দেশে ভালো থেকো বন্ধু
মানুষ পাখি। পাখির মতো ছুটে চলা একটি প্রাণ। আজ সে এখানে তো কাল সেখানে। জীবনকে টেনে নিয়ে মানুষ যে কত জায়গায় যায়, তার হিসাব মেলানো ভার। লেখাটা লিখতে বসে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। আবার এটাও ভাবছি, এই জগতে অতি আপনজনেরাও কখনো কখনো দূরে সরে যায়। আবার দূরের মানুষটা খুব আপন হয়ে যায়। এটা যেন প্রকৃতির নিয়ম হয়ে গেছে। প্রকৃতি তার নিজস্ব গুণে সবকিছু ব্যালান্স করে রাখে।
আবুবকর সিদ্দিক সুজন। একটা চমৎকার প্রাণ। প্রবাসজীবনে তার সঙ্গে থাকা অনেক স্মৃতি আছে। অফিসে, কাজের এরিয়ায়, কফি হাউসে, পার্কে, সিঙ্গাপুরের নানা প্রান্তে কত মজার স্মৃতি আছে তার সঙ্গে, তা লিখে কিংবা বলে শেষ করা যাবে না। পিঞ্জুরুর বাসার সামনে ব্যালকনিতে বসে আড্ডা দেওয়া, মাঝে মাঝে বেসুরো গলায় গান গাওয়া, কবিতা আবৃত্তি করা, আকাশের দিকে চেয়ে থেকে কবিতার কথা বলা—এই সবই এখন স্মৃতি হয়ে গেল। চলে গেল সুজন হাওয়ার জাহাজে উড়ে স্বদেশে। আমি পড়ে আছি সিঙ্গাপুরে।
সুজন ২৪ সেপ্টেম্বর (২০২২) বাংলাদেশে চলে গেল। ফিরে পেল আপনজনদের সঙ্গ। ভালোবাসার মানুষের হাসিমুখটা সরাসরি দেখে পৃথিবীর সেরা সুখের অনুভূতিটা তার মধ্যে জাগ্রত হলো। এত আনন্দ, এত ভালোবাসা, এত এত কিছু সুজনকে ঘিরে, ভাবনার চেয়ে বেশি কিছু। মুঠোফোনে এসব বার্তা শুনে কেবল মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেল। আমি বললাম, এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল। সুন্দর জীবন।
সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই। পিঞ্জুরুর বাসার সামনে ব্যালকনিতে বসে আছি। বাট আমার পাশে সুজন নেই। সুজন নামের অর্থ বন্ধু, স্বজন, আপনজন। আর এই আপনজনই হয়ে যায় পর। কেন এমন হয়? জানি বুঝি, সুজন ফিরে আসবে আবার সিঙ্গাপুর। দেখা হবে, কথাও হবে, তারপরও কেন জানি নিজের মধ্যে একটা শূন্যতা অনুভব করছি। ব্যালকনিতে আজ সুজন অনুপস্থিত। আড্ডার অন্য বন্ধু আলিম, ফয়সাল, ফারুক, মির্ধা সুজন, সোলেমান আছে। আমি আছি। কিন্তু সুজন পাশে নেই।
পৃথিবীটা বড্ড বেশি মায়া দিয়ে ঘেরা। কতজন আসে, কতজন যায়, এর মধ্যে এক–দুজন মনের মাঝে দাগ কেটে যায়। সুজন নামের মানুষটি আমার আমাদের মনে অনুরাগের দাগ কেটে চলে গেল বাংলাদেশে। সুজনের জন্য দোয়া ও ভালোবাসা নিরন্তর। ভালো থেকো বন্ধু। পরিবার–পরিজন, প্রিয়জনদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাও। পথ চেয়ে আছি। আবার হবে দেখা।
*লেখক: এম হৃদয়, পিঞ্জুরু, সিঙ্গাপুর