দিকে এগোলাম।
মেইন সুইচ অফ করা। আমি সুইচ অন করতেই সুজানার তীক্ষ্ণ চিৎকার শুনতে পেলাম। দৌড়ে গেলাম ওর কাছে। সে বিছানার ওপরই আছে, তবে আতঙ্কে ওর মুখ মরা মানুষের মতো ছাইবর্ণ ধারণ করেছে। বিস্ফারিত চোখ দুটি স্থির হয়ে আছে হলওয়ের দিকে। যেন এখনই কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।
আমি বললাম, ‘কী হয়েছে?’
সে মহা আতঙ্কিত স্বরে বলল, ‘হলে কেউ আছে!’
ভয়ে ওর কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল।
আমিও প্রচণ্ড অবাক হলাম। হলে কেউ আছে মানে? কে?
ও বলল, ‘জানি না। অনেক লম্বা কেউ একজন। কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, তবুও ওর মাথা সিলিং স্পর্শ করছিল। আলো আসতেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি হেসে লিভিং রুমের দিকে হেঁটে গেল। ও মানুষ না! মানুষ এত লম্বা হয় না!’
আমাদের সিলিং মেঝে থেকে নয় ফিট উঁচু। যদি সুজানা সত্যি কথা বলে থাকে, তাহলে ওই লোকটা কমসে কম দশ ফিট উঁচু তো হবেই। মানুষ কখনোই এত লম্বা হয় না। চোখের ভুল নয়তো? আমি যেমন সকালে দেখেছি, ও তেমন এখন দেখেছে?
আমি নাইট স্ট্যান্ডের ড্রয়ার খুলে (বিছানার পিশাচের টেবিল) পিস্তলটা বের করলাম। যদি কেউ কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে আমাদের বাড়িতে ঢুকে থাকে, তবে আজকে ওকে ওর প্রাপ্য বুঝিয়ে দেব।
অতি সাবধানে হলঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। কেউ নেই। প্রতিটা রুম, টেবিলের নিচ, ক্লজেটের ভেতর ইত্যাদি সব খুঁটিয়ে দেখলাম। কোথাও কাউকে পেলাম না। সবই স্বাভাবিক। বেডরুমে ফিরে এলাম। যে তীব্র পচা গন্ধের কারণে ঘুম ভেঙেছিল, সেই গন্ধটাও এখন আর নেই। বাথরুম, টয়লেট ইত্যাদি সব পরীক্ষা করলাম। সব স্বাভাবিক। বুঝলাম না কী ঘটল।
তারপরের ঘটনা ঘটল এর দুই–চার দিন পরেই।
ছুটির দিন ছিল। আমি আমার ট্রাকের (বড় পিকআপ) অয়েল চেঞ্জ করছি। খেয়াল হলো যে ট্রেতে পচা ইঞ্জিন অয়েল (আমাদের দেশের ভাষায় মোবিল) জমা হবে, সেই ট্রেটাতে ফাটল আছে। এখানে তেল পড়লে লিক করবে। তাই তখনই নতুন ট্রে কিনতে গ্যাস স্টেশনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। এক ব্লক দূরেই রাস্তার ওধারে একটা গ্যাস স্টেশন আছে।
সেখানে থাকাবস্থাতেই সুজানার ফোন কল এল। সে অতি বিরক্ত স্বরে বলল, ‘তুমি কি দয়া করে একটু কম লাফঝাঁপ করবে? আমি মেডিটেশন করছি।’
আমি বুঝলাম না, ও কী বলতে চাইছে। আমি তো বাইরে, লাফঝাঁপ করলাম কখন? জবাবে সুজানা যা বলল তা শুনেই আমি বাড়ির দিকে দৌড় শুরু করলাম। সে জানাল উপরতলায় কেউ ধুপধাপ শব্দে পায়চারি করছে। মানুষ, নাকি অন্য প্রাণী সে জানে না, কিন্তু প্রচণ্ড ভারী তার পায়ের আওয়াজ।
এই ফাঁকে আমি আমার পাঠকদের জানিয়ে রাখি, আমেরিকায় মাঝে মাঝে ছাদের ওপর বা এটিকে পসাম, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি বা তেমন কিছু প্রাণী দৌড়ে বেড়ায়। এদের কারণে আওয়াজ হয়।
সে বলে চলল, আমি ওকে বললাম বেডরুমে গিয়ে পিস্তল হাতে রুমের দরজা লাগিয়ে বসে থাকতে। এবং ৯১১–এ কল করতে। আমি এক্ষুনি আসছি।
আমি ছুটলাম। নিয়মিত জগিং করি বলে এখনো ভালোই দৌড়াতে পারি। কিন্তু মাত্র এক ব্লক রাস্তা পেরোতেই যেন সেদিন অনন্তকাল লেগে গিয়েছিল। যতই জোরে দৌড়াই, মনে হচ্ছিল কিছু একটা আমাকে পেছন থেকে টেনে ধরছে। কিছুতেই দৌড়ের স্পিড বাড়ছিল না।
অবশেষে বাড়িতে পৌঁছাই এবং দেখি আমার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কয়েক গাড়ি পুলিশও চলে এসেছে। ওদের প্রত্যেকের হাতেই খোলা পিস্তল, সামনের দিকে তাক করা। গুলি করতে প্রস্তুত। পুলিশই দরজা খুলে বাড়িতে ঢুকল। একে একে প্রতিটি ঘর, এটিক ইত্যাদি চেক করে কাউকেই খুঁজে পেল না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিল। আমি দেখি সুজানা আতঙ্কে একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ও বলল ও স্পষ্ট শুনেছে, ভারী কেউ ধুপধাপ শব্দ তুলে উপরতলায় হাঁটাহাঁটি করছিল। সঙ্গে সেই বিদঘুটে গন্ধটাও সে পেয়েছে।
আমার মাথায় তখন অন্য চিন্তা এল। সুজানার কোনো মানসিক সমস্যা হচ্ছে না তো? সেই রাতে ওই লম্বা কাউকে দেখা, এরপরে এই পায়ের শব্দ—এগুলো তো ওর একার অভিজ্ঞতা। আমি বা পুলিশ কারোর উপস্থিতিতে এমনটা ঘটেনি। আমরা কিছুই পাইনি। তাহলে এগুলো ওর কল্পনা নয়তো? হয়তো নতুন বাড়ি, নতুন পরিবেশে আসার কারণে ওর মানসিক চাপ বেড়েছে।
কিন্তু এমনটা হলে, আমি নিজেও তো সেই রাতে গন্ধটা পেয়েছিলাম। আমিও তো রান্নাঘরে এক বৃদ্ধকে দেখেছিলাম। আমাদের গ্রুপ হ্যালুসিনেশন হচ্ছে না তো? হয়তো এই বাড়ির বাতাসে বা পানিতে কোনো কেমিক্যাল আছে, যার ফলে আমাদের এমনটা হচ্ছে। ডাক্তারি পরীক্ষা না করালে কিছু বোঝা মুশকিল।
আমি একজন মনোচিকিৎসকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফিক্স করলাম।
তত দিনে ওর একাকিত্ব দূর করতেই আমরা একটা অ্যানিমেল শেল্টার থেকে একটা বিশাল জার্মান শেফার্ড নিয়ে এলাম। বিশাল কুকুর। মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু হওয়ার পাশাপাশি যেকোনো বলশালী মানুষকে এ একাই চিবিয়ে ফেলতে পারে। এমন কুকুর বাড়িতে থাকলে কারোর এ বাড়ির সীমানা মাড়ানোর দুঃসাহস হবে না। এত বড় কুকুর আনার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ এটাও ছিল।
কিন্তু বিপত্তি ঘটল বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই। এ কুকুর কিছুতেই বাড়ির সীমানায় ঢুকবে না। ঘেউ ঘেউ করছে, আতঙ্কে শিকল ছিঁড়ে ছুটে পালিয়ে যেতে চাইছে। আমরা দুজনেই নিজেদের সর্বোচ্চ জোর দিয়ে একে সামলানোর চেষ্টা করতে লাগলাম, কিন্তু কোনোভাবেই এর শক্তির সঙ্গে পেরে উঠছিলাম না। হঠাৎ, আমাদের চোখের সামনেই দেখলাম কুকুরটা ঘাড় মটকে লুটিয়ে পড়ল। মানে আমরা দেখলাম কুকুরটার ঘাড় আপনাতেই মুচড়ে গেল, কট করে একটা শব্দ হলো এবং সে নিথর হয়ে আছড়ে পড়ল।
বিহ্বলতা কাটিয়ে ওর কাছে যেতেই দেখি ও মরে গেছে। আমরা একজন আরেকজনের দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছি। চোখের সামনে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটা সম্ভব? এবার সত্যিকার অর্থেই আমি ভয় পেলাম। অশরীরীর অস্তিত্বে বিশ্বাস ছিল না, কিন্তু অশরীরী কাণ্ডের মাত্রই সাক্ষী হলাম!
এরপরে শেষ ঘটনাও সেই রাতেই ঘটে।
কুকুরটির সৎকারের ব্যবস্থা করে বাড়ি ফিরে শুয়ে আছি। সুজানা একটা অদ্ভুত কথা বলল। সে নোটিশ করেছে বাড়ির উঠানে বা পেছনের ব্যাকইয়ার্ডের কোথাও একটা পাখিও আসে না। আশপাশের বাড়িঘরগুলোতে পাখির দেখা পাওয়া যায়, কিচিরমিচির শোনা যায়, কিন্তু আমাদের বাড়িতে কখনোই একটা পাখি, একটা প্রজাপতি, একটা টিকটিকিও নাকি সে দেখেনি।
একে কুকুরটার এই ভুতুড়ে ঘটনা, সেই সঙ্গে এই অদ্ভুত তথ্য, বুঝতে পারছিলাম না আমার কী করা উচিত। চার্চের পাদরির কাছে যাব? আমরা ধর্মচর্চায় উদাসীন। এখন চার্চে গিয়ে কি কোনো লাভ হবে? তার চেয়ে বড় কথা কোন চার্চের পাদরির কাছে যাব? ক্যাথলিক? প্রোটেস্ট্যান্ট? অর্থোডক্স? ওরিয়েন্টাল অর্থোডক্স? কে পারবে আমাকে সাহায্য করতে?
ঘুমিয়ে পড়লাম। মাঝরাতে আবারও সেই তীব্র কটু পচা গন্ধে ঘুম ভাঙল। প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। বমি আসে। মানুষের মৃতদেহ কয়েক দিন পচে গলে গেলে একটা ভীষণ দুর্গন্ধ ছড়ায় বলে শুনেছি, আমার কেন যেন মনে হলো এটাই সেই গন্ধ।
হঠাৎ আমার মাথায় এল, আমি যেন একটা কবরে শুয়ে আছি। জমাট অন্ধকার, প্রচণ্ড গরম, এবং আমার পাশেই কোনো পচা মৃতদেহ। দুর্গন্ধ যেন সেটা থেকেই আসছে!
আতঙ্কে চিৎকার দিতে যাব এমন সময়ে আমার পাশে তখন সুজানাও জেগে উঠল। কমফোর্টারে নাক চাপা দিয়ে বলল, ‘কিসের দুর্গন্ধ?’
‘বুঝতে পারছি না।’
‘বাতি জ্বালাও।’
আমি টেবিলল্যাম্পের আলো জ্বালাতেই বাতি জ্বলল এবং সঙ্গে সঙ্গে আমরা দুজনই তীব্র ধাক্কা খেলাম। আমাদের রুমের ভেতর, পায়ের দিকে, দেয়াল ঘেঁষে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। মানুষের আকৃতি, কিন্তু অবিশ্বাস্য লম্বা! শীর্ণ আর দীর্ঘ তার হাত–পা, লম্বা লম্বা আঙুল, লম্বা চুল। মেঝে থেকে শুরু করে আমাদের নয় ফিট উচ্চতার সিলিং স্পর্শ করেও কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়েছে। বয়স্ক এক পুরুষ। ক্রূর দৃষ্টি। তীব্র চোখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। যেন আমাদের ওপর প্রচণ্ড রেগে আছে। এই যে দেখো, এখনো সেই ঘটনার কথা মনে পড়ায় আমার গুজবাম্প হচ্ছে!
রোনালদো ওর হাত সামনে এগিয়ে এনে দেখাল। আমি দেখি আসলেই ওর শরীরের সব লোম দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘তারপর?’
‘আমরা দুজনই আতঙ্কে তীব্র চিৎকার দিলাম। আমাদের চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গেই লোকটা অদৃশ্য হয়ে গেল। ভোজবাজির মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া। কিন্তু একই সঙ্গে আমরাও একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার শুনতে পেলাম। ভুতুড়ে চিৎকার। যেন ভয়ংকর হিংস্র কোনো প্রাণী, বাঘ সিংহ বা এমনই কোনো পশু, তীব্র ক্ষোভে গর্জে উঠেছে। ওই গর্জনে কান পাতা দায়! আর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ঘরের প্রতিটি আসবাব, শোপিস, টেবিলল্যাম্প, জামাকাপড়, ড্রয়ার, প্লেট, থালাবাসন, গ্লাস, জানালার কাচ, ঘরের ভেতরের আয়না ইত্যাদি ভেঙে একসঙ্গে মেঝেতে আছড়ে পড়ল। পুরো ঘটনা ঘটতে এক সেকেন্ড সময়ও লাগল না। সেই ভীষণ গর্জন, মেটালের তীক্ষ্ণ ঝনঝন আর কাচ ভাঙার শব্দে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার অবস্থা! সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমাদের চিৎকার! বলতে মোটেই লজ্জা লাগছে না, আমি সেদিন ভয় পেয়েছিলাম। ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। এতটাই যে আমরা সঙ্গে সঙ্গে গ্যারেজে ছুটে গিয়ে গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। রাতের পোশাকেই, খালি পায়ে। ভাঙা কাচের ওপর দিয়ে দৌড়ে যাওয়ায় দুজনেরই পা কেটে গিয়েছিল।
সেই রাতে আর বাড়িতে ফিরিনি।
ওটাই আমাদের ওই বাড়িতে কাটানো শেষ রাত ছিল।
এরপরে পুলিশের সাহায্য নিয়ে সকালে এসে দেখি পুরো বাড়ি এলোমেলো। একটা কাচের প্লেট, গ্লাস, ক্রিস্টাল বা কাচের শোপিস কোনোটাই অক্ষত নেই। টর্নেডো যাওয়ার পরে বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপ যেমনটা হয়, আমাদের বাড়ির অবস্থা ঠিক তেমন। যেন কোনো ভীষণ ঝড়ের দাপটে সব এলোমেলো হয়ে গেছে।’
রোনালদো থামল।
আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম, ‘তারপর?’
রোনালদো একটু শ্বাস নিয়ে বলল, ‘লিজ ব্রেক করলাম। পেনাল্টি দিতে হলো, কিন্তু ও বাড়িতে থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।’
‘বাড়ির মালিককে বলেছিলে এই কথা?’
‘অবশ্যই।’
‘সে কী বলল?’
‘খুবই বিরক্ত হলো। ওর ধারণা আমরা হলিউডের অ্যাটেনশন পেতে কোনো স্টান্ট করছি। পুলিশেরও হয়তো তেমন ধারণা ছিল। ওরা যদিও মুখে কিছু বলেনি। জানোই তো, এমন স্ক্রিপ্ট হলিউডে বেশ মোটা টাকায় বিক্রি হয়? মালিক বলে দিল ওর বাড়ির নামে বদনাম রটানোর চেষ্টা করলে সে মামলা করবে। পুলিশি কোনো এভিডেন্সও ছিল না। আমাদের পক্ষে সাক্ষ্য–প্রমাণ সবই আমরা দুজন, স্বামী–স্ত্রী। তাই মামলা করলে আমাদের হার নিশ্চিত ছিল।’
‘বলো কী! কিন্তু আসলেই যদি বাড়িতে কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে তো এর সমাধান হওয়াটা জরুরি।’
‘অবশ্যই। আমি কিছুদিন ওই বাড়িটা অনলাইনে ফলোও করেছি। কয়েক দিন পরপর ভাড়াটে পরিবর্তন হয়। এতেই বুঝতে পারি যে সমস্যা আমাদের ছিল না, সমস্যাটা ছিল বাড়ির।’
‘তুমি জানার চেষ্টা করোনি, ঘটনার কারণ কী?’
‘কী লাভ জেনে? তা ছাড়া বাড়ির মালিকই তো চায় না। আর আমাকে এই ঘটনা জানতে কে–ই বা সাহায্য করবে? উল্টো মামলায়ও প্যাঁচাতে পারে।’
‘চেষ্টা নিলে অনলাইনেই তো তথ্য পাওয়া যায়।’
‘তা কিছু খোঁজখবর নিয়েছি। বাড়িটা মাত্র পাঁচ বছরের পুরোনো ছিল। আগের আরেকটা বাড়ি ভেঙে নতুন করে গড়া হয়েছে। কোনো খুনের রেকর্ড পাইনি, কোনো ঘটনা খুঁজে পাইনি যে কারণে বলতে পারি কোনো অতৃপ্ত আত্মার কাজ। সত্যিই জানি না এমন ঘটনার পেছনের কারণটা কী। হয়তো আরও ইনভেস্টিগেশন প্রয়োজন, হয়তো কিছু এক্সপার্ট দিয়ে তদন্ত করানো প্রয়োজন, কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, বাড়ির মালিক না চাইলে কিছুই করার নেই।’
রোনালদো গল্প শেষ করে গম্ভীরভাবে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিতে লাগল। আমি বললাম, ‘অ্যাড্রেসটা কী?’
সে বলল, ‘জেনে কী করবে? বাদ দাও।’
আমি আর কথা বাড়ালাম না। বুঝতেই পারলাম, ও জানাতে চাইছে না।
কিন্তু ঠিকানাটা আমি জানি। ওর গত সাত বছরের রেন্টাল হিস্ট্রি আমার কাছে আছে। কোন বাড়িটাতে সে অল্প কিছুদিন থেকেছে, সেটার ঠিকানা সেখানেই দেওয়া আছে। ভাবছি, কোনো একদিন ক্যালিফোর্নিয়া বেড়াতে গেলে একবার দূর থেকে বাড়িটা দেখে আসব। গুগল ম্যাপে দেখেছি, আমার চাচার বাসা থেকে খুব বেশি একটা দূর নয়।