টোকিওতে দুর্গাপূজা উদ্যাপন
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জাপানের রাজধানী টোকিওতে উদ্যাপন করা হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গত রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) টোকিওর কিতা ওয়ার্ডের তাকিনোগাওয়া নিশি কুমিন সেন্টারের হলে স্থাপিত অস্থায়ী মণ্ডপে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসে ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি হিন্দুদের সংগঠন সার্বজনীন পূজা কমিটি, জাপান প্রতিবছর টোকিওতে এ পূজার আয়োজন করে থাকে।
দুর্গাপূজার দিন সকালে বৃহত্তর টোকিওর বিভিন্ন এলাকা থেকে পূজারিরা মণ্ডপে এসে সমবেত হন। সকালে স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রথমে অস্থায়ী মণ্ডপ স্থাপন করাসহ পূজার হল তৈরি, পূজার উপকরণ তৈরি ও পূজার প্রসাদ প্যাকেট করার কাজ করতে থাকেন। এরপর পূজারিরা হলে আসতে শুরু করেন।
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
এবার প্রায় সাড়ে তিন শ পূজারি দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গার চরণে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য ছুটে এসেছিলেন। সবার অঞ্জলি একবারে দেওয়া সম্ভব নয় বলে পাঁচবার মায়ের চরণে অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এবারের পূজায় পৌরোহিত্য করেন মানিক চক্রবর্তী। প্রতিবছরের মতো এবারও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি ও জাপানি উপস্থিত ছিলেন আবহমান বাংলা ও বাঙালি ঐতিহ্যের এই অনুষ্ঠানে।
মায়ের চরণে অঞ্জলি দেওয়ার পর উপস্থিত সবার মধ্যে বিতরণ করা হয় প্রসাদ। প্রতিবছর পূজা কমিটি পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রসাদ প্রস্তুত করে থাকে। হল ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা থাকায় পূজার দিন সম্ভব হয় না বলে আগের দিন সব প্রসাদ প্রস্তুত করে রাখা হয়। অঞ্জলি শেষে বিতরণ করা প্রসাদে সাধারণত থাকে পুষ্পান্ন, নিরামিষ, চাটনি, পনিরের তরকারি, ফল ও মিষ্টি। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে ছুটে আসেন পূজার প্রসাদের জন্য।
এরপর শুরু হয় আলোচনা পর্ব। শুরুতেই বক্তব্য দেন টোকিও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী। তিনি পূজার অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানান এবং প্রবাসে এ দুর্গাপূজা আয়োজন করার জন্য পূজা কমিটির কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। এরপর ধর্মীয় আলোচনা করেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর মোরারজী দেশাই বর্মন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পূজা কমিটির উপদেষ্টা বিপ্লব সাহা, সভাপতি কানু গোপাল কুন্ডু, সহসভাপতি তাপস সাহা ও সাধারণ সম্পাদক রতন বর্মণ। তারা উপস্থিত সবাইকে দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানান ও অনুষ্ঠানে আসার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। শেষে গত পূজার হিসাব-নিকাশ ও তহবিলের অবস্থা জানান পূজা কমিটির কোষাধ্যক্ষ অতনু সাহা।
এরপরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। শুরুতেই শিশুরা নাচ ও গান পরিবেশন করে দর্শক-শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেয়। জাপান প্রবাসে বেড়ে ওঠা খুদে নৃত্য ও সংগীতশিল্পী ভাগ্যশ্রী পাল, মৃন্ময়ী পাল, শেতাক্ষী সমাদ্দার, আরিষা সাহা, শ্রেয়সী বাড়ৈ, তিয়াশা বণিক, তানিশা বৈদ্য, আরিয়ানা সাহা, আংকা বণিক, রিংকা বণিক, তনুতা ঘোষসহ অন্যরা বাংলা নাচ ও গান পরিবেশন করে। বড়দের অনুষ্ঠানে নাচ পরিবেশন করেন শম্পা বৈদ্য ও গান পরিবেশন করেন অনামিকা দাশ ও পলি সরকার। এরপর জাপানের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শুভজিৎ রায় অভি ভক্তিমূলক গান ও কীর্তন দিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় সন্ধ্যা আরতি ও ঢাকের তালে ধুনুচি নৃত্য। এরপর মায়ের কপালে সিঁদুর দেওয়ার জন্য লাইন দেওয়া হয়। বিজয়া দশমীতে মিষ্টি দিয়ে উপস্থিত সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়। শেষে ভক্তরা ‘বলো, দুর্গা মা কী? জয়!’ ‘আসছে বছর? আবার হবে!’ ‘এবার মাগো বিদায় তবে, আসছে বছর আবার হবে!’ বলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান এবং একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। আর এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের পূজার সব আয়োজন।