সিডনির সাহিত্য আড্ডায় আশীষ ভট্টাচার্যের ‘হ্যালো অস্ট্রেলিয়া’
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে বাংলা সাহিত্যের ধারা সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে সম্প্রতি আশীষ ভট্টাচার্যের গল্প সংকলন ‘হ্যালো অস্ট্রেলিয়া’ নিয়ে এক মনোজ্ঞ সাহিত্য আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ল্যাকেম্বা এলাকার স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় সাহিত্য সংগঠন ‘দ্য রিডার্স গ্রুপ’-এর ব্যবস্থাপনায় এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বইটির লেখক সিডনির প্রিয়ভাজন আশীষ ভট্টাচার্যকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান শ্যামলী লোধ। তারপর বইটির আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেন লেখক ও ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরুল আলম খান। তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘প্রবাসে বসবাসরত বাঙালি লেখকদের মধ্যে আশীষ ভট্টাচার্য একজন স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। তাঁর এই গ্রন্থে আমরা প্রবাসজীবনের বহুমাত্রিক দিকগুলো খুঁজে পাই।’ এ ছাড়া তিনি সাহিত্যিক মূল্য ও সামাজিক তাৎপর্য নিয়েও আলোকপাত করেন।
সাহিত্য সমালোচক ও অনুষ্ঠানের সভাপতি রিয়াজ হক বইটির গল্প প্রসঙ্গে বিভিন্ন অংশে বলেন, ‘ভট্টাচার্যের গল্পে প্রবাসী বাঙালির নিঃসঙ্গতা, সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব এবং আত্মপরিচয়ের সংকট অত্যন্ত নিপুণভাবে চিত্রিত হয়েছে। তাঁর ভাষাশৈলীর বিশেষত্ব হলো সহজবোধ্যতা ও হাস্যরসের মিশেলে গভীর জীবনবোধের প্রকাশ। এই গ্রন্থ কেবল গল্প সংকলন নয়, বরং প্রবাসজীবনের নৃতাত্ত্বিক দলিল।’ তবে তিনি বইটির প্রচ্ছদ, নাম এবং ছাপা নিয়ে কঠোর সমালোচনাও করেন।
সূর্য মজুমদার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বাঙালির আবেগ-অনুভূতিকে ধারণ করাই এ গ্রন্থ রচনার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। প্রতিটি গল্পে আমাদের সমাজের সুখ-দুঃখ, সংগ্রাম ও স্বপ্নকে শিল্পসম্মতভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক। বিশেষ করে “বালক ভুল করে নেমেছে ভুল জলে” গল্পটি প্রেম-অপ্রেমের এক জীবন–সম্পর্কের জটিলতাকে যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছে, তা পাঠককে গভীরভাবে নাড়া দেবে।’
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
সিডনির বেতার পরিচালক মৌলি আহমেদ তাঁর মূল্যায়নে বলেন, ‘এই গ্রন্থের প্রতিটি গল্পে লেখক তাঁর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণশক্তি দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ মুহূর্তগুলোকে অসাধারণ শিল্প–সুষমায় উপস্থাপন করেছেন।’
সিডনি বাংলা ডটকমের সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেন, ‘প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে এ ধরনের আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ আশীষ ভট্টাচার্যের এই গ্রন্থের বেশির ভাগ গল্পই তাঁর পোর্টালে প্রকাশিত। এ জন্য তিনি গর্বিত বলেও উল্লেখ করেন।
সাংস্কৃতিক কর্মী লাভলী মোস্তফা বলেন, ‘হ্যালো অস্ট্রেলিয়া’ গ্রন্থটি প্রবাসী বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি লেখকের কাছে আরও গল্প প্রত্যাশা করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নেহাল বারী, তাহমিনা রেজওয়ান, জিয়া আহমেদ, ইমদাদুল হক, গোলাম মোস্তফা, ইসমাত হক, খাইরুল আবেদিন, শ্রীমন্ত মুখার্জী, নিশাত আবেদিন, সুধীর লোধ, জিয়া হাসান, আনিসুর রহমান নান্টু, মমতাজ রহমান, লিজা মজুমদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে লেখক উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলা সাহিত্যের উন্নয়নে প্রবাসী বাঙালিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বইটিতে স্থান পেয়েছে মোট ৩২টি গল্প, যার প্রতিটি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাঙালিদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিককে স্পর্শ করেছে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা একমত প্রকাশ করেন, এ ধরনের সাহিত্যকর্ম প্রবাসে বাংলা ভাষার চর্চাকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং নতুন প্রজন্মকে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় সম্পর্কে সচেতন করবে।