সিডনিতে দেশের বাইরে সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলা
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশের বাইরে সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। গত রোববার (১২ মে) সিডনির ফেয়ারফিল্ড শোগ্রাউন্ডে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলে এই মেলা। সিডনির বৃষ্টি–শীতল আবহাওয়া উপেক্ষা করে শত শত প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত হন মেলা প্রাঙ্গণে। মেলা প্রাঙ্গণের বহু আগে থেকেই রাস্তায় ছিল উৎসবের জমকালো আলোকসজ্জা। মেলায় ছিল বহু খাবার ও পণ্যের স্টল। তবে মেলার মূল আকর্ষণ ছিল সাংস্কৃতিক মঞ্চ।
এর আগে দীর্ঘ ১৫ বছর এ মেলার আয়োজন হয়েছে দেশটির বিখ্যাত অলিম্পিক পার্কের এএনজেড স্টেডিয়ামে। প্রতিবছরই মেলায় মূলধারার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির আগমন ঘটে। মেলায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের মানুষের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। এ মেলায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্যের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যের নিয়মিত অংশগ্রহণ রয়েছে। এর ফলে এই বৈশাখী মেলা ও সিডনিতে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন শুধু কমিউনিটিভিত্তিক কোনো অনুষ্ঠান নেই এখন। এই বৈশাখী মেলা দেশটির বহুসাংস্কৃতিক অন্যতম উৎসবগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। বৈশাখী এই মেলা উপলক্ষে বাংলাদেশিদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজি ও রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ক্রিস মিনস, যা মেলায় পাঠ করে শোনানো হয়।
তবে আয়োজনে কমতি ছিল না ফেয়ারফিল্ডের বৈশাখী মেলায়ও। প্রবাসে ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে বাঙালিয়ানায় মেতে উঠতে ভিড় জমান সিডনিপ্রবাসী বাংলাদেশিরা। মেলায় আগত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই এসেছিলেন পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে। তাই মেলা উপভোগের একটা বড় সময়জুড়ে ছিল নিজেদের মধ্যে আড্ডা ও খোশগল্প। পাশাপাশি চটপটি-ফুচকা, ঝালমুড়ি ও অন্যান্য দেশি খাবারের সঙ্গে সবাই উপভোগ করেছেন দেশীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে বসা বৈশাখী মেলার বিভিন্ন স্টলেও ভিড় ছিল আগত দর্শকের। শিশুদের জন্য বিভিন্ন বিনোদনমূলক রাইডেরও ব্যবস্থা ছিল মেলায়। মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জমকালো ব্যতিক্রমী ফ্যাশন, ড্রাগন নৃত্য, ভারতীয় নৃত্যসহ নাচে-গানে হাজারো দর্শক সরব হয়ে ওঠেন।
তবে এবারও অন্যান্যবারের মতো বাড়তি আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ থেকে আসা গানের দল। এবার আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার ও ব্যান্ড দলছুট। তাঁর জনপ্রিয় গান উপভোগ করেন উপস্থিত দর্শকেরা। এর আগে প্রতিবারের মতো এবারেও চোখধাঁধানো আতশবাজির আয়োজন নজর কাড়ে সবার। প্রায় তিন দশক ধরে সুবিশাল এই মেলার আয়োজন করে আসছে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া।
মেলা উপভোগ করতে ফ্রান্স থেকে সিডনিতে এসেছেন প্রবাসী বাংলাদেশি ইমরানুল। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই শুনে আসছিলাম, বাংলাদেশের বাইরে সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলার আয়োজন হয় অস্ট্রেলিয়াতে। এবার একটা ছুটিতে এসে পেয়ে গেলাম। আসলেই বিশাল আয়োজন। আমার দেখা শুধু বৈশাখী মেলা নয়, যেকোনো বাংলাদেশি অনুষ্ঠানের মধ্যে দেশের বাইরে আয়োজিত এটিই সবচেয়ে বড় বাঙালি আয়োজন।’
প্রতিবছর মেলায় সপরিবার অংশগ্রহণ করলেও এবার বিশেষভাবে বাপ্পা মজুমদারের গান শুনতে এসেছেন বলে জানান প্রবাসী বাংলাদেশি ফেরদৌসী সুলতানা। তিনি বলেন, ‘গত বছর ব্যান্ড দল মাইলস এসেছিল, আমার স্বামী তাঁর ভক্ত। গতবার এসেছিলাম তাঁর জন্য। এবার আমার স্বামী এসেছে আমার জন্য, কারণ আমি বাপ্পা মজুমদারের খুব ভক্ত। আমি তাঁর গান শুনতে এসেছি। আর পাশাপাশি এই মেলা উপভোগ করছি। আয়োজকেরা প্রতিবছরই আমাদের সবার জন্য নতুন চমক নিয়ে সুন্দর আয়োজন করে আসছেন।’
তবে সিডনির বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও মেলায় অংশগ্রহণের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান মেলার আয়োজক সংগঠন বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি শেখ শামীমুল হক। তিনি বলেন, ‘এবার দর্শক কিছুটা কম হয়েছে, তবু মেলা প্রাঙ্গণ মানুষে ভরপুর ছিল। আগামী দিনে আরও বড় চমক থাকবে এবং সবার সহযোগিতায় আমাদের মেলা আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশা করছি।’